ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ওয়ানডে পরীক্ষায় টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৯ জুলাই ২০১৫

এবার ওয়ানডে পরীক্ষায় টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ টি২০ মিশন শেষ। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের দুটি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথমটিতে ৫২ রানে, দ্বিতীয়টিতে ৩১ রানে হার হয়েছে। এবার বাংলাদেশের সামনে ওয়ানডে মিশন রয়েছে। শুক্রবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ১০ জুলাই প্রথম ও ১২ জুলাই দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। শুরুতে ম্যাচগুলো শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ১২টায়। সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী বেলা ৩টায় সব ওয়ানডে ম্যাচ শুরু হবে। মিরপুরে দুটি ওয়ানডে শেষে ১৫ জুলাই চট্টগ্রামে তৃতীয় ও সিরিজের শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। টি২০ সিরিজে না পারলেও ওয়ানডে সিরিজে অন্তত একটি ম্যাচ জেতার আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। এর মধ্যেই আবার ওয়ানডে সিরিজে নেই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। বাংলাদেশের জন্য এটা ভালই হয়েছে। সেই সুযোগ বাংলাদেশকে কাজে লাগাতেও হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করতে হলে, এ নিয়ে আর কোন বিতর্ক না রাখতে চাইলে অন্তত ১ ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এরপর ভারতকেও সিরিজ হারিয়ে দিয়েছে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা বধেরও পালা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারিয়ে দেবে বাংলাদেশ, সেটি মুখ দিয়ে কেউই বলতে পারছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তিশালী দল বলেই এমনটি হয়েছে। দলটি ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই শক্তিশালী। টি২০তে সেই প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশে আসার আগে যে বাংলাদেশ দল নিয়ে, দলের ক্রিকেটারদের নিয়েও খুব ভালভাবে হোমওয়ার্ক করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, তাও বোঝা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে।’ সেই প্রমাণ প্রোটিয়ারা দিয়েছেও। শুধু কী প্রমাণ দিয়েছে, বাংলাদেশকে টি২০ সিরিজে পাত্তাই দেয়নি। কেন এমন করতে পেরেছে? যে দলটি টানা সিরিজ জিতে চলেছে, সেই বাংলাদেশ দলকে এমনভাবে দুমড়ে মুচড়ে দেয়া সম্ভব! প্লেসিস সেই রহস্যের কথা জানিয়েছেন। সঙ্গে বুঝিয়েও দিয়েছেন, বাংলাদেশ জয়ের জন্য কী কী করতে পারে, তা নিয়ে আগাম পরিকল্পনা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়া অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আবারও আমরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছি। দুরূহ এক উইকেটে আমরা ১৭০ রান করেছি, সম্ভবত আমরা ১৫ রান বেশি করেছি।’ সিরিজ জিতে মহাখুশি দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। বিশ্বকাপের পর প্রথম সিরিজ খেলতে নেমেই বাজিমাত। সেটি আবার প্লেসিসের হাত ধরেই। খুশি হওয়ারই কথা। তাই তো বলেছেন, ‘ছেলেদের জন্য আমি গর্বিত। বাংলাদেশকে এভাবে ২-০ ব্যবধানে হারানোর জন্য কন্ডিশন খুব কঠিন ছিল। সবাই ভাল করেছে। প্রত্যেকেই এগিয়ে এসেছে আর এভাবে সিরিজ শুরু করাটা দারুণ।’ দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টি২০তে করেছিল ৪ উইকেটে ১৪৮ রান। বাংলাদেশ ৯৬ রান করতে পেরেছিল। দ্বিতীয় টি২০তে ৪ উইকেটেই ১৬৯ রান করে সফরকারীরা। বাংলাদেশ আবারও অলআউট হয়। এবার ১৩৮ রানের বেশি করতে পারেনি। দুইবারই যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেট পড়েছে, সেখানে বাংলাদেশের সব উইকেট তুলে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে প্রথম টি২০ চেয়ে দ্বিতীয় টি২০তে যে বাংলাদেশ ভাল খেলেছে, তা বলেছেন প্লেসিস। অবশ্যই ওরা প্রথম ম্যাচের ভুল থেকে শেখার চেষ্টা করেছে।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশের সব জবাব আমাদের জানা ছিল।’ এমনটি যদি ওয়ানডে সিরিজেও হয়, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ভিলিয়ার্সহীন দক্ষিণ আফ্রিকা আবারও বাংলাদেশকে ঝেঁকে ধরবে। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা জ্বালানি শক্তি যেন পেয়ে গেল। আর বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবে হতাশায় ডুবছে। সেই হতাশা ক্রিকেটারদের ঘিরেও ধরছে নিশ্চয়ই। যদি তাই হয়, তাহলে সেই হতাশা ওয়ানডে সিরিজে প্রভাবও ফেলতে পারে। দুই ওয়ানডের দল এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। ইনজুরি কাটিয়ে বিশ্বকাপের পর এনামুল হক বিজয় আবার ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছেন। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মাঝখানে ইনজুরির জন্য ভারতের বিপক্ষে সিরিজে না খেলতে পারলেও এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে আছেন। এ দুইজন টি২০ দলে ছিলেন না। দুইজনকে খুব বেশি হতাশায় ঘিরেও ধরবে না। তবে বাকিদের অবস্থা খারাপই হওয়ার কথা। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা টি২০ সিরিজ শেষে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘আমি জানি না কেন এমন হলো।’ তেমনটি ওয়ানডেতেও দেখা গেলে বিপদই আছে। অন্তত একটি ওয়ানডে জেতার যে খায়েশ মনের ভেতর লুকিয়ে আছে, সেই আশাও হতাশায় পরিণত হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা না কি স্পিন ভাল খেলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি টি২০ ম্যাচে কী দেখা গেল? স্পিনেই কাত হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। মাশরাফির কণ্ঠে তাই হতাশাই ঝড়েছে, ‘ব্যাখ্যা করা কঠিন। প্রতি ব্যাটসম্যান আলাদা করে হয়ত তাদের কথা বলতে পারবে। উত্তর যেহেতু জানি না, আমি ধরে নিচ্ছি, নিয়মিত যেহেতু উইকেট পড়েছে, লক্ষ্যও ছিল বড়, ব্যাটসম্যানদের ওপর তাই চাপের সৃষ্টি হয়েছে। চাপেই হয়ত ব্যাটসম্যানরা উইকেট দিয়ে এসেছে।’ এখন ওয়ানডেতে খেলার ফর্মুলাও অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে আছে। সেটিই যেন জানালেন, ‘আমাদের আরও ঠা-া মাথায় খেলতে হবে। ওরা আমাদের বিপক্ষে কঠিন ক্রিকেটই খেলবে, আমাদের খুব চিন্তা ভাবনা করে খেলতে হবে।’ সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে আর এ সবের পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে না বলেও বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন মাশরাফি, ‘আমার এখনও মনে হয় না যে খুব বেশি কিছু হয়ে গেছে। আমরা যদি একটি দল হিসেবে খেলতে পারি, মানসিক দিকগুলো ঠিক রাখতে পারি, তাহলে আমার বিশ্বাস, ওয়ানডেতে আমরা স্বরূপে ফিরতে পারব।’ এখন সেই অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে। যে ফরমেটে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভাল খেলে, সেই ওয়ানডের মিশন এখন বাংলাদেশের সামনে।
×