ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সম্প্রসারিত হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ, আসতে পারে নতুন মুখ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ জুলাই ২০১৫

আজ সম্প্রসারিত হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ, আসতে পারে নতুন মুখ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বর্তমান সরকারে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত হচ্ছে আজ। বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভায় আজ ক’জন নতুন মুখ শপথ নেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে। সোমবার দিনভর মন্ত্রিসভার রদবদল, কেউ বাদ পড়ছেন- এমন গুঞ্জন চললেও রাতে একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’জন মন্ত্রী নানা কারণে বিতর্কিত হওয়ায় তাঁদের বাদ দেয়ার খবর চাউর হলেও এ যাত্রায় তাঁরা বাদ না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নতুন চার নতুন মুখ শপথ নিতে পারেন, যাঁদের মধ্যে একজন রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য। নানা সূত্রেই জানা গেছে, আজ মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রামের ত্যাগী নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য ও নাট্যাভিনেত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম শপথ নিচ্ছেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন এটিও প্রায় নিশ্চিত। দিনভর গুঞ্জন ছিল, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন। কিন্তু রাতে একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে আভাস পাওয়া গেছে, এ যাত্রায় এমন সম্ভাবনাটি কম। আদালতসহ অন্যান্য চলমান তদন্তাধীন বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে আগামী মাসে দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে মন্ত্রিসভা থেকে কেউ বাদ এবং নতুন কোন নেতা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে পারেন। আর সমস্ত কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন আর কারা মন্ত্রিত্ব হারাচ্ছেন এ নিয়ে সোমবার সর্বত্রই ছিল নানা গুঞ্জন। খোদ শাসক দল আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতার আলাপচারিতায় এ বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকলেও মন্ত্রিত্ব হতে আগ্রহী অনেক নেতাই দিনভর জানার চেষ্টা করেছেন তাঁদের নাম নতুন তালিকায় রয়েছে কিনা। আবার নানা কারণে বিতর্কের মধ্যে পড়া ক’জন মন্ত্রীও তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহলে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করেছেন বাস্তবে তাঁদের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি জনকণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাঁকে টেলিফোন করে আজ মঙ্গলবার বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তারানা হালিমও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে শপথ গ্রহণের জন্য টেলিফোন প্রাপ্তির কথা জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে টেলিফোন প্রাপ্তির কথা জানিয়েছেন। গুঞ্জন সত্যি হলে, নুরুল ইসলাম বিএসসি টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে তারা। মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া সম্ভাব্য নতুন সদস্যদের জীবন-বৃত্তান্ত সংবলিত ফাইলও প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বঙ্গভবন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ চূড়ান্তভাবে বলতে রাজি না হলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বঙ্গভবন সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ হতে পারে। শপথ গ্রহণ শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা রাষ্ট্রপতির দেয়া ইফতার মাহফিলে যোগ দেবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করার পর পরই মন্ত্রিসভার রদবদলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গত শুক্রবার সিলেটের এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও জানান, শীঘ্রই মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথা। কারা মন্ত্রিসভায় যোগ দিচ্ছেনÑ এ নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা শুধু জানান, মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথা তাঁরাও শুনেছেন, তবে কারা আছেন তালিকায় সে সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানেন না। বলেন, কারা মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন, কারা বাদ পড়বেনÑ এটা প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানেন। এ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটা একমাত্র তাঁরই এখতিয়ার। বর্তমান মন্ত্রিসভায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের পর ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর পদটি খালি রয়েছে। সর্বশেষ এলজিআরডি মন্ত্রিত্ব থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বাদ দিয়ে সেখানে শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রদবদলে একটি মন্ত্রণালয় হাত ছাড়া হতে পারে মোশাররফ হোসেনের। ফলে বর্তমানে দু’জন পূর্ণ মন্ত্রীর পদ খালি রয়েছে। সারাদিন গুঞ্জন ছিল, বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে দু’জন পূর্ণ মন্ত্রী ঝরে যেতে পারেন। তবে গুঞ্জনটি সত্য হওয়ার সম্ভাবনা একবারেই কম তা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে যোগাযোগ করে আভাস পাওয়া গেছে। দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় সর্বোচ্চ আদালত আপীল বিভাগের রায়ে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের মন্ত্রিত্ব থাকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে। অপরদিকে ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার মুখে পড়েন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এ দুটি বিষয়ে গণমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা চললেও দুটি বিষয়েই প্রমাণিত কোন কিছু হয়নি। সরকারী নীতিনির্ধারক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যায় কিংবা অসততার বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শুধু অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না, প্রয়োজন হয় দালিলিক প্রমাণের। এসব কারণে ওই দু’জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও দু’টি বিষয়ের একটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন, অপরটি মন্ত্রণালয়ের তদন্তাধীন। আদালত ও তদন্তের বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মায়া-কামরুলের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্তে যাবে না সরকার। শেষ পর্যন্ত যদি আদালত কিংবা তদন্তে ওই দু’জনের কেউ-ই দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে পরবর্তী মন্ত্রিসভার রদবদলে তাঁদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। দিনভর আলোচনা শেষে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে তিনজনের নাম নিশ্চিত হওয়া গেলেও নতুন মন্ত্রিসভায় যাঁদের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে জোর গুঞ্জন ছিল তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেনÑ সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আলাউদ্দিন নাছিম, র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী প্রমুখ। তবে গভীর রাত পর্যন্ত খোঁজ নিয়েও মন্ত্রিসভায় এঁদের কারোর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
×