ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল যুগের ঈদ শপিং

মেধা ও মননের সঙ্গে আধুনিকতা- প্রযুক্তির মিশেল

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১২ জুলাই ২০১৫

মেধা ও মননের সঙ্গে আধুনিকতা- প্রযুক্তির মিশেল

সমুদ্র হক ঈদের আর বেশি বাকি নেই। ঈদ সামনে রেখে এখন সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। থ্রিপিস, টুপিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি কেনাকাটা প্রায় শেষ। জুতো কেনাও শেষ। আজকাল ঈদের কেনাকাটায় এসেছে পরিবর্তন। দোকানে শোরুমে শপিংমলে গিয়েই শুধু শপিং হয় না। ডিজিটাল যুগে ইলেকট্রনিক শপিং শুরু হয়েছে। ঘরে বসে কম্পিউটারে অথবা স্মার্ট ফোনে পছন্দের জিনিস অর্ডার দিয়ে মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানোর সর্বাধুনিক ব্যবস্থায় ঘরেই জিনিস চলে আসে। প্রবীণরা বলেন, ‘কলি... ঘোর কলির জমানা।’ ঈদের আনন্দের পালাটিও যন্ত্রে প্রবেশ করেছে। বগুড়ায় বহুতল ভবনের তাপানুকূল শপিংমলে ঢুকলেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। মনে হয় বিদেশের কোন শপিং মল বা শোরুমে ঢুকেছি। বাংলাদেশ কত দ্রুত উন্নতি করেছে যা দেখে স্বপ্নের মতো মনে হবে। ষাটের দশকে সুদূরপ্রসারী ভাবনায় গুণীজনরা বলতেন, আজ যা স্বপ্ন কালই তা বাস্তব। একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের মধ্যভাগে চোখ মেলে চারদিকে যা দৃশ্যমান তাতে সেদিনের স্বপ্নই আজ বাস্তবতায় রূপ পেয়েছে। বগুড়ায় জাপানী নামে মিমোসা শপিংমলে ঢুকলে দেখা যায় বাহাড়ি ইমিটেশন এবং শিশু থেকে সকল বয়সী মেয়েদের সাজের সরঞ্জাম। কি নেই সেখানে! মেয়েদের গয়নার বাহারে চোখ ফেরানোই যায় না। কোনটি ভারতীয়, কোনটি চীন দেশের, কোনটি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের- দেখে বোঝার উপায় নেই। এর মধ্যে একজন বললেন ইমিটেশনেরও ইমিটেশন আছে। দেশের পোশাক শিল্প যেমন বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে, ইমিটেশনও তারচেয়ে বড় সুনাম বয়ে আনবে। ভারত, চীন, সিঙ্গাপুরের ডিজাইনের চেয়ে আকর্ষণীয় ডিজাইনের গয়না তৈরি হচ্ছে ঢাকা বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে দেশের প্রায় প্রতিটি স্থানে নকল নয়, বিভিন্ন দেশের ইমিটেশন, পাদুকা, শাল, কাপড়, মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগসহ নানা জিনিস তৈরি হচ্ছে বিদেশী ডিজাইনে। বিদেশী জিনিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা তৈরি হচ্ছে। দেখে আঁচ করা কঠিন কোনটি ইতালির কোনটি চীনা আর কোনটি বাংলাদেশের। শিল্পীরা এতই দক্ষ যে একবার দেখলেই ডিজাইনে মেমোরিতে ধারণ করে। পাশেই কম্পিউটার তো আছেই। পাদুকা শিল্পের কারিগররা তো আরেক কাঠি সরেস। ইতালি বা সিঙ্গাপুরের যে জুতার দাম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা, একই রকমের ফিনিশিংয়ে পাদুকা তৈরি করে দেবে দুই থেকে ৫ হাজার টাকায়। এখানে সোল উপরের কভার সবই পাওয়া যায়। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মতো শুধু সংযোজন করা। ইমিটেশন দেখে তো এখন আর বোঝাই যায় না কোনটি কোন দেশের। নেইল পলিশ থেকে সবই উন্নতমানের। এক সময় মেয়েরা বিছা ও পায়ে নূপুর পরত। পায়ের নূপুর অনেক আগেই ফিরে এসেছে। তরুণীদের অনেকেই পায়ে নূপুর পরে। তবে বিছার ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে। বিশেষ করে ঈদ পার্বণে বিছা কেনার হিড়িক পড়ে যায়। একটা সময় গ্রামে গঞ্জে লোকজ ঐতিহ্যে বিছাকে নিয়ে কত সুর তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিয়ের গীতে বিছাকে নিয়ে গাঁয়ের বধূরা গীত গাইত। বগুড়া অঞ্চলের এমন একটি গীত “বাউলা হাটোতি বিছার দোকান বসাইছে দামান্দগো বিছা কিনা দিলে না...(বাউলা হাটে বিছার দোকান বসেছে জামাই তুমি বিছা কিনে দিলে না)”। অনেক গ্রামে এখনও জামাইকে ‘দামান্দ’ বলা হয়। নিকট অতীতে বিয়ের সময় কনেকে বিছা ও বিশেষ ধরনের চুরি কিনে না দিলে ঈদের কেনাকাটায় নববধূর জন্য দামান্দের বিছা কেনা ছিল বাধ্যতামূলক। মিমোসা, রংগনের সেলসম্যানরা বললেন, ইমিটেশনে চুড়ি, রিং, নেকলেস, ব্রেসলেটের এমন কিছু ডিজাইন আছে যা দেখে মনে হবে প্রাচীন আমলের সেই নকশা যেগুলো সাধারণত জাদুঘরে দেখা যায় সেগুলোই ফিরে এসেছে। এইসব ডিজাইন মনে করিয়ে দেয় পুরনো দিনের কথা। ইতিহাসের নিয়ম, ইতিহাস নিজেই নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এবারের ঈদের কেনাকাটা দেখে মনে হয় ইতিহাসের ধারাবহিকতায় শিকড় গভীরে রেখে এর ওপর আধুনিকতার ছাপ লেগেছে। যে আধুনিকতা প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে মানুষের মন ও মননকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এবার ঈদ যেন সে কথাই বলছে।
×