ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের সিভিল টিম ও সোর্স ব্যস্ত এখন তোলাবাজি চাঁদাবাজিতে!

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১২ জুলাই ২০১৫

পুলিশের সিভিল টিম ও সোর্স ব্যস্ত এখন তোলাবাজি চাঁদাবাজিতে!

শংকর কুমার দে ॥ ‘সাদা পোশাকের সিভিল টিম’ ও ‘পুলিশ সোর্সে’র দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে মারাত্মক। ঈদ সামনে রেখে থানা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে তোলা আদায় ও চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধী কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। তাদের কথা মতো তোলা ও চাঁদাবাজির টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। রাজধানীর ৪৯ থানার বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অপরাধের অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে ডিএমপিতে। এসব অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি ফুটপাথে হকার ও দোকানদের কাছে চাঁদাবাজি করছে মূলত পুলিশের সোর্স। তাদের সহায়তা করছে সাদা পোশাকধারী সিভিল টিম পরিচয়দানকারী এক শ্রেণীর পুলিশ। সারাদিন কেনা-বেচার শেষে তারাই ফুটপাথ থেকে তোলা তোলে। অভিযোগ রয়েছে তোলা টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে তা সিঁড়ি বেয়ে বহু উঁচু তলায় চলে যায়। পুলিশের সোর্সরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথের দোকান থেকে চাঁদাবাজি, জমিদখল নিয়ে মধ্যস্থতা, এমনকি কাঁচামালের আড়ত থেকেও এরা চাঁদাবাজি করছে। অনেক সময় তারা নিজেদের পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সোর্সরা পরিচয় দিচ্ছে থানার ‘ওসির ক্যাশিয়ার’ বলে। আসামিদের পক্ষ নিয়ে পুলিশের নাম পরিচয় ব্যবহার করে বাদীকে হুমকি দেয়। আবার অনেক সোর্স কোন ব্যক্তিকে আটক করে থানায় আনলে মোটা অংকের টাকা মিলবেÑ এমন তথ্যও সাব-ইন্সপেক্টরদের দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগে জানা গেছে, রাজধানীর ১০, দক্ষিণ খিলগাঁওয়ের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন দুই পুলিশ সোর্সের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী একজন মহিলা। যে দুই পুলিশ সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের নাম জলিল ও খাদেম। খিলগাঁও থানার পুলিশ সোর্স বলে পরিচয় দেয় তারা। অভিযোগকারিনীর অভিযোগ, তার স্বামীর কাছ থেকে ওরা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তার স্বামী চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা জানায় যে, ইয়াবা দিয়ে তার স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হবে। এ ঘটনার কিছু সময় পর খিলগাঁও থানা থেকে সাদা পোশাকের সিভিল টিম এসে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তিনি থানায় যোগাযোগ করে সোর্সদের কাছে ২০ হাজার টাকা দেয়ার পর তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ধরনের একটি অভিযোগ করা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অফিসে। নিরাপত্তার অভাবে অভিযোগকারিনী তার বা তার স্বামী পরিচয় প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে অপরাধী ও দুর্বৃত্তরাও সাদা পোশাকের সিভিল টিমের পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপরাধী কার্যক্রম চালাচ্ছে। আবার আসল পুলিশেরও এক শ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ সদস্যরাও সাদা পোশাকের পুলিশের সিভিল টিমের সদস্য পরিচয় দিয়ে অপরাধী কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষজনের টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায়ই পুলিশ সোর্সদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। ঈদ খরচা তুলতে তারা এখন বেপরোয়া। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, সাদা পোশাকের সিভিল টিমের এখন তৎপরতা চালাতে দেয়া হয় না। গোপনে কেউ পুলিশ পরিচয়ে এ ধরনের অপরাধী কার্যক্রম চালালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধীদের শনাক্ত করে অপরাধ উদঘাটনে তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকায় সোর্স ব্যবহার করেন। পুলিশ সোর্সদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বাদ দেয়া হয়। নেয়া হয়ে থাকে আইনী ব্যবস্থা। সাধারণত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ সোর্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে সাদা পোশাকের পুলিশের সিভিল টিম ও সোর্স পরিচয়দানকারী কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধী কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
×