ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আপীল বিভাগে যুক্তিতর্ক শেষ ॥ সাকার চূড়ান্ত রায় ২৯ জুলাই

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ জুলাই ২০১৫

আপীল বিভাগে যুক্তিতর্ক শেষ ॥ সাকার চূড়ান্ত রায় ২৯ জুলাই

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপির শীর্ষ নেতা সাকা বাহিনীর (নিজস্ব বাহিনী) প্রধান সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপীল শুনানি শেষ হয়েছে। ১৩ কার্যদিবসে শুনানি শেষে আপীলের চূড়ান্ত রায়ের জন্য ২৯ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। মঙ্গলবার প্রথমে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান। আসামি পক্ষে আইনজীবীদের জবাবে রাষ্ট্রেপক্ষে সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। সবশেষে খন্দকার মাহবুব হোসেনের জবাবের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সাকা চৌধুরীর আপীল শুনানি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিাযোগের মধ্যে নয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। আর চারটি অভিযোগে সাকাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেছিল ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সাকার খালাস চেয়ে আপীল দায়ের করেন তার আইনজীবী। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে এটি হবে আপীল বিভাগের পঞ্চম রায়। এর আগে আরও চারটি মামলার আপীল নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা (মৃত্যুদ- কার্যকর), নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী (আমৃত্যু কারাদ-) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদ- কার্যকর) ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (ট্রাইবুনালের মৃত্যুদ- বহাল)। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি। আর আপীলে থাকা অবস্থাতেই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলীসহ আরও ৮টি মামলার আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আদেশের পর প্রসিকিউশন ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা আশা করি, ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল থাকবে আপীল বিভাগেও। প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, আমি আশা করব যে চার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসি দিয়েছিল সেটা বহাল থাকবে। তার মৃত্যুদ- হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেছেন, একাত্তরে সাকা চৌধুরী চট্টগ্রামে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন। আর সেই বাহিনীর প্রধান হয়ে রাউজান গহিরা জগৎমল্লপড়ায় গণহত্যা চালান। আমি মনে করি ট্রাইব্যুনাল যে সমস্ত অভিযোগে সাকাকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন, আপীল বিভাগেও তা বহাল থাকবে। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আপীলের চূড়ান্ত রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালাস পাবেন। আশা করব ট্রাইব্যুনাল ফাঁসি দিয়েছিল সেটা বহাল থাকবে ॥ আপীল বিভাগের আদেশের পর প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, তবে সাকার আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্যের বিষয়ে দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তরে দেশের বাইরে ছিলেন এটা মিথ্যা কথা। জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলছে উনি দেশে ছিলেন না এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সর্বৈব মিথ্যা। সর্বশেষে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন দ- কমাতে। আমরা এটাতেও আপত্তি জানিয়েছি। তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদেরের চৌধুরীর তা-ব এবং নির্যাতনের কথা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়ে বলেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন। উনাদের মতো বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরা কি মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে নাকি। অবশ্যই সালাউদ্দিন কাদের দেশে ছিলেন। যারা নির্যাতিত হয়েছেন তারাও বলেছেন। পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, সার্টিফিকেট দিতে পারেই। এর মানে এই নয় যে, সে অপরাধ করেনি। আমি আশা করব যে চার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসি দিয়েছিল সেটা বহাল থাকবে। তার মৃত্যুদ- হবে। তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ অভিযোগ আনা হয়েছিল যে সালাউদ্দিন কাদেরের ওপর হামালা করা হয়েছিল। কিন্তু সাক্ষী হিসেবে ঐ গাড়ির ড্রাইভারকে আদালতে হাজির করা হয়নি। সমস্ত অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ॥ এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপীলের রায় আগামী ২৯ জুলাই ঘোষণা করা হবে। আপীলের চূড়ান্ত রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালাস পাবেন। তিনি বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ থেকে ’৭৪ সাল পর্যন্ত দেশের বাইরে ছিলেন। ওই সময় তিনি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করতেন। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ একাত্তরে সালে যে সকল ঘটনার সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে তিনি সে সকল অভিযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে সকল সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউই প্রত্যক্ষদর্শী নয়। তাই এ মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন খন্দকার মাহবুব। ১৩তম কার্যদিবসে শুনানি শেষ ॥ ৫ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে সাকা চৌধুরীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান। এর আগে প্রথমে আসামিপক্ষের শুনানিতে ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের রায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-জেরা এবং রায়সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) উপস্থাপন করেন এসএম শাহজাহান। অন্যদিকে গত ৩০ জুন এবং ১ ও ৭ জুলাই তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে আপীল বিভাগে আসা পঞ্চম আপীল মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। গত ১৬ জুন সর্বশেষ চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদ- বহাল রাখেন আপীল বিভাগ। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আসামি সাকার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ ও আটকের অভিযোগে ওই মৃত্যুদ- দেয়া হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। রায়ের আদেশে বলা হয়, মানবজাতির বিরুদ্ধে এমন জঘন্য অপরাধ করার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য বলে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। ‘আইনপ্রণেতা হলেও তাঁকে মনে রাখতে হবে, তিনি নিজেও আইনের উর্ধে নন। ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ ॥ এদিকে ট্রাইব্যুনাল রায়ের তিনটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, (১) বিচারের প্রাথমিক পর্যায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদালতের কোর্ট ডেকোরাম (শালীনতা) ভঙ্গ করে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। (২) ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা আদালতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এজলাসে উপস্থিত সবাই দাঁড়ালেও তিনি বসে থাকতেন। অনেক সময় দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি। (৩) ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের তিনি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। তিনি একজন পার্লামেন্টের সদস্য হয়েও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ট্রাইব্যুনালকে নানাভাবে অবজ্ঞা করেছেন। এগুলো নিন্দনীয়। তবে এই পর্যবেক্ষণ রায়ের ক্ষেত্রে কোন প্রতিফলন ঘটবে না। অন্যদিকে অভিযুক্ত সাকা চৌধুরীর দেয়া ডকুমেন্ট এলিবাই (অন্যত্র থাকার অজুহাতে রেহাই পাওয়া) দেয়া প্রমাণ করে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। রায়ে বলা হয়েছে, সাকা চৌধুরী বিদেশে গেছেন, এটা ঠিক নয়। মূলত একাত্তরের ২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চন্দনপুর সাকার জীপে আক্রমণ করেছিল, তাতে তিনি আহত হন। সেই আক্রমণে গ্রেনেড হামলায় গাড়ির চালক নিহত হন। সাকা জখম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানে ডা. একেএম শফিউল্লাহ তাকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন। সেই ডাক্তার ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা গ্রেনেড চার্জ করেছিল তারাও ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। যে সমস্ত অভিযোগে মৃত্যুদ- দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল ॥ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিাযোগে মধ্যে নয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি ঘটনায় সাকা চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি চার্জ ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছর করে ১০ বছর কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো অপরাধে জড়িত থাকা এবং এর পরিকল্পনা করার দায়ে ২০ বছর করে ৬০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। প্রমাণিত যে ৪টি অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যায় ফাঁসি হয়েছে তা হলো, ৩নং অভিযোগে গহিরা শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুন চন্দ্র সিংহ হত্যা, ৫নং অভিযোগে সুলতানপুরে শ্রী নেপাল চন্দ্র ও তিনজনকে হত্যা, ৬নং অভিযোগে ঊনসত্তর পাড়ায় ৬৯/৭০ জনকে গণহত্যা এবং ৮নং অভিযোগে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহমদ ও তার পুত্র আলমগীরকে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। আর প্রমাণিত অপহরণ ও নির্যাতনসংক্রান্ত অভিযোগে আনা হয়েছে, ১৭নং অভিযোগে নিজাম উদ্দিন আহম্মেদকে অপহরণ ও নির্যাতন, ১৮নং অভিযোগে সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণ ও নির্যাতন। আর এই দুই অভিযোগে সাকাকে দেয়া হয়েছে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ-। অন্যদিকে ২, ৪ ও ৭ নং অভিযোগে তাকে দেয়া হয়েছে ২০ বছরের কারাদ-। আর যে সকল অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো, ১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ ও ২৩নং অভিযোগ। এছাড়াও যে অভিযোগগুলো নিয়ে আদালত কিছু বলেনি সেগুলো হলো, ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২নং অভিযোগ। মামলার ধারাবাহিকতা ॥ সাকা চৌধুরীর মামলায় উভয়পক্ষের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুট ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭টিতে সাক্ষ্য ও যুক্তি উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন। ২০১১ সালের ১৪ নবেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। একই বছরের ১৮ নবেম্বর আনুষ্ঠানিক এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৩টি অভিযোগে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ১৪ মে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে গত ২৮ জুলাই তা শেষ হয়। প্রসিকিউশনের ৪১ জন এবং আসামিপক্ষে চারজনের জবানবন্দী নেয়া হয়। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাকা আপীল করেন। অবশেষে ১৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে ৭ জুলাই আপীল বিভাগ রায় ঘোষণার জন্য ২৯ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছেন। ২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাকার বিরুদ্ধে মোট ৪১ সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন। অন্যদিকে সাকা চৌধুরী নিজেসহ মোট ৪ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
×