ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিত্তশালীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

জলাধার ও লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণ করবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ জুলাই ২০১৫

জলাধার ও লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণ করবেন না

বিডিনিউজ ॥ জলাধার ও লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, গুলশান, বনানী, বারিধারা লেক সম্পর্কে একটু কথা না বলে পারছি না। গুলশান এলাকাটা একটা গ্রাম ছিল। এটা যখন আবাসিক এলাকা করা হয় তখন বন্যায় কী পরিমাণ পানি আসতে পারে, লেকে সেই পরিমাণ পানির যাতে ধারণক্ষমতা থাকে; সেই বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েই এই লেকটি, এখন আপনারা যা দেখেন তা দ্বিগুণেরও বড় ছিল। দুর্ভাগ্যবশত বারবার ওই লেকের পাশগুলো ভরাট করে করে আবাসিক ভবন করতে করতে লেকের সাইজটা, যে পরিমাণ চওড়া ও গভীরতা সেটা হারিয়ে গেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, গুলশান এলাকায় কারা থাকে? নিজেই এর উত্তরে বলেন, উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত, সমাজের সব থেকে উন্নতমানের মানুষগুলো। কিন্তু তাদের বাড়িগুলো যখন তৈরি করেন, তাদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্যান্য যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করেন, আমি মনে করি পরিবেশসম্মত না। এমনকি অনেকে হাসপাতাল তৈরি করলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না রাখার বিষয়টি তুলে ধরে এটাকে সব থেকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলোতে নজর দিতে বলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ধানম-ি লেকের সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, ধানম-িরও প্রায় একই অবস্থা ছিল। প্রথমবার আমরা যখন সরকারে আসি তখন সংস্কার করি। সমস্যা দেখা দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। প্রত্যেক বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন লাইন লেকের ভেতরে। তাদের পরিবেশটা কীভাবে ভাল থাকবে আপনারা নিজেরাই চিন্তা করে দেখেন। শেরে বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বরে একটি হৈমন্তী গাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গুলশান, বারিধারা ও বনানী লেকে আরও সংস্কার কাজ করতে প্রায় ২৬০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে দুটি খাল করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। আমি জানি অনেকেই ওই সব এলাকায় জমি-টমিগুলি ওইগুলি সবই নাল জমি ছিল। কিন্তু এখন নানা ধরনের বাধা কিন্তু আসে। কারণ বিত্তশালীরা, তাদের বিত্তের প্রভাব সমাজে অবশ্যই থাকে। আর সেই সঙ্গে সেই বাধাও চলে আসে। কারণ তাদের জমি হারাবার ভয়। কিন্তু আমি মনে করি যারা উচ্চবিত্ত তাদের এ বিষয়টায় আরও বেশি নজর দেয়া উচিত যাতে পরিবেশটা সংরক্ষিত হয়। শেখ হাসিনা তার সরকারের সময়ে পরিবেশ সংরক্ষণে নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলো থেকে কত টন বর্জ্য উত্তোলন করা হয়েছে এবং চারপাশগুলো আমরা কিছুটা দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। ড্রেজিং করার কাজও করে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ট্রাস্ট ফান্ডে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সরকারের বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে এক্ষেত্রে দাতা দেশগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সহায়তা না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যখনই আমরা কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই তখনই আমরা অনেক ভাল আশ্বাস পেয়েছি। অনেক ওয়াদা পেয়েছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই ওয়াদা সকলে কিন্তু পূরণ করে না। শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছুটা করেছে। বাকিদের কাছ থেকে কিন্তু তেমন কিছুই পাওয়া যায় না, বলেন তিনি। জাতীয় পরিবেশ পদক, বঙ্গবন্ধু এ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন এবং বৃক্ষরোপণে পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। শিল্প কারখানায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যারা শিল্প-কারখানা গড়ে তুলবেন সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাটাও আপনারা নিজ উদ্যোগে করবেন এই আমরা আশাকরি। বৃক্ষরোপণ অভিযান নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত ছয় বছরে দেশে মোট বনভূমির সংখ্যা ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশ হয়েছে। ২৫ শতাংশ বনভূমি করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সবাইকে অন্তত একটি করে ফলদ, বনজ ও ওষুধী গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে অন্যদেরও এ বিষয়ে উৎসাহিত করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা যদি সবাই আন্তরিক হই, তাহলে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দেশের ভূ-প্রকৃতিকে অচিরেই বদলে দিতে পারব। কারণ আমাদের দেশের মাটি খুব উর্বর। একটা বীজ ফেললেই গাছ হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিবেশ পদক, বঙ্গবন্ধু এ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন এবং বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেয়া হয়। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বরে একটি হৈমন্তী গাছের চারা রোপণ করেন শেখ হাসিনা। পরে শেরে বাংলানগরে বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপ-মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বক্তব্য দেন। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার পেলেন মুন্সীগঞ্জের ডিসি ॥ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। রবিবার দুপুরে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্ট্রিটিউশন মিলনয়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কারে ২ ভরি স্বর্ণের মেডেল এবং ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এর আগে বৃক্ষরোপণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এই পদকের জন্য তাঁকে মনোনীত করে। এবারই প্রথম এই বিষয়ে মুন্সীগঞ্জে জাতীয় পুরস্কার পেলেন। মুন্সীগঞ্জের এই জেলা প্রশাসক এর আগে প্রাথমিক শিক্ষায় দেশসেরা জেলা প্রশাসক এবং আইসিটিতে দেশের শ্রেষ্ঠ তথ্যবাতায়ন নির্মাণে শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকের পুরস্কারে ভূষিত হন।
×