ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা-চট্টগ্রামে যৌথ অভিযানে ১২শ’ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার ॥ গোয়েন্দারাও হতবাক

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৭ জুলাই ২০১৫

ঢাকা-চট্টগ্রামে যৌথ অভিযানে ১২শ’ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার ॥ গোয়েন্দারাও হতবাক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরিচালিত বিশেষ যৌথ অভিযানে দু-এক শ’ কেজি নয়, রীতিমতো ১২শ’ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। এত পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় খোদ গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও বিস্মিত। এমন ঘটনায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। বিস্ফোরকের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার হয়েছে চার জন। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও গ্রেফতারকৃতদের সুনির্দিষ্ট কোন পরিচয় জানতে পারেননি গোয়েন্দারা। যদিও গোয়েন্দারা বলছেন, গ্রেফতারকৃতরা কোন উগ্র মৌলবাদী বা জঙ্গী সংগঠনের সদস্য হতে পারে। বড় ধরনের নাশকতা চালাতেই বিস্ফোরকগুলো যে মজুদ করা হয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে উদ্ধারকৃত সালফারগুলো বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চট্টগ্রামের জিয়া সার কারখানা থেকে ভুয়া ভাউচারে জেএমবি কর্তৃক সরিয়ে ফেলা ১১শ’ ৮২ টন সালফারের অংশ বিশেষ কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রসঙ্গত, ওই সময় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির দ-াদেশ পাওয়া কারাবন্দী মতিউর রহমান নিজামী। ঈদের পরে সরকারবিরোধী কড়া আন্দোলনের ডাক দেয়া রাজনৈতিক দল ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বা রায় কার্যকর ইস্যু উপলক্ষে বিস্ফোরকগুলো মজুদ করা হয়েছিল সে বিষয়ে গভীর তদন্ত চলছে। ডিবি পুলিশের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত তিন প্রকারের বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। এরসঙ্গে অন্যান্য বিস্ফোরকদ্রব্য মিশিয়ে মারাত্মক ও খুবই শক্তিশালী বোমা তৈরি সম্ভব ছিল। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের প্রতিকেজি দিয়েই শক্তিশালী এক হাজার বোমা তৈরি করা যেত। সে হিসেব অনুযায়ী উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দিয়ে ১২ লাখ শক্তিশালী বোমা তৈরি সম্ভব ছিল। পেশাদার বোমা তৈরিকারকদের কাছে বিস্ফোরকগুলো সরবরাহের কথা ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক কোথা থেকে কিভাবে এবং কি কারণে কাদের জন্য মজুদ করা হয়েছিল তা জানতে গভীর অনুসন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতারকৃতরা বিস্ফোরক সম্পর্কে ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছে। যদিও ইতোপূর্বে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পেতে রাখা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার ঘটনা ঘটেছে। সেটিই ছিল সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা। এরপর ২০১০ সালে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন একটি বাড়ি থেকে ৪০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। এরপর ২০১৪ সালে ৫ কেজি শক্তিশালী বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার হয় দুই শিবির নেতা। এছাড়া র‌্যাবের অভিযানে সিলেটের সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। যেগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছিল বলে র‌্যাবের গোয়েন্দাদের ধারণা। সেগুলো ছিল প্রস্তুতকৃত বিস্ফোরক। অপ্রস্তুতকৃত বা কাঁচামাল হিসেবে এত পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা বিরল। এমন ঘটনায় রীতিমতো হতভম্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ৫ জুলাই ভোর চারটার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদের নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদের তত্ত্বাবধানে ধানম-ি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোঃ নূর আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ডিবির একটি দল প্রথমে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় অভিযান চালায়। আউয়াল নামের এক ব্যক্তি বিস্ফোরক কিনছে এমন তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযানটি মূলত শুরু হয়। অভিযানে গ্রেফতার হয় মোহাম্মদ আউয়াল (৩৮)। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় দুই কেজি রাসায়নিক পদার্থ। পদার্থগুলোর প্যাকেট খুলতেই তীব্র ঝাঁজ বের হতে থাকে। গোয়েন্দা পুলিশ প্রাথমিকভাবে রাসায়নিক পদার্থগুলো সালফার বলে নিশ্চিত হয়। সালফার উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক তৈরির অন্যতম উপাদান। শুরু হয় আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ। একপর্যায়ে আউয়াল জানায়, বিস্ফোরকগুলো তার সহযোগী আলম ও শরিফের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন। এরপর ডিবির আরেকটি দল রাজধানীর চকবাজারে অভিযান চালিয়ে জাহাঙ্গীর আলম (৪২) ও শরীফ আলমকে (২৮) গ্রেফতার করে। তিনজনকে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইতোমধ্যেই উদ্ধারকৃত রাসায়নিক পদার্থগুলো বিস্ফোরক বলে নিশ্চিত করে ডিবির বিস্ফোরক দল। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা বিস্ফোরকগুলো সাইদুল নামের একজনের কাছ থেকে পেয়েছেন। সাইদুলের কাছে এ ধরনের প্রচুর বিস্ফোরক মজুদ আছে বলেও গ্রেফতারকৃতরা গোয়েন্দাদের জানায়। এরপর ডিবির আরেকটি দল সাইদুলের চট্টগ্রামের সদরঘাট থানা এলাকার নিজস্ব ছয়তলা বাড়িতে অভিযান চালায়। গ্রেফতার করা হয় সাইদুলকে। সাইদুলের তথ্যমতে, তার বাড়ির চতুর্থ তলার দুইটি বেডরুমের খাটের নিচ থেকে মজুদকৃত তিন প্রকারের বিভিন্ন আকারের প্যাকিং করা অবস্থায় বিশেষ কায়দায় সংরক্ষণ করা ১২শ’ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। এত বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় রীতিমতো অবাক হয়ে যায় খোদ গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও। ইতোপূর্বে একসঙ্গে এত বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেনি। সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, এত বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় তারা রীতিমতো বিস্মিত। কি কারণে এত বিস্ফোরক মজুদ করা হয়েছিল তা জানতে গভীর তদন্ত চলছে। বিস্ফোরকদ্রব্য অধিদফতর থেকে অনুমোদনসাপেক্ষে এসব উপাদান কেনাবেচা করার কথা থাকলেও গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে সে সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। সাইদুল ইসলাম মূলত ব্যবসায়ী। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে থাকেন। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের মধ্যে রয়েছে সালফার, লিথিয়াম ও হেক্সাক্লোরাইড নামের রাসায়নিক পদার্থ। এসব রাসায়নিক পদার্থ বোমা তৈরির অন্যতম উপাদান। মনিরুল ইসলাম বলেন, বড় ধরনের কোন নাশকতা চালাতেই এসব বিস্ফোরক মজুদ করা হয়ে থাকতে পারে। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালানোর সম্ভাবনা ছিল। গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে তেমন কোন কিছুই জানা যায়নি। তাদের ব্যক্তিগত পরিচয় ছাড়াও রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কোন পরিচয় আছে কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য মেলেনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে কোন জঙ্গী সংগঠনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঈদ পরবর্তী সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে কোন উগ্র মৌলবাদী বা জঙ্গী সংগঠন এসব বিস্ফোরক মজুদ করেছিল কিনা সে বিষয়ে বিস্তর তদন্ত অব্যাহত আছে। এরসঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামের ডাক দেয়া রাজনৈতিক দল বা দলটির কোন কোন নেতা বা কোন উগ্র মৌলবাদী বা জঙ্গী গোষ্ঠীর যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিকেজি বিস্ফোরক দিয়ে অন্তত এক হাজার শক্তিশালী বোমা তৈরি সম্ভব ছিল। সে হিসেবে অন্তত ১২ লাখ বোমা তৈরি সম্ভব ছিল উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দিয়ে। বিস্ফোরকগুলো পেশাদার বোমাবাজদের কাছে সরবরাহের কথা ছিল। ঢাকায় বেশ কিছু পেশাদার বোমা তৈরিকারক রয়েছে। তাদের প্রধান কাজ চাহিদা অনুযায়ী বোমা তৈরি, মজুদ ও সরবরাহ করা। এদের বিশেষ কোন পরিচয় নেই। এরা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বুঝে নিজেদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী পরিচয় দিয়ে থাকে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকের মধ্যে সালফারগুলো বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে জিয়া সার কারখানা থেকে ভুয়া ভাউচারে সরিয়ে ফেলা ১১শ’ ৮২ টন সালফারের অংশ কিনা সে বিষয়ে বিস্তর অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রসঙ্গত, বিগত বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের আমলে শিল্পমন্ত্রী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ও বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির দ-াদেশ পাওয়া মতিউর রহমান নিজামী। তার সময় মাঠ পর্যায়ে জেএমবি ও হুজিকে শক্তিশালী করতে জামায়াত নানাভাবে সহায়তা করে। তারই ধারাবাহিকতায় নিজামীর প্রত্যক্ষ মদদে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রামের জিয়া সারখানায় স্টোর কিপার হিসেবে চাকরি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও আহলে হাদিস আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা অধ্যাপক আসাদুল্লাহ আল গালিবের ভাগ্নে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সদস্য মোহাম্মদ সালাফিকে। সালাফী সুযোগ বুঝে সার কারখানা থেকে ১১শ’ ৮২ টন সালফার ভুয়া ভাউচারে সরিয়ে ফেলেন। সালফার বোমা তৈরির অন্যতম বিস্ফোরক। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে পুলিশ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের প্রধান আরাকানের নাগরিক মোহাম্মদ সেলিম ওরফে সেলিম উল্লাহকে বিপুল পরিমাণ ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম জানায়, সালাফীর সরিয়ে ফেলা সালফার চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর আহলে হাদিস মসজিদে জমা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেসব সালফার কাঠের বাক্সে ভরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জেএমবির সামরিক শাখা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের কাছে সেই পাঠায়। সেলিম উল্লাহ জোট সরকারের প্রভাবশালী দু’সহোদর সংসদ সদস্য (মোহাম্মদ শাহজালাল ও মোহাম্মদ শাহজাহান) বোন জামাই। দু’সহোদরের একজন জামায়াত থেকে অপরজন বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালের ২৫ মে রাজধানীর কদমতলীর একটি বাড়ি থেকে জেএমবির আমির ও জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর গ্রেফতার হওয়ার পর ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সরিয়ে ফেলা বোমা তৈরির অন্যতম উপাদান সালফারের পুরোটাই চলে যায় জেএমবির হাতে। এরমধ্যে কয়েক শ’ বস্তা সালফার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে পানিতে ফেলে নষ্ট করতে হয়েছে। বাকিগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা জেএমবির সামরিক সদস্যদের কাছে রয়েছে। ওই সালফারের তৈরি বোমা দিয়েই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলা বাদে দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল জেএমবি। ডিবি সূত্র বলছে , ইতোপূর্বে ২০০০ সালের ২০ ও ২৩ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর নির্বাচনী সমাবেশস্থলে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। কোটালীপাড়ার সমাবেশস্থল থেকে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হুজি প্রধান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হামলায় কারাবন্দী মুফতি হান্নানকে পরবর্তীতে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বোমাটি পুঁতে রাখার দায় স্বীকার করেন। এটিই ছিল সর্বোচ্চ ওজনের বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিস্ফোরক ও জঙ্গী তৎপরতার সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ৩০ জুলাই। রাজধানীর শাহআলী থানাধীন উত্তর বিশিলের ৭০/ক নম্বর বাড়ি থেকে ৪০ কেজি বিস্ফোরক, অত্যাধুনিক ম্যাগাজিনসহ ১টি এসএমজি (স্মল মেশিন গান), ১টি বিদেশী অটোমেটিক পিস্তল, ১টি তাজা গ্রেনেড, বোমায় ব্যবহৃত ২৫টি টাইমার, তিন ব্যাগ বোমার স্পিøন্টার ও নাইম এমএম পিস্তলের ১৮ রাউন্ড তাজা বুলেট, ৩৬টি গ্রেনেডের খোলস, টাইম বোমায় ব্যবহৃত শতাধিক ঘড়ি, বোমা তৈরির ফর্মুলা, গ্রেনেড তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ও প্রচুর জিহাদী বই। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দিয়ে আর্জেস গ্রেনেডের সমশক্তি সম্পন্ন একহাজার স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী টাইমার গ্রেনেড তৈরি সম্ভব ছিল। উদ্ধারকৃত তিন ধরনের বিস্ফোরকের তৈরি গ্রেনেড সাধারণত পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকায় ব্যবহৃত হয়। উদ্ধার হওয়া ৪০ কেজির মধ্যে ৩৭ কেজি বিস্ফোরকই ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। এমন শক্তিশালী বিস্ফোরক সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও আল কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন গুলো ব্যবহার করে থাকে। স্বল্প সময়ে একসঙ্গে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে, গাড়িসহ মানুষজন উড়িয়ে দিতে, বড় ধরনের ভবন গুঁড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলো হাতের পাঁচ হিসাবে এ ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করে। এছাড়া বিশেষ কাউকে নিশ্চিতভাবে হত্যা করতেও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা এ জাতীয় বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি বোমা ব্যবহার করে থাকে।
×