ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে শপিং

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৪ জুলাই ২০১৫

ঈদে শপিং

ঈদে শপিং মানে আলাদা আনন্দ। ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। বাইরে বেরুলেই তা বোঝা যায়। কেউ গায়ে দেবে ফুটপাথের পোশাক। কেউবা বিলাসবহুল মার্কেটের দামী পোশাক। সবার লক্ষ্য কিন্তু একটা- ঈদে চাই নতুন পোশাক। অবশ্য মূল কেনাকাটার শুরু রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই। তাই বিভিন্ন বিপণি বিতান, দোকান, ফ্যাশন হাউস, ফ্যাক্টরি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে, দেশের বাইরে থেকে অর্ডারকৃত নতুন পোশাক, নতুন মালামাল রমজান শুরুর আগে থেকেই আসতে থাকে। বিভিন্ন বাজার, দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও আছে কেনাকাটার নানা আয়োজন। নিজের, পরিবারের সবার, সংসারের টুকিটাকি কিংবা শখের জিনিস-বেশ বড়সড় লিস্টি। জামা-জুতো, আসবাব, গহনাগাটি, গৃহস্থালি পণ্য, স্মার্টফোন। বাদ যায় না পারফিউমও। এই ক্ষেত্রে যানজট ও গরমের কথা ভেবে একটু শঙ্কিত হলেও শপিং বা কেনাকাটার শখ মন থেকে যায় না। ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ঈদ মানেই নতুন কাপড়। হাল ফ্যাশনের পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে তোলা। জমে উঠেছে ঈদের বাজার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পদভারে মুখরিত নগরীর প্রতিটি শপিংমল ও বিপণি বিতান। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার কেনাকাটায় ক্রেতা সমাগম অনেক বেশি। এবার ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মোদি কটি, কিরণমালা ড্রেস, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি। মোদি কটির চাহিদা রয়েছে সর্বাধিক। আবার মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ‘কিরণমালা ড্রেস’। কিরণমালা ভারতীয় একটি টিভি সিরিয়ালের নাম, যার নামের কাপড়টি খুব বেশি চলছে। তবে এই ঈদে কমে গেছে শাড়ি ও লেহেঙ্গার চাহিদা। কাপড়ের দোকানের পাশাপাশি ভিড় হচ্ছে জুতোর দোকানেও। রাজধানীর অভিজাত বিপণি বিতান, অভিজাত এলাকার নামী-দামী সুপার মার্কেট, সুপরিচিত চেনাজানা দোকানপাট, অলিগলি, ফুটপাথে, যেখানেই রয়েছে পোশাকের সমাহার, জুতো-স্যান্ডেল, চুড়ি, গহনা, কসমেটিক্সের দোকান সেখানেই মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। রাস্তাঘাট গাড়ির জটে যেন জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। তারপরও যেন উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। ভিড় ঠেলে, যানজট ছাড়িয়ে লোকজন ছুটছে মার্কেটে। কষ্ট কিংবা খরচ-কোনটাই যেনবা গায়ে মাখার নয়। এ কথা শুধু উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তদের জন্যই নয়, একই সঙ্গে নিম্নবিত্ত, দরিদ্রদেরও। প্রত্যেকেই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন। এটাই বাস্তবতা। রাজধানী ঢাকার ঈদ বাজারের চিত্রটা যেমন, পুরো দেশের চিত্রটা প্রায় এমনই। বিশেষ করে বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা শহরগুলোর অবস্থা প্রায় রাজধানীকে ছুঁই ছুঁই। পোশাক শিল্পে আমরা এখন অনেকটা স্বনির্ভর। শাড়ি, জুতো, স্যান্ডেলসহ আমরা নিজেরাই এখন অনেক কিছু তৈরি করছি। এসবের আভিজাত্যেও আমরা পিছিয়ে নেই। বিশ্বব্যাপী আমাদের গার্মেন্টের, তৈরি পোশাকের চাহিদা থাকলেও নিজ দেশে এর কদর তেমন একটা নেই। অথচ বিশ্বের প্রায় সব নামকরা ব্র্যান্ডের পোশাকই আমরা তৈরি করছি। আমাদের রয়েছে বিশ্ব সমাদৃত রাজশাহী সিল্ক, জামদানি, কাতান-বেনারসির মতো শাড়ি। জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে পোশাক-আশাকের যে বেচাকেনা হচ্ছে তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই বাইরের পোশাকের। ধারণা করা হচ্ছে এবার ঈদে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি পোশাক বিক্রি হবে। সেই হিসাবে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকার পোশাক নিজেদের। বাদবাকি সবই বাইরের। পরিসংখ্যানটি নিশ্চয়ই আমাদের জন্য সুখকর নয়। তাই এভাবে বিদেশী পোশাক আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব খাটাবে তা বোধ করি কারোরই কাম্য হতে পারে না। এই বোধ এবং দেশপ্রেম আমাদের জাগ্রত হলে উল্লেখিত ৩ হাজার কোটি টাকার ঈদ পোশাক-বাণিজ্যের সিংহভাগই হতে পারে আমাদের।
×