ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের নিয়ে কটূক্তি

ডাঃ জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ফের আদালত অবমাননার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ৭ জুলাই ২০১৫

ডাঃ জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ফের আদালত অবমাননার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের নিয়ে ‘কটূক্তি’ করায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তৃতীয় বারের মতো আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিন জন মুক্তিযোদ্ধা এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের দুই জন সোমবার ট্রাইব্যুনালে এই আবেদন করেন। ৫ জনের পক্ষে আবেদনটি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দাখিল করেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। এদিকে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আবেদনে তাকে দ্বিতীয় দফায় আদালত অবমাননার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ ১৬ জুন স্থগিত রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত। একই সঙ্গে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন আবেদনটি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপীল বেঞ্চে এ আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। সোমবার আদালত অবমাননার এ আবেদন জানান স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আসগর, মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের আহ্বায়ক কামাল পাশা চৌধুরী ও কর্মী এফ এম শাহীন। আজ মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকায় আবেদনটি আসবে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আদালত অবমাননার অভিযোগ এলো ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে প্রথম আদালত অবমাননা দায়ের হয় ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করায় গণস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রধান ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ও চ্যানেল ২৪ -এর ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করে প্রসিকিউশন পক্ষ। পরে তাদের সতর্ক করে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। দ্বিতীয়বার ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের সাজার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয়ায় গত ১০ জুন আদালত অবমাননার দায়ে তাকে এজলাস কক্ষে দাঁড়িয়ে এক ঘণ্টার কারাদ- এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে একমাসের কারাদ- সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল-২। আর এবার ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করার কারণে তার বিরুদ্ধে তৃতীয় বারের মতো আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হলো। ডেভিড বার্গম্যানের দ- ও জরিমানার বিষয়ে ৫০ নাগরিক বিবৃতি প্রদান করেন। এর মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবির ওই বিবৃতি প্রকাশের পরপরই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১৪ জনের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত। ওইদিন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ও আমেনা মহসিন, বাংলাদেশ শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ডাঃ নায়লা জামান খান, ড. শাহনাজ হুদা, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, সঙ্গীত শিল্পী অরূপ রাহী, লেখক শাহীন আক্তার ও অধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান আদালতের ক্ষমা পান। এরপর ৩ মার্চ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে রেহাই পান বিবৃতিদাতা আরও ১০ জন। এরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেইট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক ড. আলী রিয়াজ, ড. পারভিন হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ফিরদৌস আজিম, প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকার আইনজীবী ড. ফস্টিনা পেরেইরা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান লিটন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামিয়া হক, ড. সেঁউতি সবুর, তাসমিন সারা সাহাবুদ্দীন ও লেখক তাহমিমা আনাম। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দিনা এম সিদ্দিকী ও অধিকার কর্মী রেজাউর রহমানও পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রেহাই পান। শুধুমাত্র বৃটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেয়ায় গত ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাজা দেয় আদালত। শাস্তি হিসেবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদ- প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আবেদনে সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার আদালত পরে ওই জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন আদালত সাজা ঘোষণার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে দীর্ঘসময় অনড় থাকেন। পরে রায়ের কপি হাতে দেয়া হলে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে সাজাভোগ করেন এবং পরে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সে সময় তিনি বলেন, “আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না। “যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট, কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অবস্ট্রাকশন অব দ্য এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুণœ করা। আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা ‘অভদ্রতা’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।
×