ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মঙ্গাকে জয় করে স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৮ জুলাই ২০১৫

মঙ্গাকে জয় করে স্বাবলম্বী

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় জেলার সাড়ে ১১ হাজার পরিবার ক্রমেই মঙ্গাকে জয় করে পরিবর্তিত পরিবেশে খাপখাইয়ে নিচ্ছে নিজেদের। জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায় তারা এখন স্বাবলম্বীর পথে। কুড়িগ্রাম জেলার আট উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় করা হয়েছে আট কোটি ৬২ লাখ আট হাজার ৭৩৬ টাকা। উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ৫০৭ নারী এবং সাত পুরুষ মাটি কেটে তৈরি করছেন রাস্তা। শ্রমিক ফুলেশ্বরী। ফুলের মতো ফুটফুটে চেহারা হলেও অপুষ্টির ছাপ শরীর জুড়ে। এক ছেলে এক মেয়ে। স্বামী নিপেন্দ্র নাথ পেশায় জেলে। নদীতে মাছ ধরলে খাবার জোটে না হলে উপোষ। নদী ভাঙ্গা এ পরিবারটির সম্পদ বলে কিছুই নেই। পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে এ পরিবারটি যুক্ত হয় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে। মাটির কাজ করে ফুলেশ্বরী প্রতিদিন আয় করে ১৪৫ টাকা। এছাড়া প্রশিক্ষণ গ্রহণ পাল্টে গেছে পরিবারের জীবনযাত্র। দুই ছেলে-মেয়ে এখন স্কুলে যায়। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করছেন। সচেতন হয়েছে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে। একইভাবে কাশেম আলী, আব্দুল কাদের, সুজালা বেগম সববাই তাদের ভাগ্য বদলের গল্প শোনান। এখন আর তাদের উপোস করতে হয় না। মঙ্গাকে তারা জয় করতে পেরেছে। তারা একই সঙ্গে বন্যা মোকাবেলা করে নিজেরা নিরাপদে থাকছেন। উন্নয়ন ঘটেছে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। নিশ্চিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের সঞ্চয়। পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের জেলা সমন্বয়কারী মাহফুজার রহমান খন্দকার জানান, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও পাঁচগাছী ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন, চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ও রাণীগঞ্জ, রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর ও যাদুর চর, রাজিবপুর উপজেলার রাজিবপুর সদর ও কোদালকাটি, নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ও রেরুবাড়ী, ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ও শিমুলবাড়ী এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ও আন্ধারীঝাড়সহ মোট ১৬ ইউনিয়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। উলিপুর উপজেলা সমন্বয়কারী মৌসুমী আক্তার জানান, বিশ্ব স্বীকৃত গ্রামীণ অংশগ্রহণমূলক সমীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানীয় সম্পদের মানচিত্র অংকন ও সম্পদের শ্রেণী বিন্যাসের মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী বাছাই শেষে হত দরিদ্রদের চিহ্নিত করে এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলার হত দরিদ্র এবং গ্রামীণ নারী ও পুরুষদের স্থানীয় সম্পদ তৈরি যেমন বাঁধ কাম রাস্তা, নালা ইত্যাদি তৈরিতে মাটির কাজ দেয়া, স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়ানো বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন ৬ মাস (শুষ্ক মৌসুমে) মাটির কাজের বিনিময়ে তাদের সম্পদ তৈরি এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর ৬ মাস (বর্ষাকাল ও তদপরবর্তী সময়) প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন সুবিধাভোগীরা। এভাবে দুই বছর তারা কাজের বিনিময়ে সম্পদ এবং প্রশিক্ষণে অর্থ পেয়ে থাকেন। পরবর্তীতে তহবিল সাপেক্ষে সুবিধাভোগীদের আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত আর্থিক অনুদান প্রদান করে আরও এক বছর বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রমে জড়িত রাখা হয়। এভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্থানীয় সম্পদ তৈরি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং নিজেদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করছেন।
×