ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউইয়র্কে গাফ্ফার চৌধুরীর কর্মসূচীতে বাধা দিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৭ জুলাই ২০১৫

নিউইয়র্কে গাফ্ফার চৌধুরীর কর্মসূচীতে বাধা দিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘নাস্তিক’ ও ‘মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে নিউইয়র্কে তার কর্মসূচীতে বাধা দিয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা। জাতিসংঘ মিশনে তার সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর যুদ্ধাপরাধীর সমর্থকরা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে গাফ্ফার চৌধুরী স্থানীয় টাইম টেলিভিশনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বলছেন তার খ-িত বক্তব্য প্রচার করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ভাষার বিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন উল্লেখ করে বলেন, আমি গত ফেব্রুয়ারিতে ওমরাহ করেছি। আমি কেন আল্লাহ এবং ইসলামকে অবমাননা করব। তার বিরুদ্ধে উস্কানি দাতারা তাকে নয় ইসলামকেই অবমূল্যায়ন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, তার বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব প্রচারণা চালাচ্ছে। এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের চেয়ে তিনি অনেক বড় মুসলমান বলে উল্লেখ করেন। স্থানীয় সময় রবিবার বিকেলে জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি সেন্টারে ‘আওয়ামী পরিবার’ ব্যানারে গাফ্ফার চৌধুরীর ওই সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। আয়োজনের শেষ মুহূর্তে এসে পার্টি সেন্টার কর্তৃপক্ষ সমাবেশ আয়োজনে উদ্যোক্তাদের কাছে অপারগতা প্রকাশ করেন। সমাবেশের আয়োজকদের অন্যতম শরাফ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে ইতোপূর্বে যারা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে তাদের পক্ষ থেকে হুমকির কারণে তারা পার্টি হলে সমাবেশ করতে দিতে চাননি। এর পর তাৎক্ষণিকভাবে ব্রুকলিনে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের মিলনায়তনে সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হলে এর সামনে একদল লোক জড়ো হয়ে গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘মুরতাদ’, ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার মৃত্যুদ-ের দাবিতে বিক্ষোভ করে। স্থানীয়রা বলছেন, এখানে যারা বিক্ষোভ করছিল তাদের সকলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা হেলালউদ্দিন, স্থানীয় বায়তুল জান্নাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি মোঃ নূরুল ইসলাম, মোঃ শহীদুল্লাহ, মাওলানা সাফায়েত ও মাহবুবুর রহমান। সমাবেশের জন্য নির্ধারিত মিলনায়তনের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। তখন ভেতরে থাকা লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে খরব পেয়ে আয়োজকদের অন্যতম নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাকারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে তারা কাছের মসজিদে চলে যান। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের এই অনুষ্ঠানে দেয়া আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্যের সূত্র ধরেই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এদিকে গাফ্ফার চৌধুরী স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, আমি গত ৩ জুলাই নিউইয়র্কে যে বক্তব্য দিয়েছি তা ছিল একাডেমিক আলোচনা সভা। সেটাকে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক মৌলবাদী দল পুুঁজি করছে এবং মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, আমি ধর্ম বিরোধী, রাসুল বিরোধী এমনকি আল্লাহর অবমাননা করেছি। কোন সাধারণ মানুষের আল্লাহকে অবমাননা করার শক্তি আছে এটা প্রচার করাও ধর্মদ্রোহিতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই তথাকথিত ইসলাম পন্থীরা সেটাই প্রচার করছে। আমি নিজে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওমরাহ করেছি উল্লেখ করে বলেন, সেই ব্যক্তি নিউইয়ার্কে এসে ধর্মদ্রোহিতা করবে কি কারণে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার যারা নিন্দা করছেন তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ- আমার বক্তব্যটা সম্পূর্ণভাবে শুনেন তারপর যদি মনে করেন আমি আল্লাহ এবং রাসূলের বিরুদ্ধে কিছু বলেছি তখন শাস্তি বিধান করবেন। কিন্তু বিনা বিচারে এক শ্রেণীর মোল্লার উস্কানিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যা করছেন তার নিন্দার ভাষা আমার জানা নেই। তারা আমাকে ছোট করেননি তারা ধর্মকে, আল্লাহর রসুলকে ছোট করছেন। আমি আল্লাহর ৯৯ নাম সম্পর্কে দেবতাদের নাম ছিল তা বলিনি। আমি যেটা বলেছি কালচারাল এসিমিনেশন কিভাবে এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতায় উপক্রমণ গ্রহণ করে তাই বলেছি। বাংলাভাষাকে হিন্দু ভাষা বলা হয় এটা যে সত্য নয় তা প্রমাণ করার জন্য বলেছি, আরবী ভাষাও ছিল এককালে কাফেরদের ভাষা। এটা বলা কী আরবী ভাষাকে অবমাননা করা। তারপর বলেছি, আল্লার গুণবাচক নামগুলো এক সময় কাফেরদের ছিল। রাসূল্লাহর পিতার নাম আব্দুল্লাহ কি করে হয়। এরা তো আর মুসলমান নয়। সেখানে আল্লাহ আছে। এই আল্লাহ ছিল কাবা শরীফের প্রতিষ্ঠিত মূর্তিগুলোর মধ্যে প্রধান মূর্তির নাম। অবশ্য এটাকে ইলাহও বলে। ইলাহ শব্দ থেকে আল্লাহ শব্দের উৎপত্তি। এইভাবে আমাদের রাসূল আরবের সে সকল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধর্মবিরোধী নয় সেগুলোকে গ্রহণ করেছেন। এমনকি অনেক আগেই হজ হতো, সেখানে রাসূল এক ঈশ্বরবাদ যুক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা আরবী ভাষা না জেনে আরবীতে নাম রাখি। এতে অর্থ ঠিক থাকে না বলে উদাহরণ দেন তিনি ওই বক্তব্যে।
×