ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনলাইন ঈদ-বাজার

অন্য এক ঈদ শপিং, নেই কোন যানজট, পছন্দের পণ্য চলে আসছে হাতে

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৩ জুলাই ২০১৫

অন্য এক ঈদ শপিং, নেই কোন যানজট, পছন্দের পণ্য চলে আসছে হাতে

রহিম শেখ ॥ ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে কেনাকাটা জমে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে অনলাইন ক্রেতার সংখ্যা। বাহারি পোশাক, জুতো থেকে শুরু করে দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকস, টুপি, আতর, জায়নামাজ সবই এখন অনলাইনে বেচাকেনা হচ্ছে। যানজট এড়িয়ে যে কেউ ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করে শত শত পণ্য থেকে বাছাই করে পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারছেন। তাই ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই চাঙ্গা হয়ে ওঠছে অনলাইনে বিক্রির সাইটগুলো। গতবছরের তুলনায় এবছর তাদের ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দেশের নামী দামী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। মাত্র কয়েক বছর আগেও ঈদ শপিং মানেই ছিল ছোটবড় বিভিন্ন শপিংমল, বিপণি বিতান ও ফ্যাশন হাউসে ঘুরে ঘুরে ব্যতিক্রমধর্মী পণ্য খুঁজে বের করে কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে ঈদ শপিংয়ে নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে। ক্রেতাকে এখন আর যানজটে আটকে থেকে, মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ক্লান্ত ও গরমে ঘেমে অস্থির হতে হচ্ছে না। আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল হলেই যে কেউ ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করে শত শত পণ্য থেকে বাছাই করে পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারছেন। শুধু তাই নয়, পণ্যটি সংগ্রহ করতে ক্রেতাকে এখন আর বিক্রেতার কাছে যেতেও হচ্ছে না, ইচ্ছে করলে ঘরে বসেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। যানজট ও সময় উভয় বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষ অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে শপিংমল, বিপণি কেন্দ্র ও ফ্যাশন হাউসের মতো অনলাইন শপিং মার্কেটও জমে উঠেছে। জানা গেছে, দেশে দুই ধরনের অনলাইন সেবা চালু আছে। এক ধরনের সেবা পেতে আপনাকে পণ্য পছন্দ করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আগে মূল্য দিতে হবে। পরে হাতে পাবেন পণ্যটি। অন্য প্রকার সেবা আপনাকে পণ্য পৌঁছে দিয়ে মূল্য নিয়ে যাবে। পণ্যভেদে কিছু পরিবহন খরচও আপনার কাছ থেকে নেবেন অনলাইন বিক্রেতারা। তবে পণ্যের দাম যত বেশি পরিবহন খরচও তত কম। অনলাইনে যেমন দেশের মধ্যে আপনি পণ্য কিনতে পারবেন তেমনি বিদেশেও পছন্দের পণ্য পাঠাতে পারবেন। ব্যাগ, ঘড়ি, জুয়েলারি যদি বন্ধুকে দিতে চান তাহলেও অনলাইনে তা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ আছে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত আলভিনা আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ব্যস্ততার কারণে শপিং করার খুব একটা সময় হয়ে ওঠে না। যানজট আর ভিড় ঠেলে মার্কেটে যেতেও ইচ্ছা করে না। তাই অনলাইনে অর্ডার দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য হাতে পেয়ে যাই। অনলাইনের বিভিন্ন সাইট থেকে গত সপ্তাহে চারটি থ্রিপিস কিনেছেন তিনি। অনলাইন শপিংয়ের আরেক ক্রেতা হাবিবুল্লাহ জিসান জনকণ্ঠকে বলেন, অনলাইনের দুটি জনপ্রিয় সাইট থেকে ঈদের কেনাকাটায় এবার দুটি পাঞ্জাবি ও দুটি শাড়ি কিনেছি। বাসায় বসে অনলাইনে এসব কাপড় পরিবারের সবার পছন্দেই কেনা হয়েছে বলে তিনি জানান। অনলাইন বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে তাদের ঈদের পোশাক, জুয়েলারি, জুতো, ব্যাগ, কসমেটিকস প্রভৃতি পণ্যের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। তারা আরও জানান, সাধারণত করপোরেট শ্রেণীর মানুষ বেশি অনলাইনে কেনাকাটা করলেও এখন তা অনেক শ্রেণীর মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখন এ ধরনের ওয়েবসাইটের বাইরেও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলেও বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসের। ফেসবুকে এমন একটি পেজের নাম স্টাইল ওয়ার্ল্ড কালেকশন। পেজটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মেয়েদের পোশাক ছাড়াও পাওয়া যায় ছেলেদের পোশাকও। এই একই নামে গুলশানের একটি শপিংমলে তাদের দোকান রয়েছে। স্টাইল ওয়ার্ল্ডের মালিক পলি জানান, ২০০৫ সাল থেকে তিনি ওই শপিংমলে দোকান দিয়েছেন। বেচাকেনা খুব একটা খারাপ ছিল না। তবে গত দুবছর হলো তিনি ফেসবুকে একটি পেজ খুলে তার দোকানের সব পণ্যের ছবি আপলোড করাতে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। অনলাইনে বেচাকেনার অসংখ্য ওয়েবসাইটেও চলছে ঈদের শপিং। তেমনই একটি ওয়েবসাইট দারাজ ডট কম ডট বিডি। দারাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, সারাবছরই তারা অনলাইনে কেনাবেচা করেন। কারণ তাদের কোন আউট লেট নেই। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিনই বাড়ছে তাদের বিক্রি। অনলাইনের বিভিন্ন সাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের স্যালোয়ার কামিজ আর ছেলেদের পাঞ্জাবি। এছাড়া টি-শার্ট, আতর, টুপি এমনকি খেজুর। আর গত ঈদের চেয়ে এবার কেনাবেচা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানালেন অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। আড়ং চীফ অপারেটিভ অফিসার মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে অনলাইনে আড়ং পণ্য কেনাকাটা করা গেলেও ডেলিভারি তারা শুধু দেশের ভেতরেই দিয়ে থাকেন। তবে অনলাইনে কেনাকাটার অর্ডারের ৫০ শতাংশই দেশের বাইরে থেকে হয় বলে চলতি বছরের শেষে তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। আব্দুর রউফ আরও বলেন, এখন প্রতিদিন তাদের অনলাইনে পঞ্চাশের বেশি পণ্য কেনাবেচা হয়। যার মূল্য দাঁড়ায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। তবে প্রতিদিনই তাদের অর্ডার বাড়ছে বলে জানান তিনি। এসব পণ্য পাঁচ হাজার টাকা মূল্যমানের নিচে হলে ৮০ টাকা চার্জ নিয়ে ঠিকানা মতো পৌঁছে দেয়া হয়। আর পাঁচ হাজার টাকা উর্ধের পণ্য পৌঁছাতে কোন চার্জ লাগে না। তিনি বলেন, ক্রেডিটকার্ড, ভিসা ও মাস্টার কার্ড ও বিকাশের মাধ্যমে আমরা টাকা গ্রহণ করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দেই। অপরদিকে অনলাইনে বেচাকেনার অসংখ্য ওয়েবসাইটেও চলছে ঈদের শপিং। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিস-এর সভাপতি ফাহিম মাশরুর জানান, অনলাইনে সবচেয়ে বড় সুবিধা ক্রেতারা যেটা পাচ্ছেন, সেটা হলো ঘরে বসে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই পণ্য পেয়ে যাচ্ছেন। আর অনেক ক্ষেত্রে এই দাম শপিংমলের দামের থেকেও কম থাকায় ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রে ১০০০ টাকার নিচে যেসব পণ্য রয়েছে সেসব পণ্য মানুষ বেশি কিনছে বলে তিনি জানান। প্রথমে এটি রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক থাকলেও এখন বড় বড় শহরের মানুষও ইন্টারনেটে কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, এবারে ঈদ উপলক্ষে ইন্টারনেটে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে।
×