ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সোনামসজিদ বন্দরে রাজস্ব আদায়ে ধস

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৯ জুলাই ২০১৫

সোনামসজিদ বন্দরে রাজস্ব আদায়ে ধস

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ একটি সম্ভাবনাময় স্থলবন্দরের অবসান ও তাকে বিতর্কিত করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। বন্দরের প্রধান প্রাণ ও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠার প্রধান উপাদান তার রাজস্ব। এবার সেই রাজস্বে ধস নেমেছে। ১৯৯০ সালে সোনামসজিদ বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১৪ বছর ধরে নানান ধরনেরও লুটপাট ও ষড়যন্ত্র করেও রাজস্ব কমানো সম্ভব হয়নি। এবার অর্থাৎ গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৮ কোটি ৪৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এবার সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় এক কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে। বন্দরে রাজস্ব হঠাৎ করে কমে যাবার কারণ অনুসন্ধানে কথা বলেছি সোনামসজিদ সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম টানু, বন্দর আমদানি রফতানি গ্রুপের সভাপতি, সম্পাদকসহ একাধিক প্রভাবশালী আমাদানিকারক, সোনামসজিদ ট্রাক পার্কিং গ্রুপের নেতা ড্রাইভারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্দর ছিল বিএনপি জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে এক মন্ত্রীর ভাই ও তার পরিবারের খবরদারি ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে আমাদানি-রফতানিকারকসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এসবের কারণে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও গত অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন, অবরোধ ছাড়াও সৃষ্ট বন্দর জটিলতার কারণে বহু ব্যবসায়ী বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যায়। এই বন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ফল আমদানি হয়ে থাকে। এসব কারণে বিভিন্ন সময় ফল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন বন্দর ফল আমদানির ব্যাপারে বেশকিছু সুবিধা দিয়ে থাকে। অন্যান্য পণ্যেও একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে সেসব বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সোনামসজিদ বন্দরে কাস্টমসসহ নানান শ্রেণীর ও সংস্থার চাঁদাবাজির কারণে আমদানিকারকরা কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বন্দর ছেড়েছে। একদিকে কাস্টমসের চাঁদাবাজি ও আমদানি পণ্যে কোন ধরনের ছাড় না দেবার কারণে ফল আমদানি কমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে রাজস্ব। এখানে উল্লেখ্য, ৯০ সালে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সোনামসজিদ বন্দর চালু হওয়া মাত্র শিবগঞ্জসহ জেলার চিহ্নিত বড় বড় চোরাকারবারিরা বন্দরে আমদানিকারক সেজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা বৈধ পণ্যের আড়ালে আনতে থাকে অবৈধ পণ্য। ফলে কায়েক বছরে একেবারে অতি সাধারণ কিছু মানুষ বা তৃতীয় শ্রেণীর চোরাকারবারিরা শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যায়। নিয়ন্ত্রণও চলে যায় তাদের হাতে। রাজস্ব বিভাগের সদস্যরা আগ্রহী হয়ে তদবির করে সোনামসজিদ বন্দরে বদলি হয়ে এসে ছয় মাসে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে চলে যায়। এক পর্যায়ে সোনামসজিদ চোরাকারবারিদের বন্দরে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হওয়ার পর কাস্টমস খুবই শক্ত হাতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রাজস্ব আদায় শুরু করলে আমদানিকারকরা বন্দর ছাড়তে থাকে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলে আসছে। তারপরও চাঁদাবাজি ও বৈধ আমদানি পণ্যের আড়ালে অবৈধ পণ্য আসছে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। কারণ একটাই এখনও বেশকিছু আন্তর্জাতিক মানের চোরাকারবারি আমদানিকারক সেজে সোনামসজিদ দিয়ে ব্যবসা করছে। সুযোগ-সুবিধা মতো বৈধ পণ্যের আড়ালে অস্ত্র, বিস্ফোরক, নানান শ্রেণীর মাদক নিয়ে আসছে। এরাই মালদহের বিভিন্ন এলাকায় আম বাগান কিনে রেখেছে। ফল আমদানির নামে আম আনার সময় অবৈধ পণ্য নিয়ে আসে। আম মৌসুম শুরুর পর থেকেই তারা তৎপর হয়ে উঠেছে। এছাড়াও সব আমলেই স্থানীয় এমপিদের খবরদারির কারণে বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থলবন্দরের দায়িত্বরত কাস্টমস কর্মকর্তা নূরুল বশির জানান এ স্থলবন্দরে রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ আসে ভারত থেকে আমদানিকৃত ফল থেকে। এবার অজ্ঞাত কারণে ফল আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে রাজস্ব টার্গেট পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের সাবেক আমদানিকারক জনৈক ব্যবসায়ী জনকণ্ঠকে ক্ষোভের সঙ্গে জানান বন্দর দিয়ে মাল প্রবেশ করা মাত্র এক শ্রেণীর চিহ্নিত দালাল ও চাঁদাবাজদের চাহিদা পূরণ, একই সঙ্গে কাস্টমসসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ পরিবহন সেক্টরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে লাভালাভ কিছুই থাকে না। তবে এ বন্দরে সুযোগ রয়েছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য আনার। তাই বন্দরের বুনিয়াদি ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে ব্যবসা করছে। তবে সোনামসজিদ এখনও প্রচ-ভাবে সচল করে রেখেছে চোরাকারবারি আমদানিকারকরা। তাই সরকার রাজস্ব হারিয়ে টার্গেট অতিক্রম না করলেও অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা সরকারী টার্গেটের দ্বিগুণ অর্থ কমিয়ে পকেটে পুরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।
×