ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাজেট অধিবেশন সমাপ্ত

পবিত্র রমজানে মিথ্যাচারের জন্য আল্লাহই তার বিচার করবেন ॥ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৯ জুলাই ২০১৫

পবিত্র রমজানে মিথ্যাচারের জন্য আল্লাহই তার বিচার করবেন ॥ শেখ হাসিনা

সংসদ রিপোর্টার ॥ পর্দা নামল দশম জাতীয় সংসদের দীর্ঘতম বাজেট অধিবেশনের। অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় প্রতিদিন তিনি মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। নিজের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। পবিত্র রমজান মাসে মিথ্যাচারের জন্য আল্লাহই তাঁর (খালেদা জিয়া) বিচার করবেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯২ দিনব্যাপী হরতাল-অবরোধের নামে ভয়াল নাশকতা-সন্ত্রাস ও পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার অসংখ্য আলোকচিত্র সংসদে প্রদর্শন করে বলেন, বোমা ও আগুন দিচ্ছে এরা কারা? সবাই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-নেতা। অনেকে হাতেনাতে ধরাও পড়েছে। এরপরও কী বিএনপি নেত্রী বলবেন এসব পুলিশ করেছে? তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ইফতার মাহফিলে শুধু আমাদের বিরুদ্ধেই অপবাদ বা মিথ্যাচার করছেন না, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিচ্ছেন সেই পুলিশ বাহিনীকে জড়িয়েও মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেন, ইফতার মাহফিলে বিএনপি নেত্রী বলেছেন, পুলিশ বাহিনী নাকি পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ খুন করেছে! রমজান মাসে এমন মিথ্যাচার শুনে তাজ্জব হয়ে যাই। রমজান মাসে কীভাবে উনি এমন মিথ্যাচার করেন? অথচ সকল দেশবাসীই জানেন এবং দেখেছেন- কীভাবে বিএনপি নেত্রীর নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করে হত্যা করেছে। নিজের দোষ উনি পুলিশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। এ প্রসঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, তখনও বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আমিই মেরেছি! তখনকার মতো এখনও নিজের দোষ বিএনপি নেত্রী অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পীকার রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠের পর বিকেল চারটায় বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ঘোষণা করেন। এর আগে গত পহেলা জুন বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ৪ জুন সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা ৩০ জুন পাস হয়। সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। হতদরিদ্রের সংখ্যা ৭ দশমিক ৯ ভাগে নামিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাচ্ছে- ঠিক তখন দেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোটের জুলুম-নির্যাতন সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। আন্দোলনের নামে ৯২ দিন ধরে দেশের মানুষকে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নাশকতা মোকাবেলা করেছে। বিএনপি নেত্রী ওই সময় নিজের দলীয় কার্যালয়ে থেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমার পতন না হওয়া পর্যন্ত উনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু কিছু অর্জন ছাড়াই উনাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করেই ঘরে ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। উনি ভাল করেই জানেন, আদালতে গেলে তাঁর দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। এ কারণে উনি আদালতে লাঠিসোটা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সবশেষে আদালতেই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। ‘গ্রামে খাবার নেই, কাজ নেই’- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের একজন দিনমজুর দিনে যা আয় করেন, তা দিয়ে ৮/১০ কেজি চাল কিনতে পারেন। গ্রামে খাবার ও কাজ না থাকলে দিনমজুর ও শ্রমিকের মজুরি এতবেশি বৃদ্ধি পেল কীভাবে? তাঁর এসব অভিযোগ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যানজট প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার অভিযোগের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, দেশের অর্থনীতি যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে, যানবাহনের সংখ্যাও তত বাড়ছে। এরশাদ সাহেব আমার ইফতার মাহফিলে এলেন, কিন্তু যানজটের কারণে বিরোধী দলের নেতা নাকি আসতে পারেননি। কিন্তু দু’জনে যদি একসঙ্গে একগাড়িতে আসতেন তবে এ অসুবিধাও হতো না, যানজটও কিছুটা কম হতো। এভাবে একাধিক গাড়ি ব্যবহারের কারণেই যানজট বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা বসে নেই, বসে থাকলে দেশের এত উন্নয়ন হতো না। প্রতিদিন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, মানবপাচারকারীদের ধরা হচ্ছে। আমরা এক কোটি ২৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। এখন আর বিদেশে যেতে মানুষের ঘরবাড়ি বেচতে হয় না। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে সৌদি আরবে সাড়ে ৮ লাখ এবং মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৬ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসেই সফল কূটনৈতিক তৎপতার মাধ্যমে সকলকে বৈধ করিয়েছি। দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরলসভাবে আমরা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। ১৬ কোটি জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হলেও আমরা সেই কঠিনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা চারগুণ বিশাল বাজেট দিয়েছি। এই বাজেটও বাস্তবায়ন করে আমরা দেশকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পারব ইনশাল্লাহ। ২৭ কার্যদিবসে ৫৮ ঘণ্টা আলোচনা ॥ সমাপ্ত হওয়া বাজেট অধিবেশনে মোট ২৭ কার্যদিবসই ছিল অনেকটা জমজমাট। পুরো অধিবেশনেই এবারে বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থেকে সরকারের ভাল কাজের প্রশংসা ও খারাপ কাজের সমালোচনা করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দীর্ঘ ৫৮ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে, এতে সরকার ও বিরোধী দলের মোট ২১৯ জন সংসদ সদস্য বক্তব্যে রেখেছেন। এছাড়া বাজেট অধিবেশনে মোট পাঁচটি বিল পাস হয়েছে, আরও কয়েকটি নতুন বিল উত্থাপন করা হয়েছে। দুটি সাধারণ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দুটি প্রস্তাবই সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।
×