ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিচিত্র বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৯ জুলাই ২০১৫

বিচিত্র বিড়ম্বনা

পবিত্র মাহে রমজানোত্তর ‘ঈদ’ অত্যাসন্ন। মুসলমানদের সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে চায়। তাই কারও ব্যস্ততারও শেষ থাকে না। নতুন জামা, শাড়ি-চুড়ি, আসবাবপত্র ইত্যাদির প্রয়োজনে আছে কেনাকাটার ধুম। সেইসঙ্গে আছে খাবারের মেনু তৈরি বা তার আয়োজন। এসব কি আর একা-একা হয়? আপনজনদের সঙ্গেই তো সেই আনন্দ ভাগ করে নিতে হবে। অসংখ্য মানুষ কর্মের টানে দূর-দূরান্তে অবস্থান করে চলেছেন। অন্তত ঈদ উপলক্ষে কে না চায় বাড়ি ফিরতে। প্রিয়জনেরাও পথ পানে চেয়ে থাকে স্ব-স্ব আপনজনদের অপেক্ষায়। তবে অন্য সাধারণ সময়ের তুলনায় ঈদের সময়ে ঘরে ফেরা এক কঠিন ব্যাপার। সেই কঠিনকে সহজে অতিক্রম করতে পারাটাই হচ্ছে হাঁফ ছেড়ে বাঁচা। তা কি সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে? ‘ঈদ’ মানে আনন্দ, বিড়ম্বনা নয়। প্রতিবছরই দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে বাড়ি বা ঘরে ফেরা মানুষের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ সময়ে বাড়ি ফেরা মানুষের নানাভাবে বিপাকে ফেলে পরিবহন সেক্টরের অসাধু ব্যক্তিরা টু-পাইস হাতিয়ে নিতে কোনরকম আলস্য করে না। আলস্য করে শুধু ঘরে ফেরা যাত্রীদের প্রতি মানবিক সেবা প্রদানে। আমরা জানি ‘মানবিক’ গুণটির বলেই আমরা ‘মানুষ’। সেই মানুষের প্রকৃত ধর্ম ‘মনুষ্যত্ব’ কি আমাদের মাঝে আছে? অর্থ প্রাপ্তির লোভ যেখানে শক্তিশালী, ‘মানবতা’ সেখানে হয় অনুপস্থিত। ঈদকে সামনে রেখে মানুষের ঘরে ফেরার এ সময়টা পরিবহন সেক্টরের কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের জন্য রমরমা বাণিজ্যের মৌসুম। এ সময়ে টিকেটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে যাত্রীদের হয়রানি করা নতুন কিছু নয়। প্রতিবারই দেখা গেছে ঈদকে সামনে রেখে টিকেটের কালোবাজারি, মওকা মতো বাড়তি ভাড়া আদায়, যানজট ইত্যাদি লেগেই থাকে। সেইসঙ্গে নিরাপত্তা নিয়েও বাড়ি ফেরা মানুষগুলো শঙ্কিত থাকে। এমন অবস্থায় ঈদের আনন্দ প্রকৃতপক্ষে হয়ে ওঠে কি? এ সময়ে বাড়ি ফেরা অধিক যাত্রীসংখ্যার কথা বিবেচনায় এনে এবং সে সুবাদে বাড়তি আয়ের বিষয়টিও মাথায় রেখে যানবাহনের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এবারও হয়ত তাই হবে। বিপত্তি হলো যানজট। যানজটের দুর্ভোগ কেমন তা ভুক্তভোগীরাই ভাল জানেন। বিশেষত যানজটের কারণে এ সময়ে বাড়ি ফেরা কঠিন এবং স্বাভাবিকের তুলনায় অতি বিলম্বিত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সড়ক পথে ভয়াবহ যানজট এড়াতে হলে বগিসংখ্যা বৃদ্ধিসহ ট্রেন সার্ভিস জোরদার করা দরকার। বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই এবারের ঈদের আগমন ঘটতে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগও থাকতে পারে এ সময়ে। তখন নদীপথে লঞ্চ-স্টিমারগুলো কতটুকু ঝুঁকিমুক্ত থাকবে? ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরাকে কেন্দ্র করে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সতর্কতা কতটুকু? এসব মিলিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও সমূহ সমস্যা বিদ্যমান থাকতে পারে ভেবে ঘরে ফেরার প্রত্যাশায় অনেকেই চিন্তিত। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানে সরকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা সম্প্রতি বলা হয়েছে। এমন আশার বাণী যাতে দ্রুত কার্যকর হয়, সেই প্রত্যাশায় অপেক্ষমাণ সবাই। আনন্দ বাজার, চট্টগ্রাম থেকে
×