ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক বেচাকেনা

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৯ জুলাই ২০১৫

বরিশালে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক বেচাকেনা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে একদিকে যেমন তৎপর হয়ে উঠেছে মাদক বিক্রেতারা, তেমনি অপরদিকে মাদক নিমূর্লে দিনরাত অভিযান অব্যাহত রেখেছেন আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাদকের ভয়াবহতা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লেও ঈদ ও পুজোর উৎসব এলেই এর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যে কারণে ঈদ উপলক্ষ্যে শুরু হয়েছে মাদক বিক্রেতাদের তৎপরতা। সূত্র মতে, পাইকারী মাদক বিক্রেতারা এলাকার প্রভাবশালী কতিপয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযান চালাতে গিয়ে অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয়। এ অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে হাত বাড়ালেই মুড়ি মুড়কির মতো পাওয়া যায় হেরোইন, গাঁজা, মদ, ফেন্সিডিল, মরফিনসহ মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট। সূত্রে আরও জানা গেছে, বিভিন্ন নেশাকে টপকে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী ও পেশার মাদক সেবীদের কাছে বর্তমানে সর্বোচ্চ স্থান দখল করে নিয়েছে ইয়াবা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে বরিশাল নগরী থেকে শুরু করে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বানারীপাড়া, মুলাদী, হিজলা, বাকেরগঞ্জসহ দশটি উপজেলা ও বিভাগের ছয়টি জেলা শহরসহ প্রতিটি উপজেলাগুলোতে ঈদের নেশা মজুদ করতে এখন তৎপরতা শুরু করেছে প্রায় সহস্রাধিক খুচরা মাদক বিক্রেতারা। সূত্রে আরও জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে নিরাপদ রুট হিসেবে মাদক বিক্রেতারা দীর্ঘদিন থেকে নিরাপদে জেলার মধ্যকার গৌরনদী-গোপালগঞ্জ ভায়া কোটালীপাড়া-পয়সারহাট মহাসড়কটি ব্যবহার করে আসছে। এছাড়াও জেলার প্রায় একডজন পাইকারী বিক্রেতা অন্তরালে থেকে ঈদ উৎসবে মাদক সরবরাহ করে গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাইকারী মাদক বিক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের হাতে মাদক পৌঁছে দিতে অভিনব পন্থা হিসেবে ব্যবহার করছে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, বৃদ্ধা, রিক্সা কিংবা ভ্যানচালক, বিভিন্ন পরিবহন ও লোকাল বাসের সুপারভাইজার-হেলপার, মোটরসাইকেলের ড্রাইভারসহ নানা পেশার মানুষকে। অপরদিকে র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা ধারাবাহিক অভিযান অব্যহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে ছোট-বড় মাদকের অসংখ্য চালান আটক হয়েছে। রাজশাহীতে রাতারাতি ধনকুবের শতাধিক মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে বন্ধ করা যাচ্ছে না মাদকের ভয়াল থাবা। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক প্রতিরোধে অভিযান চালালেও কমছে না মাদকের আগ্রাসন। ঈদকে সামনে রেখে এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকের ব্যাপকতা। রাজশাহীর সীমান্তবর্তী তিন থানা গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ আর নাটোরের লালপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এখন মাদকের ‘হাট’। পদ্মা আর মহানন্দা নদী পেরিয়ে সহজেই ওপার (ভারত) থেকে বানের পানির মতো আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। গত ১৫ দিনে এ সব সীমান্ত দিয়ে অন্তত হাজার কোটি টাকার মাদক প্রবেশ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। এক সময় এ অঞ্চলের সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল আসলেও হালে মাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে হেরোইন আর ইয়াবা। তবে ফেন্সিডিলের পাচারও কমেনি। ফেন্সিডিলের পাশাপাশি সবচেয়ে এখন বেশি আসছে ইয়াবা আর হেরোইন। রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকার মধ্যে হেরোইন আর ইয়াবা রাজ্যে হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিত হয়েছে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা। শুধু মাদকের ব্যবসা করে রাতরাতি ধনকুবের হয়ে গেছে এ উপজেলার শতাধিক মানুষ। হত দরিদ্র থেকে ধনকুবের বনে যাওয়া এসব মাদক সিন্ডিকেটের হাতের মুঠোয় পুলিশ প্রশাসন। তাই মাদক বিক্রি ও চোরাচালন বন্ধে মাঝে মাঝে মৌসুমী অভিযান চালালেও মূল হোতারা থাকে সমসময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চোরাই পথে গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা সীমান্ত দিয়ে খুব সহজে বড় বড় চালান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এরপর সীমান্ত লাগোয়া গ্রামে হাত বদল হয় এসব চালান। এরপর পদ্মা-মহানন্দা পাড়ি দিয়ে গোদাগাড়ী থেকে মাদকের বড় বড় চালান পাচার করা হয় দেশের অভ্যন্তরে।
×