ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কূপ খননের প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি বাপেক্সের

তিন জেলায় তেল গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৯ জুলাই ২০১৫

তিন জেলায় তেল গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা

রশিদ মামুন ॥ নতুন করে গ্যাস প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিন জেলায় সম্ভাবনা দেখছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। কোম্পানিটি তাদের পরিচালিত দ্বিতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে বলছে, বরিশাল, মাদারীপুর এবং শরীয়তপুরÑ তিন জেলায় তেল-গ্যাস প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময়। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এখানে গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করার প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাপেক্স। দ্বিতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ এবং এই এলাকার পেট্রোলিয়াম সম্পদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলা হচ্ছে জেলাগুলোতে তেল-গ্যাস থাকতে পারে। এছাড়া দ্বিতীয় মাত্রার জরিপের ফল বলছে এখানে তেল-গ্যাস থাকতে পারে। মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণ বলছে জেলাগুলোয় তেল-গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা ইতিবাচক। যদিও কূপ খননের আগে নির্দিষ্ট করে বলা যায় না সেখানে গ্যাস রয়েছে। জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, বাপেক্স এই অঞ্চলে যে অনুসন্ধানকাজ চালিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে, এই তিন জেলায় তেল-গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের এখানে দ্রুত কূপ খনন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জানা যায়, বাপেক্স ২০১৩ এবং ২০১৪ মৌসুমে ফরিদপুর (আংশিক), গোপালগঞ্জ, বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকায় ৪৭৬ লাইন কিলোমিটার দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ করে। সম্প্রতি এই জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে এরমধ্যে বরিশাল, মাদারীপুর এবং শরীয়তপুরকে সম্ভাবনাময় বলা হচ্ছে। তবে এখনও আরও কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে বলে বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা জানান। বাপেক্স সূত্র বলছে, এই এলাকার পেট্রোলিয়াম সম্পদের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় ভোলাতে গ্যাস রয়েছে। সখানে একটি ২২৫ মেগাওয়াটের সরকারী বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও একটি ২২৫ মেগাওয়াটের আইপিপি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদনও দিয়েছে সরকার। দৈনিক প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র পরিচালনার জন্য ক্ষেত্রটি উপযুক্ত। ভৌগোলিক দিক দিয়ে ভোলা এই তিন জেলার নিকটবর্তী। এছাড়া ১৯৭৪ সালে বরিশালের মুলাদিতে গ্যাসকূপ খনন করেছিল একটি রাশিয়ান কোম্পানি। ওই সময় গ্যাস না পাওয়া গেলেও তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে এখানে গ্যাস রয়েছে। এছাড়া নদীর ওপারেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র। এসব ইতিহাস পর্যালোচনায় বলা হচ্ছে এখানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চূড়ান্তভাবে কূপের স্থান নির্ধারণসহ অন্য কাজগুলো এখন করা হচ্ছে। যে তথ্য জরিপে পাওয়া গেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে তিন জেলার কোথায় কূপ করা উপযুক্ত হবে। তিনি বলেন, আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা সম্ভাবনাময়। তবে নানাভাবে আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বাপেক্সের বিশেষজ্ঞ দলই তথ্য বিশ্লেষণের কাজ করছে। তাদের কাজ শেষেই ড্রিলিং বিভাগকে কূপ খনন করার পরামর্শ দেয়া হবে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বলেন, আমাদের মজুদ গ্যাসে আর ১৬ বছর চলবে। কিন্তু বাস্তবে গ্যাস ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি বলছে, মজুদ গ্যাস উত্তোলনের মাত্রা ২০১৭ সালের পর থেকে কমতে থাকবে। আর ২০৩০ সাল নাগাদ তা একেবারে শেষ হয়ে যায়ে। এজন্য দেশের নতুন নতুন এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও এসব ক্ষেত্রে খুব বেশি সফলতা গত কয়েক বছরে চোখে পড়েনি। স্থলভাগ এবং সাগরে বড় মজুদের আশা জাগানো খবর পাওয়া যায়নি কোন জরিপে। তবে এই তিন জেলায় গ্যাস পেলে দেশের নতুন এলাকা পেট্রোলিয়াম সম্পদ প্রাপ্তির আওতায় আসবে। জানতে চাইলে দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ দলের প্রকল্প প্রধান নূরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা মনে করছি সম্ভাবনাময়। তবে গ্যাসকূপ খনন করার আগে পর্যন্ত তো নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যায় না উল্লেখ করে বলেন, আশা করছি বছরের শেষ নাগাদ আমরা কূপ খননের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারব। পেট্রোবাংলা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যত গ্যাস প্রাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে তার সবগুলোই পুরাতন ক্ষেত্রের পুনর্মূল্যায়ন। অর্থাৎ অনেক বছর ধরে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে এমন ক্ষেত্রে তৃতীয় মাত্রার জরিপ করে বলা হচ্ছে এখানে মজুদ এতটুকু বেড়েছে। এর বাইরে কুমিল্লার শ্রীকাইল এবং নোয়াখালীর সুন্দলপুরে গ্যাস প্রাপ্তির ঘোষলা দেয়া হয়েছে। যদিও ২০০৪ সালেরও আগেই বোঝা গিয়েছিল শ্রীকাইলে গ্যাস রয়েছে। আর সুন্দলপুরে গ্যাস মজুদের বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে ২০০৭ সালে। এমনকি পেট্রোবাংলা সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনাতে সুনেত্র নামের যে বড় ক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিল তাও ২০০৮-০৯ মৌসুমের জরিপে উঠে এসেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কূপ খনন করার পর গ্যাস পাওয়া যায়নি। যদিও বাপেক্স বলছে, সুনেত্র তো গ্যাস পাওয়ার আশা তারা এখনও ছাড়ছেন না। সম্প্রতি এখানে তৃতীয় মাত্রার জরিপ চালানো হয়েছে। বাপেক্স সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে দ্বিমাত্রিক জরিপের মাধ্যমে নতুন নতুন এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পর কাজ আরও গতিশীল করতে পেট্রোবাংলা তা ফাস্টট্রাক নামের একটি স্বল্পমেয়াদী প্রকল্পর অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও ওই ফাস্টট্রাক প্রকল্পে নতুন এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। প্রকল্পের আংশিক কাজ করেই ২০১১ সালে ফাস্টট্রাক প্রকল্প বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে নতুন প্রকল্পে তেল-গ্যাস অুসন্ধানে ৭ জেলায় এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার লাইন দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ (টু-ডি সাইসমিক সার্ভে) চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর আওতায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ভোলা জেলার অন্তর্ভুক্ত ৩-বি, ৬-এ, ৬-বি, ৫, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকে টু-ডি জরিপ চালানো হয়। তেল-গ্যাস অুসন্ধানে ৭ জেলায় এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার লাইন দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ (টু-ডি সাইসমিক সার্ভে) করা হচ্ছে, যাতে ১১টি ব্লকের অনাবিষ্কৃত জায়গায় তেল-গ্যাস থাকার বিষয়ে তথ্য উঠে আসবে। তবে পেছাতে পেছাতে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
×