ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিনটি করে উইকেট, রুবেল হোসেন দু’টি

বল হাতে নাসির-মুস্তাফিজ ভেল্কি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৩ জুলাই ২০১৫

বল হাতে নাসির-মুস্তাফিজ ভেল্কি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ কিছুদিন আগে দলে জায়গা পাওয়াটাই কঠিন হয়ে উঠেছিল অলরাউন্ডার নাসির হোসেনের। বাজে নৈপুণ্যের জন্য বাদ পড়েছিলেন দল থেকে। অথচ তার আগে পর্যন্ত ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক ছিলেন টানা দেড় বছর। নিজেকে বরাবরই একজন ব্যাটসম্যান দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে ছন্দপতনই জাতীয় দলে তার জায়গা হারানোর মূল কারণ। সেই নাসির এখন হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর বোলার। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ চলার সময় তাকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা অফস্পিনার বলে ঘোষণা করেছিলেন ওয়ানডে ও টি২০ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। গত কয়েক সিরিজেই তিনি নিয়মিত বল হাতে স্পিন জাদু দেখিয়েছেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রবিবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও দারুণ বোলিং করলেন নাসির। রিলি রুশোকে দ্রুতই বোল্ড করে ফিরিয়ে দেয়ার পর তিনি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা ফাফ ডু প্লেসিসের উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ভাল অবস্থানে নিয়ে যান নাসির। শেষে কাইল এ্যাবটকে শিকার করে সবমিলিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন তিনি এদিন মাত্র ২৬ রানে ৩ উইকেট দখল করে। আর অভিষেক সিরিজে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ঘোল খাইয়ে দেয়া পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে মোকাবেলার জন্য ভাল প্রস্তুতিই নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সে কারণে খুব বেশি ভয়ঙ্করত্ব দেখাতে পারেননি এ তরুণ দুই টি২০ ও প্রথম ওয়ানডেতে। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঠিকই জ্বলে উঠলেন সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস। দখল করলেন ৩ উইকেট। একাধারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিন করার ক্ষমতা আছে নাসিরের। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নাসিরের বোলিংয়ের দিকে তেমন মনোযোগ দেননি কেউ। নিজেও বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়েই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে মাঝে মাঝে বোলিং করলেও তেমন সফল হতে পারেননি। সে সময় নিজেকে মূলত একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেই দাবি করেছিলেন নাসির। এমনকি ব্যাট হাতেও দারুণ ঝলক দেখিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং অলরাউন্ডারই হয়ে ওঠেন। কিন্তু মাঝে ব্যাটে রান না পাওয়ার কারণে দল থেকেই বাদ পড়েছিলেন। তবু বরাবরই ব্যাটসম্যান হিসেবেই দাবি করেছেন নিজেকে নাসির। কারণ আন্তর্জাতিক ম্যাচে খুব বেশি আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি কখনও বল হাতে। কিন্তু বাদ পড়ার পর থেকেই যেন বোলার হয়ে উঠছিলেন নাসির। ঘরোয়া আসরগুলোয় নিয়মিত বল হাতে চমক দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। এবার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের ১৬ ম্যাচে ১৩ উইকেট দখল করেন। ব্যাট হাতেও রানে ফেরার পর বিশ্বকাপের দলে সুযোগ করে নেন তিনি। বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে খেলে বোলিং করে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ওই ধারাবাহিকতা বিশ্বকাপ শেষে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে দুই সিরিজেই ধরে রেখেছেন বল হাতে। দু’দলের বিপক্ষে নিয়মিত বোলিং করে ৬ ম্যাচে ৪ উইকেট শিকার করেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে তিন উইকেট শিকার করেন দারুণ বোলিং করে। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুই উইকেট শিকারের পর মাশরাফি বলেছিলেন, ‘নাসির এই মুহূর্তে আমাদের দলের অন্যতম সেরা অফস্পিনার।’ কিন্তু আবারও নাসির নিজেকে একজন ব্যাটসম্যান বলেই দাবি করেন। এ বিষয়ে নাসির অবশ্য বলেছিলেন, ‘যে বনে বাঘ নেই সেখানে বিড়ালই বাঘ। এখন দলে কোন অফস্পিনার নেই, আমি আছি। সে কারণেই মাশরাফি ভাই ওইভাবে বলেছে।’ তবে নিজের বোলিং ধারটা দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও দেখালেন নাসির। রবিবার এ ম্যাচটা ছিল পুরো নাসিরময়। দারুণ ফিল্ডিং এবং একটি ক্যাচও নিয়েছেন তিনি। রুশোকে ৪ রানেই বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। এরপর দারুণ খেলতে থাকা প্লেসিসকেও (৪১) সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। শেষদিকে কাইল এ্যাবটকে আউট করে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের নজির সৃষ্টি করেন নাসির। এর আগে ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। এবার ৮ ওভার বোলিং করে ২৬ রান দিয়ে শিকার করলেন ৩ উইকেট। অভিষেক সিরিজে ১৩ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন মুস্তাফিজ। তাই সবার দৃষ্টি ছিল তার দিকে। ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ ওয়ানডে অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী। কোনভাবেই ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ কোনভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারেনি মুস্তাফিজের ভয়ঙ্কর কাটার ও সুইংয়ের সঙ্গে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা স্বাভাবিকভাবেই পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে দারুণ সাবলীল। তাই মুস্তাফিজের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছিলেন সবাই এবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজে। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরাও তাকে বেশ ভালভাবেই বিশ্লেষণ করে এবং মোকাবেলার ফন্দিফিকির করে এসেছে তা দুই টি২০ ও প্রথম ওয়ানডে দেখেই পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল। কারণ মুস্তাফিজের ওপর চড়াও হওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। দুই টি২০ ম্যাচে ১ উইকেট পেয়েছিলেন। প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ মিতব্যয়ী বোলিং করে প্রোটিয়াদের চেপে ধরলেও উইকেট পাননি। অনেকেই ভেবেছিলেন খারাপ সময় বুঝি দ্রুতই আসতে শুরু করল এ তরুণের। কিন্তু সেটা সত্য হলো না। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই জ্বলে উঠলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বিপর্যয়ের সূত্রপাতটা তিনিই করে দিলেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে ওপেনার কুইন্টন ডি কককে সাজঘরে ফেরত পাঠান মুস্তাফিজ। এরপর জেপি ডুমিনি ও কাগিনো রাবাদার উইকেট তুলে নিয়ে শিকার করলেন তিন উইকেট। ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ৩৮ রান দিয়েছেন।
×