ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকারের আত্মবিশ্বাস

সরকারের চলতি মেয়াদে ‘রূপকল্প ২০৪১’ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ জুলাই ২০১৫

সরকারের চলতি মেয়াদে ‘রূপকল্প ২০৪১’ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ সরকারের চলতি মেয়াদে প্রণয়ন করা হবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২৬ বছরের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে দেশকে নিয়ে যাওয়া। বিশ্ব ব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ। এই মূল্যায়ন সরকারের আত্ম-বিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই চূড়ান্তভাবে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। আর তাই বর্তমান সরকারের এই মেয়াদেই রূপককল্প-৪১ প্রণয়ন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী সামনে রেখে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। এই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে- কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন এবং সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন। এ জন্য বিদ্যুত, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের অবকাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারীভাবে এসব পদক্ষেপের ফলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের কাতারে শামিল হতে সক্ষম হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট ঘোষণায় জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার তার স্বপ্নের দিগন্ত আরও প্রসারিত করেছে। ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহন এবং মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় দেশপ্রেমিক সকল রাজনৈতিক দল স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, বিরত থাকবে সহিংসতা ও নাশকতার মতো সকল জনবিরোধী কর্মকা- থেকে। তিনি বলেন, তাদের দায়িত্বপূর্ণ আচার-আচরণ এবং পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার মাধ্যমে প্রসার ঘটবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির, নিশ্চিত করবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ-যাদের শ্রমে-ঘামে ক্রমশ মজবুত হয়ে উঠছে আমাদের অর্থনীতি। জানা গেছে, মাথাপিছু জাতীয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন দেশ বা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ৪টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যদিও বিশ্ব ব্যাংক এ্যাটলাস পদ্ধতিতে পরিমাপকৃত মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ভিত্তিতে এটা নির্ধারণ করে থাকে। এই হিসেবে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের অর্থনীতি, যেখানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলারের উপরে কিন্তু ৪ হাজার ১২৫ ডলারের নিচে। উচ্চ মধ্য আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে হলে মাথাপিছু জাতীয় আয় হতে হবে ৪ হাজার ১২৫ ডলারের উপরে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের নিচে। আর উচ্চ আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের উপরে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরই রূপকল্প-২১ ঘোষণা করেছিল। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্যতা কমিয়ে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত মিলিনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল বা এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঘোষণা অনুযায়ী এমডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ করে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিক্ষা ও স্যানিটেশনে দ্রুত সফলতা এসেছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয়। যার কারণে বিশ্ব ব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ। রূপকল্প-২১ এর হাত ধরে এবার রূপকল্প-৪১ প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের চলতি মেয়াদ অর্থাৎ ২০১৯ সালের মধ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’ প্রণয়ন করা হবে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে একটি ধারণা দেয়া হবে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার পরিকল্পনা ॥ গত ২০১২ সালের মধ্যে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বর্তমান সরকার সফল হয়েছে। রূপকল্প ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে আরও কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজগুলো এখন পূরণ করা হবে। আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে গৃহীত অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুত চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ২০২১ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নিয়ে আসা, দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে বলে সরকার আশা করছে।
×