ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বুটিক বাটিক ব্লক সুনিপুণ হাতের কাজ- সূচিশিল্প

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৬ জুলাই ২০১৫

বুটিক বাটিক ব্লক সুনিপুণ হাতের কাজ- সূচিশিল্প

মোরসালিন মিাজান মহা উৎসবের ঈদ। অত্যাসন্ন। এরই মাঝে ধুম লেগে গেছে কেনাকাটার। মার্কেট শপিংমল জমজমাট। তবে এসবের বাইরেও ঐতিহ্য মেনে কিছু মেলার আয়োজন করা হয়। এখন যেমনটি চলছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনÑ বিসিকে। মতিঝিলের নিজস্ব ভবনে আয়োজিত মেলায় অংশ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শতাধিক উদ্যোক্তা। রবিবার সকালে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বর্ষায় আয়োজন, তাই বর্ষা মেলা নাম। এখানে দেশীয় কাপড়। নিজেদের ডিজাইন। খুব যতেœ করা। দামের দিক থেকে বেশ সহনীয়। ভারত ও পাকিস্তানী পোশাকে সয়লাভ বাজার যাদের পীড়া দেয়, এখানে কেনাকাটা করে তাঁরা স্বস্তি পাবেন বৈকি। প্রথম দিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিসিক ভবনের এক ও দুই তলায় দেশীয় পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। ভবনের সামনের খালি জায়গাটুকুতেও পোশাকের প্রদর্শনী। বিভিন্ন স্টলে বুটিক বাটিক ব্লক প্রিন্ট ও হাতের কাজ। সূচিশিল্পের নিদর্শন। আছে আকর্ষণীয় কাট ওয়ার্ক। কাপড় কেটে জোড়া দিয়ে করা। প্রায় প্রতিটি স্টলেই মেয়েদের থ্রি পিস। ফতুয়া। শাড়ী। ছেলেদের জন্য আছে কটন সিল্কের পাঞ্জাবি। আদি কাপড়ের শার্ট। অধিকাংশ পোশাকে প্রচুর কাজ। রঙের দিক থেকেও গর্জিয়াস খুব। জামাল পুর থেকে মেলায় অংশ নিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা স্বপন। তাঁর স্টলে থ্রি পিস থেকে কুশন কাভার পর্যন্ত পাওয়া যায়। জানালেন, তাঁরা মূলত পাইকারি বিক্রি করেন। মেলায় এসেছেন প্রচারের আশায়। এই স্টলের থ্রি পিসগুলোতে সাধারণ সব কাজের পাশাপাশি আছে গুজরাটি ও লক্ষেèৗ স্টিচ। সুই সুতোয় করা চমৎকার নকশা আছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে আসা স্বপনের দাবি, এখন বুটিকে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। বিদেশী নিম্নমানের কাপড় বর্জন করে দেশীয় পোশাক কেনার আহ্বান জানান তিনি। অবশ্য মেলায় পুরুষ উদ্যোক্তা হাতেগোনা। অধিকাংশ উদ্যোক্তাই নারী। অনেকেই বিসিকের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। এখন বেশ দক্ষ। তাঁদের একজন সেলিনা আক্তার। তাঁর স্টলে দেশীয় ভাবনা থেকে করা থ্রি পিস। বেশি চোখে পড়ল ব্লকের কাজ। এ কাজ করতে গিয়ে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। আন স্টিচ থ্রি পিস শরীরের মাপ মতো সেলাই করে পরা যায়। এখানে আছে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িও। ছেলেদের জন্য মেলায় আছে বাহারি পাঞ্জাবি। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা। পাঞ্জাবির বেলায়ও দেখা গেল ভারি কাজ। বিশেষ করে বুকের জায়গাটি নিয়ে ব্যাপক নীরিক্ষা চালিয়েছেন উদ্যোক্তারা। পলি হ্যান্ডিক্রাফট নামের একটি স্টলে গিয়ে দেখা গেল পাঞ্জাবির ভাল সংগ্রহ। কোন কোন পাঞ্জাবিতে জামদানি ও এমব্রয়ডারির কাজ। নিখুঁত কাজ হওয়ায় প্রথম দেখায় পছন্দ হয়ে যায়। স্টল মালিক পলি জানান, ঈদ উপলক্ষে পাঞ্জাবিতে নতুন অনেক কাজ করা হয়েছে। এমন কাজ করা পাঞ্জাবি নামী-দামী শোরুমগুলোতে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। রাঙ্গামাটির একটি স্টলে পার্বত্য এলাকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক। পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে আছে গামছাটিও। স্টলের দায়িত্বে থাকা মোঃ হারুন জানালেন, তাদের পারিবারিক ব্যবসা। তবে কাজ করেন আদিবাসীরা। একটু ব্যতিক্রম খুঁজেন যারা তারা এখান থেকে পোশাক কিনছেন বলে জানান তিনি। অবশ্য শুধু পোশাক নয়, মেলায় আছে বেড কাভার, কুশন কাভারসহ গৃহস্থালী পণ্য। ফারাহ আদিবা নামের এক উদ্যোক্তা খুব যতœ করে দেখাচ্ছিলেন তাঁর নিজের তৈরি বেডকাভার। প্রথমে অতো কিছু বোঝা যায়নি। তবে মেলে ধরতেই মুগ্ধ হতে হলো। সুতি কাপড়ে দারুণ সব হাতের কাজ। একটি কাট ওয়ার্ক করা বেড কাভার বিক্রি হলো ১২০০ টাকায়। দিবা সেটির ভাল সব নিজে ব্যাখ্যা করে বললেন, এসব কাজ অনেক কঠিন। সময় দিতে হয়। কর্মীরা যারা কাজ করে তাদের কাজের মান ঠিক আছে কিনা খেয়াল রাখতে হয়। সব ঠিক রাখা গেলেই কেবল ভাল কিছু হয়। মেলায় আগত মানুষ উদ্যোক্তাদের এই আন্তরিক প্রচেষ্টা সম্পর্কে অল্প বিস্তর অবগত বলেই মনে হলো। শিরিন নামের এক ক্রেতা বললেন, বিসিকের মেলায় যারা অংশ নেয় তারা নিজের কাজ নিয়ে আসে। নিজেদের ডিজাইন। সময় নিয়ে দেখতে পারলে খুব এক্সক্লুসিভ পোশাক এখান থেকে সংগ্রহ করা যায় বলে জানান তিনি। আসমা আরা নামের আরেক ক্রেতা বললেন, ঢাকার মার্কেটে ভারত আর পাকিস্তানী পোশাক। অথচ আমাদের এত বড় উৎসবে নিজ দেশের পোশাক উপেক্ষিত। এ জন্য রুচির আকাল ও সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি। বিসিকের এই মেলা আরও বড় পরিসরে আয়োজনেরও দাবি জানান তিনি। দেশীয় পণ্যের এই মেলা আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে।
×