ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিপুল পরিমাণ লোকসান যাচ্ছে

অতি পুরনো ৫ বিদ্যুতকেন্দ্র প্রতিস্থাপনে পিডিবি সিদ্ধান্তহীনতায়

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৭ জুলাই ২০১৫

অতি পুরনো ৫ বিদ্যুতকেন্দ্র প্রতিস্থাপনে পিডিবি সিদ্ধান্তহীনতায়

রশিদ মামুন ॥ পাঁচ অতি পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিস্থাপনে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। লোকসানের বিপুল ধকল সামাল দিতে এ সব বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিস্থাপনের কোন পরিকল্পনাও নেই সংস্থার। শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর শ্রম অসন্তোষের চিন্তা করে পিডিবি বছরে বিপুল পরিমাণ লোকসান দিচ্ছে। দেখা গেছে উৎপাদনে সাধারণ ব্যয়ের তুলনায় এ সব কেন্দ্রে ইউনিট প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো আকারভেদে বছরে দুই কোটি থেকে ১০ কোটি ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করছে। ফলে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করতে বছরে ২০ কোটি থেকে ১০০ কোটি পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। যেখানে দেশে বিদ্যুত কেন্দ্রর স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে সেখানে ২১০ মেগাওয়াটের মেয়াদ উত্তীর্ণ বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিস্থাপনে কেন নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথবা আগে থেকে নেয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যমে কেন এই পাঁচটি বিদ্যুত কেন্দ্র চিরতরে বন্ধ করা সম্ভব হলো না তা নিয়ে পিডিবির মধ্যেই মতভেদ রয়েছে। পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। একপক্ষ মনে করছে এখনও আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত নিশ্চিত করতে পারিনি। লোকসান হলেও এখান থেকে যে বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে তাতে কিছুটা উপকার হচ্ছে। তারা এও বলছেন এখানে কিছু জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে এখন কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। অন্যপক্ষ মনে করছে সরকারের পরিকল্পনায় ভুল রয়েছে। দেশে অনেক নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র হয়েছে। এসব প্রকল্প করার সময় সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিলে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া কেন্দ্রের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হতো না। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বিভিন্ন সময়ে বলছেন এ ধরনের পুরাতন কেন্দ্র অবসরে দেয়া হবে। এজন্য সরকারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সরকারের এ ধরনের কোন নির্দেশনা নেই পিডিবির কাছে। তবে পর্যায়ক্রমে পিডিবি এসব কেন্দ্র সরিয়ে ফেলবে এমন পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু কবে তা বাস্তবায়ন হবে তা এখনও কেউ বলতে পারছে না। এছাড়া প্রত্যেক বছরই বাজেটের সঙ্গে পুরাতন প্রকল্প অবসরে দেয়ার একটা পরিকল্পনা দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা কোন দিন করা হয় না। পিডিবি সূত্র জানায় যে পাঁচটি অতি পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র সাধারণ উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুত উৎপাদন করছে সেগুলো হচ্ছে খুলনা পাওয়ার স্টেশন-১৭০ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা পাওয়ার স্টেশন-৬০ মেগাওয়াট, বরিশাল গ্যাস টারবাইন পাওয়ার স্টেশন-৪০ মেগাওয়াট, রংপুর এবং সৈয়দপুরে ২০ মেগাওয়াট করে দুটি গ্যাস টারবাইন পাওয়ার স্টেশন। এর মধ্যে খুলনা বিদ্যুত কেন্দ্রটি ফার্নেস অয়েলে এবং অন্যগুলো ডিজেল চালিত। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ভেড়ামারার ইউনিটগুলোর বয়স ৩৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, খুলনা কেন্দ্রটির বয়স ৩১ বছর, সৈয়দপুর এবং বরিশাল কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল ২৯ বছর আগে আর ২৮ বছর আগে রংপুরের কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। জানা গেছে পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্রে তেল সরবরাহ এবং সংস্কারের জন্য যন্ত্রাংশর একটি বড় ব্যবসা রয়েছে। বেশি পুরাতন হওয়ায় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ঘন ঘন সংস্কারের প্রয়োজন হয়। বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংস্কারের পিছনে ব্যয় করায় বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিচলন ব্যয়ও অন্য কেন্দ্রের চেয়ে বেশি বলে দেখা গেছে। পিডিবি সূত্র জানায়, ডিজেলে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য প্রতি ইউনিটে গড় জ্বালানি ব্যয় ১৯ টাকা আর আর অন্যান্য ব্যয় গড়ে দুই দশমিক ৫০ টাকা। যাতে প্রতি ইউনিটের মোট উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৫০ টাকা। সেখানে ভেড়ামারা কেন্দ্রে প্রতি ইউনিটের জন্য ৩১ দশমিক ৫০ টাকার জ্বালানি ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় তিন টাকা মিলিয়ে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩৪ দশমিক ৫০ টাকায়। সৈয়দপুরে জ্বালানি ব্যয় ৩০ টাকা আর অন্যান্য ব্যয় ৪ টাকা মিলিয়ে ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৩৪ টাকা। রংপুর কেন্দ্রেও জ্বালানি ব্যয় ৩১ টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ৪ টাকা মিলিয়ে ইউনিট প্রতি ৩৫ টাকা ব্যয় হচ্ছে। বরিশাল কেন্দ্রে জ্বালানি ব্যয় আরও বেশি এখানে ইউনিট প্রতি জ্বালানিতে ৩৩ দশমিক ৫০ টাকা প্রতি ইউনিটে ব্যয় হচ্ছে আর অন্যান্য ব্যয় দুই টাকা মিলিয়ে ৩৫ দশমিক ৫০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া ফার্নেস অয়েলে বিদ্যুত উৎপাদনে গত ব্যয় ১৮ দশমিক ৫০ টাকা সেখানে খুলনা কেন্দ্রটি ২৭ দশমিক ৬৮ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদন করছে।
×