ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী মুদ্রায় রূপান্তরিত হচ্ছে পাঁচ টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৪ জুলাই ২০১৫

সরকারী মুদ্রায় রূপান্তরিত হচ্ছে পাঁচ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাঁচ টাকার নোট এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বনিম্ন মুদ্রা থাকছে না। ফলে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে’ আর দিতে বাধ্য করা যাবে না। মূল্যস্ফীতি ও ক্রয় ক্ষমতা রোধে পাঁচ টাকাকে সরকারী মুদ্রায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাঁচ টাকার নতুন নোট ইস্যু না করতে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী বছরের শুরুর দিকে অর্থ সচিব স্বাক্ষরিত পাঁচ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হতে পারে বলে জানা গেছে। পাঁচ টাকার ব্যাংক নোট সরকারী মুদ্রায় রূপান্তরিত হলে বাজারে প্রচলিত পাঁচ টাকার নোট ও কয়েন বাতিল করার প্রয়োজন হবে না। পর্যায়ক্রমে সরকার ছাপানো নতুন নোটগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু করা নোটগুলোর জায়গায় প্রতিস্থাপিত হবে। এর আগেও মূল্যস্ফীতির কারণে ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার’ সংশোধন করে ১৯৮৯ সালে দুই টাকার ব্যাংক নোটকে সরকারী মুদ্রায় রূপান্তরিত করা হয়। তার আগ পর্যন্ত এক টাকাই ছিল বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী মুদ্রা। পাঁচ টাকাকেও সরকারী মুদ্রা করতে ১৯৭২ সালের ‘বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার’ (রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮৩-১৯৭২) অর্থ বিভাগের উদ্যোগে সংশোধন করতে হবে। তারপর ট্রেজারি রুলস ও এর অধীনে বিদ্যমান সাবসিডিয়ারি রুলসগুলো সংশোধনের পরই অর্থ বিভাগ পাঁচ টাকার মুদ্রা ছাপানোর কাজ করতে পারবে। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট ও কয়েন সরকারী মুদ্রায় রূপান্তর শীর্ষক সভায় পাঁচ টাকাকে সরকারী মুদ্রা করার সিদ্ধান্ত সবার মতামতে গৃহীত হয়। চলতি বছরের ২২ জুন এ বিষয়ের একটি সার সংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, বাজারে প্রচলিত সরকারী মুদ্রা দুই টাকার নোট ও কয়েনগুলোর ক্রয়ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তাই বর্তমানে পাঁচ টাকার নোটকে সরকারী মুদ্রায় রূপান্তর করা প্রয়োজন। যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়, ১৯৭৪-৭৫ সালের এক টাকার ক্রয়ক্ষমতা ২০১৪ সালে হয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ টাকার সমান। এ অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের ঐতিহ্যের স্মারক সরকার প্রবর্তিত মুদ্রাগুলো বাজার থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিরসন ও মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট ও কয়েনগুলো সরকারের মালিকানায় নেয়া যেতে পারে। এতে সরকারের নোট ও কয়েনের অনুপাত বর্তমানের শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে এক দশমিক পাঁচ শতাংশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ পর্যায়ক্রমে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা হ্রাস পাবে। উৎপাদন খরচ বাদে বাকি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হবে। মোট অর্থের যোগান অপরিবর্তিত থাকলে দেশে মূল্যস্ফীতির কোন প্রভাব পড়বে না বলে যুক্তি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারী মুদ্রায় রূপান্তরিত হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোন সম্ভাবনা নেই। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকলে মুদ্রানীতি বিভাগ নানা কৌশল অবলম্বন করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
×