ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রাচ্যনাট শিক্ষার্থীদের প্রযোজনা ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৮ জুলাই ২০১৫

প্রাচ্যনাট শিক্ষার্থীদের প্রযোজনা ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রখ্যাত বাঙালী শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর অমর সৃষ্টি গুপী গাইন বাঘা বাইন। আর পাঠকনন্দিত এই গল্পটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছিলেন তাঁরই ছেলে সত্যজিৎ রায় চৌধুরী। এবার দর্শক সমাদৃত সেই চলচ্চিত্রটি থেকে নির্মিত হলো মঞ্চনাটক। প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে প্রাচ্যনাটের প্রশিক্ষণার্থীরা। মঙ্গলবার আষাঢ়ের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো নাটকটি। সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য অবলম্বনে গুপী গাইন বাঘা বাইন নাটকটি উপস্থাপন করে প্রাচ্যনাট স্কুল অব এ্যাকটিং এ্যান্ড ডিজাইনের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সমাপনী প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন শাহরিয়ার ফেরদৌস সজীব। নাট্য প্রদর্শনীর আগে প্রাচ্যনাটের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব গোলাম সারোয়ার ও বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম। এদিকে নাটক ছাড়াও মিলনায়তনের বাইরে উন্মুক্ত পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মজার ঘটনা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে নাটকের কাহিনী। আমলকি গ্রামের সাদাসিধে ছেলে গোপীনাথ। তার গান গাইবার অনেক আগ্রহ। গ্রামের বয়স্করা মজা করে পরামর্শ দেয় রাজার বাড়ির সামনে গিয়ে গান শুনিয়ে আসতে। অতি উৎসাহী গুপী মনের আনন্দে গান শোনাতে যায় রাজাকে। তবে তাকে অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়। অন্যদিকে উত্তরকুট গ্রামের ছেলে বাঘানাথের কপালও একই রকম। তার আবার ঢোল বাজানোর শখ। কিন্তু বাঘার প্রলয়বাদন শুনে তাকে বের করে দেয় গ্রামের লোকেরা। এই ভাগ্যাহত মানুষ দুটির দেখা হয় গ্রামের বাইরে অনেক দূরের বনে। দুই হতভাগ্যের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। রাতের বেলা তারা দেখা পায় ভূতের রাজার। ভূতের রাজা গুপী-বাঘার গান শুনে খুশি হয়ে তিনটি বর দিয়ে তাদের জীবন পাল্টে দেয়। শু-ি নামক এক রাজ্যে চলছে গানের প্রতিযোগিতা। গুপী-বাঘাও ছুটে যায় শু-িরাজ্যে, গীত-বাদনে তারা মন জয় করে নেয় শু-ি রাজার। ঘটনাক্রমে তারা জানতে পারে এক মহামারীর প্রভাবে সমস্ত রাজ্যের মানুষ তাদের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। হঠাৎই দূরের রাজ্য হাল্লা থেকে আসে যুদ্ধের ফরমান। তাতে শু-িরাজ্যকে হাল্লারাজ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করার আদেশ দেয়া হয়। গুপী-বাঘা আতঙ্কিত রাজাকে আশ্বস্ত করে, এ সঙ্কট থেকে তারা শু-িরাজ্যকে বাঁচাতে চায়। রহস্য উদঘাটনে গুপী ও বাঘা হাল্লায় গিয়ে দেখে এই সব চক্রান্তের পেছনে হলেন কুচক্রী মন্ত্রী। সেই রাজাকে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে সম্মোহিত করে প্রলুব্ধ করেছে যুদ্ধের আদেশ দিতেÑতার লক্ষ্য শু-িরাজ্য দখল। গুপী-বাঘা হাল্লারাজ্যে গিয়ে গান শোনায়, গান শুনে চোখে জল আসে রাজার, এতে তাদের ওপর নজর পড়ে মন্ত্রীর। গান শুনে ওষুধের প্রভাব কেটে যায়, সরল মনের শিশু হয়ে উঠেন রাজা। মন্ত্রী বৈজ্ঞানিক বরফিকে আরও কড়া ওষুধ বানাতে বলে এবং কারাগারে বন্দী করে রাখা হয় গুপী-বাঘাকে। বরফির ওষুধের প্রভাবে আরও হিং¯্র হয়ে ওঠেন হাল্লার রাজা, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন সবাইকে। কারাগারের প্রহরীকে ভাল খাবারের লোভ দেখিয়ে মুক্ত হয় গুপী-বাঘা। হাল্লারাজ্যের সৈন্যরা শু-ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতেই গুপী-বাঘা এসে তাদের গান ধরলে সবার চলাচল থেমে যায়। তারা হাততালি দিয়ে নামিয়ে আনে বিভিন্ন স্বাদের মিষ্টান্ন যা দেখে সৈন্যরা যুদ্ধ ভুলে গিয়ে খাবারের দিকে মনোযোগ দেয়। ল-ভ- হয়ে যায় কুচক্রী মন্ত্রীর পরিকল্পনা। হাল্লারাজ এবং শু-িরাজ এই দুই ভাইয়ের মিলন ঘটে। বরফির ওষুধের ধোঁয়া সমস্ত রাজ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয় আর এতে রাজ্যের মানুষ আবার কথা বলতে শুরু করে। নাটকে গুপীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আশরাফুল আলম ও বাঘার চরিত্রে নূূর মুহাম্মদ মুন্না। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন এম এ কাদের পারভেজ, তানজিম ইমরান মাহমুদ, কৃষ্টি রেজা, রকিবুল হাসান রাকিব প্রমুখ।
×