ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার

জামায়াতের কবল থেকে বিএনপি মুক্ত হতে পারবে কি?

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৮ জুলাই ২০১৫

জামায়াতের কবল থেকে বিএনপি মুক্ত হতে পারবে কি?

গত ২১ জুন ঢাকার একটি সাপ্তাহিকের প্রচ্ছদ কাহিনী ছিল জামায়াতের থাবায় বিএনপি। ওই প্রচ্ছদ কাহিনীর এক জায়গায় প্রতিবেদক লিখেছেন- বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াত ছাড়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্য গোপন স্থান থেকে বলেছেন, আগে ছাড়ুক তো তারপর বলবেন। বিয়ে করা যত সহজ, তালাক দেয়া তত সহজ নয়। ৩৮ বছর এক সঙ্গে একই ছাদের নিচে বসবাস। এদেশের রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপির যে সখ্য ও বন্ধন তার গূঢ় রহস্যের অনেক কিছুই বাইরের মানুষের চৌদ্দ ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্যেরও উর্ধে। বাংলাদেশের রাজনীতির বহু ঘটনাপ্রবাহের রহস্য বা কারণ এখনও মানুষের অজানা। জামায়াতের রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো মুক্তিযুদ্ধের সব কিছুকে বিনাশ করে দেয়া। দুই মেয়াদে ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকা-ের বিচার বিএনপি একটি বারের জন্যেও চাইল না। অথচ জিয়ার নামে চলে বিএনপির রাজনীতি। ১৯৫৭ সালের পর এদেশের রাজনীতিতে যা ঘটেছে তাতে কোন্ গর্তে যে কি লুকিয়ে আছে তা শুধু ভবিতব্যই জানেন। সুতরাং কোন্ শক্তি বা রহস্যের বলে জামায়াত নেতা এত বড় কথা বলতে পারেন তা কারও জানার কথা নয়। তবে দেশ-বিদেশ সকল তরফ থেকে জামায়াত ছাড়ার জন্য প্রচ- চাপ থাকা সত্ত্বেও বিএনপির সুপ্রীম কমান্ড যেভাবে আরও জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে তাতে জামায়াত নেতার কথার যথার্থতা অবশ্যই আছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। জামায়াত নেতাদের মতে তাদের ছাড়া বিএনপি অচল। ১৯৭৫ সালের পর মৃত জামায়াতের বাংলাদেশে পুনর্জন্ম হয় জিয়াউর রহমানের ইচ্ছায়। সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের ৩৮ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জিয়াউর রহমান জামায়াতের পূর্ণ-উত্থানের সুযোগ করে দেন। সেই থেকে জামায়াত-বিএনপি একই জাহাজের যাত্রী। ৩৮ বছর পরে এসে সেই জাহাজ এখন নদীর মাঝস্রোতে বৈশাখী ঝড়ে কবলিত। নদীর মাঝখানে অন্ধকার রাতে জাহাজ ডুবলে কে মরবে আর কে বাঁচবে তা বলা কঠিন। ডুবন্ত জাহাজের দৃশ্য যারা দেখেছেন, তারা জানেন সেখানে ‘চাচা আপন পরান বাঁচা’ কথাটাই সব কিছুর আগে সবারই মনে পড়ে। জামায়াতের এই শোচনীয় পরিস্থিতি, সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনাবলী এবং বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতার বক্তব্য শুনে অনেকেই মনে করেছেন, এবার হয়ত বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে নিজের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুনভাবে উদ্ভাসিত হবে। আর সেটি হবে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য নতুন টার্নিং পয়েন্ট। এ বছরের শুরুতে এক নাগাড়ে প্রায় মাস চারেক জামায়াতের প্রেসক্রিপশন ও জেএমবির প্রযুক্তিতে তৈরি পেট্রোলবোমার চোরাগোপ্তা হামলায় প্রায় দুই শ’ সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও করেও বিএনপি কূলের সন্ধান পেল না। নিরীহ মানুষের জীবনের বিনিময়ে বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক ঘোষিত লাগাতার অবরোধ কর্মসূচীর আত্মঘাতী মৃত্যু ঘটেছে। ঘোষিত কর্মসূচী প্রত্যাহার করার আর সুযোগ পাননি। বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও কর্মীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফোনালাপ প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চরম হতাশার কথা সম্প্রতি মানুষ জানতে পেরেছে। দেশের মিডিয়াসহ বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের মূল্যায়নে বোঝা যায়, জামায়াতের খপ্পরে পড়ে দূরবর্তী কোন সুতার টানে বিএনপির সুপ্রীম কমান্ড কর্তৃক একের পর এক ভুল ও হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণেই বিএনপি আজ এমন দুর্দশায় পতিত হয়েছে। অতএব, বিএনপি এবার জামায়াত ছাড়বেÑ এমন কথার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের প্রাক্কালে। জামায়াত পাকিস্তানের সুরে সব সময় বলে আসছে হিন্দু ভারত হলো মুসলমানদের জাতি শত্রু। এতদিন বিএনপি যাই বলে থাকুক না কেন, মোদির সফরের প্রাক্কালে বললেন, বিএনপি আর কোন দিন ভারতবিরোধী রাজনীতি করবে না। তাতে মনে হলো জামায়াতের একটা গিট্টা বোধ হয় খুলে গেল। একটি স্বাধীন দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলকে এমন বক্তব্য কেন আগ বাড়িয়ে দিতে হয় তার কারণ বিএনপির বুদ্ধিজীবীরা অনুসন্ধান করলে জামায়াত ছাড়ার অনেক উপাদান পাবেন। এর পূর্বে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করার জন্য যেভাবে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ছুটে গেলেন তাতে মনে হয়েছিল, এবার তাহলে সত্যি সত্যিই বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করছে। কারণ ২০১৩ সালে জামায়াতের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া সময় নির্ধারণ করেও ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেননি। এক সময়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রকাশ্যে বলা হতো, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র বিদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদীগণ হলো স্বাধীনতা সংগ্রামী, তাদের সহায়তা দেয়া উচিত। ভারতও সংযুক্ত থাকবে বিধায় ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি এশিয়ান হাইওয়ের কানেকটিভিটি থেকে বাংলাদেশকে প্রত্যাহার করে নেয়। নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার অজুহাত দেখানো হয়। বিশ্বের তাবত মানুষ জানে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের গডফাদার হলো পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানের বিরোধিতার জন্যেই সার্ক আন্তঃদেশীয় কানেকটিভিটি গত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত হয় না। এসব কারণেই বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ৪ জুন ইত্তেফাকে একটি লেখায় বলেছেন, বিএনপির নেত্রীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগ সর্বজনবিদিত। এহেন ভারত বিরোধিতার পর দলের মুখপাত্র যখন বলেন বিএনপি আর কোন দিন ভারত বিরোধিতা করবে না, তখন মনে হয় এবার অবশ্যই তাহলে জামায়াতকে তারা তালাক দেবে। এই মুখপাত্রের কথার বাইরেও জামায়াত ছাড়ার আরও কিছু ইঙ্গিতবাহী বক্তব্য পাওয়া যায়। বিএনপি চেয়ারপার্সনের একজন মশহুর পরামর্শক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিএনপি জামায়াত ছাড়লে ভাল হবে, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির অনেক মাশুল দিতে হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী সব লাজ-লজ্জা, অপমান ঝেড়ে ফেলে আবার বিএনপির পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, বিএনপিকে বাঁচতে হলে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে। জনাব চৌধুরী এতদিনে হয়ত বুঝতে পেরেছেন ২০০২ সালে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অসম্মানজনক অপসারণ এবং রেল লাইনের ওপর দিয়ে প্রাণ ভয়ে যেভাবে দৌড়াতে হয়েছিল, তার পেছনেও নিশ্চয়ই তখনকার বিএনপির ক্ষমতার সঙ্গী জামায়াতের হাত ছিল। এই উপলব্ধিটা আরও বিশ বছর আগে হলে জনাব চৌধুরী ও বিএনপি কেউ এতবড় বিপর্যয়ে পড়তেন না। বিএনপি নেতারা এখনও আত্মরক্ষার জন্য বলে থাকেন যে, জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট শুধু নির্বাচনের জন্য, অন্য কোন বিষয় এখানে নেই। তাই যদি সত্য হবে, তাহলে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর বিএনপির দেয়া উচিত। এক. ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি একা ১৯৩টি আসন পাওয়ার পরেও একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে কেন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী বানালেন। যুদ্ধাপরাধী নিজামীকে এত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেন কেন? দুই. ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপির সুপ্রীম লিডার তারেক রহমান পল্টন ময়দানে ছাত্রশিবিরকে এক মায়ের সন্তান আপন ভাই হিসেবে ঘোষণা দেয়ার তাৎপর্য কি? তিন. ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলে ওই দিন বিকেল থেকে জামায়াত-ছাত্রশিবির নিরীহ মানুষ হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াওসহ দেশব্যাপী ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টি করল, রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী কর্তব্যরত পুলিশকে হত্যা করল, জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিল, শহীদ মিনার ভাঙল, তারপরও ১ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে বিএনপির শীর্ষ নেত্রী কেন বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের জামায়াতের তা-বে যোগ দেয়ার হুকুম দিলেন? চার. ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া বললেন, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সাকা চৌধুরী স্বাধীনতাবিরোধী নয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের আটক রাখা হয়েছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ ও ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানাল। ওই সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দিয়েছিলেন মওদুদ আহমেদ। তারপর চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বলেছেনÑ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এখন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক সকলকে মুক্তি দেয়া হবে এবং বর্তমানে বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনা হবে। জামায়াতের সঙ্গে যদি শুধু নির্বাচনী জোট হয়ে থাকবে, তাহলে তাদের নেতাদের পক্ষে এমন করে ঢাল হিসেবে বিএনপির দাঁড়ানোর অর্থ কি হতে পারে? এত কিছুর পরেও চারদিক থেকে একটা রব উঠেছে- জামায়াতকে এখন বিএনপি ছেড়ে দিলে দল এবং দশ ও দেশের মঙ্গল হবে। কিন্তু পেছন থেকে যারা টেনে ধরছে তাদের হাত তো অনেক লম্বা। অন্ধকার রাতে মাঝ নদীতে ঝড়ে, কবলে পড়ে লঞ্চডুবির অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা জানেন, প্রবল বাতাসের তোড়ে লঞ্চটি যখন একদিকে কাত হয়ে বা উল্টে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়, তখন লঞ্চের জানালা-দরজার কাছের যাত্রীরা সবার আগে লাফিয়ে বের হতে চায়, বাঁচার শেষ চেষ্টা চালায়। কিন্তু তখন তাদের পেছন থেকে টেনে ধরে অন্য যাত্রীরাও বাঁচার জন্য বৃথা চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে ফল হয় উল্টো, উভয়ই লঞ্চের মধ্যে আটকা পড়ে মারা যায়। কেউ বাঁচতে পারে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একই লঞ্চের আরোহী জামায়াত ও বিএনপি। বিএনপির জন্ম ও ক্ষমতায় আরোহণ এবং একাত্তরের মৃত জামায়াতের পুনর্জন্ম ও বেড়ে ওঠা বিষয় দুটি যে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত তা এখন সবাই জানেন। কিন্তু পুনর্জন্মের ৩৮ বছর পর জামায়াতের লঞ্চ এখন প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে। ফলে জামায়াতের রাজনীতি আদৌ বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কিনা সে প্রশ্ন এখন সবাইর মধ্যে দেখা দিয়েছে। তবে বিএনপি একই লঞ্চের যাত্রী হলেও তাদের অবস্থান জানালা-দরজার কাছে। ইচ্ছা করলে তারা ঝড়ে কবলিত লঞ্চ থেকে বের হয়ে নতুন লঞ্চে নতুন যাত্রা শুরু করতে পারে। এরকম শক্তি ও সামর্থ্য বিএনপির এখনও আছে। কিন্তু পেছন থেকে জামায়াত বিএনপিকে যেভাবে টেনে ধরছে, তাতে শেষ পর্যন্ত কার অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা এখনও পরিষ্কার না হলেও তাদের বহনকারী লঞ্চটি যে অন্ধকারাচ্ছন্ন নদীর ভেতরে ঝড়ের বাতাসে দলিত হচ্ছে, তা বোঝা যায়। তাই বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা এবং তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকসহ দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল- এবার বিএনপি জামায়াতকে অবশ্যই ছেড়ে দেবে। সময়টা এখন পরিপক্ব। কিন্তু সব কিছুকে পেছনে ফেলে কয়েকদিন আগে বেগম খালেদা জিয়া দলেবলে যেভাবে জামায়াতের ইফতার পার্টিতে হাজির হলেন, তাতে জামায়াতের সাবেক ওই সংসদ সদস্যের কথাই যথার্থ বলে মনে হয়- তালাক দেয়া তত সহজ নয়। লেখক : মেজর জেনারেল পিএসসি (অব), ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
×