ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ জুলাই ২০১৫

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ বছরের শুরুটা হয়েছিল জয় দিয়ে। তাহলে কী বছরের শেষ ওয়ানডেতেও জয় মিলবে? তা আজই বোঝা যাবে। বেলা ৩টায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে জিতলেই বছরের শেষ ওয়ানডেতেও জয় মিলবে বাংলাদেশের। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজও জিতে যাবে মাশরাফিরা। চাপে সবসময়ই মুচড়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই প্রমাণ বার বারই মিলেছে। তাই তো তাদের বলা হয়, ‘চোকার্স’। তাহলে তো আজও মাশরাফিদের জেতার কথা! এ ম্যাচের আগে তো দারুণ চাপেই রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কন্ডিশন মানিয়ে নিয়ে নৈপুণ্য দেখানোর চাপ রয়েছে। সিরিজ হারের চাপ রয়েছে। নিজেদের সম্মান রক্ষার চাপ রয়েছে। লজ্জা থেকে বাঁচার চাপ রয়েছে। সাড়ে সাত বছর পর চট্টগ্রামের মাটিতে খেলে চ্যালেঞ্জ জয় করার চাপ রয়েছে। এত চাপ যখন দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে, তখন হারই নিয়তি হয়ে যেতে পারে। তাতে করে বাংলাদেশেরই লাভ হয়ে যাবে। জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজে হারানো হয়ে যাবে। যে দলটিকে ২০০৭ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডেতে হারানো গেছে। সেই দলটির বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বপ্নও পূরণ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ অবশ্য এরই মধ্যে এ সিরিজে সাফল্য পেয়ে গেছে। অন্তত এক ওয়ানডে জেতার যে আশা ছিল, তা পূরণ হয়ে গেছে। এমনই অবস্থা এখন দাঁড় হয়েছে, বাংলাদেশের সামনে সিরিজ জয়ের হাতছানিও দিচ্ছে। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে হারের পর প্রথম ওয়ানডেতেও ৮ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। হেসে খেলে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নিয়েছে। তাতে করে সিরিজে ১-১ সমতা এসেছে। আজ যে দল জিতবে, তারাই সিরিজ জিতে নেবে। খেলাটি আবার হবে চট্টগ্রামে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের ‘লাকি ভেন্যু’তে। যেখানে ১৫ ম্যাচ খেলে ৯টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই জয় এসেছে। বাংলাদেশ যে অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে এসেছে, তার শুরু হয়েছে এ চট্টগ্রামেই। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নবেম্বরে যে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াল, তার শুরু হয়েছে চট্টগ্রামেই। এরপর তো স্বপ্নের মতো সব হয়েছে। জিম্বাবুইয়েকে হারানোর পর পাকিস্তান, ভারতকেও সিরিজে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই চট্টগ্রামেই এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজে হারানোর জন্য নামছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পারবে সিরিজ জিতে নিতে? বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘আমরা যখন মাঠে নামি তখন তো সব ম্যাচ জেতার চিন্তা থাকে। হ্যাঁ এই ম্যাচটি সিরিজ নির্ধারণী। স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকদিন ধরে ঘরের মাঠে হারিনি। আমাদের জন্য আরেকটি সুযোগ যে ম্যাচটি ভালমতো খেলতে পারি এবং জিততে পারি। অবশ্যই বড় একটা সুযোগ। আমি বলব না অত বড় ম্যাচ। তবে আমাদের জন্য সুযোগটা অনেক বড়।’ সঙ্গে সাকিব যোগ করেন, ‘অবশ্যই পাকিস্তান ও ভারতের থেকে বড় পাওনা হবে। এর আগে তো কখনও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারাতে পারিনি। সেটাই একটা বড় বিষয়। যদি সিরিজটি জিততে পারি তাহলে অনেক বড় বিষয় হবে। এর আগে তো কখনও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজ জিততে পারিনি। আমাদের জন্য একটা দারুণ সুযোগ। আমাদের সামর্থ্য আছে জয়ের। প্রসেস ঠিক রাখতে পারলে হোমে আমাদের ভাল ফলাফল আনা সম্ভব।’ বাংলাদেশ হারলেও হারানোর কিছু থাকবে না। দল যে একটি ওয়ানডেতে জয় পেয়ে গেছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা হারতে লজ্জাই পাবে। গত বছর টানা হারতে থাকা বাংলাদেশের কাছে যদি একটি ওয়ানডে হারত দক্ষিণ আফ্রিকা, তাহলে সম্মান যেত। কিন্তু এখন বাংলাদেশ যেভাবে দিনের পর দিন জিতে চলেছে, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকাও হারতে পারে, তা ধরেই নেয়া হয়েছে। তাই বলে সিরিজে হার মেনে নিতে পারবে না দক্ষিণ আফ্রিকানরা। তা হলে লজ্জাও মিলবে। এ চাপেই না আবার ধুমড়ে মুচড়ে পড়ে প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা স্পিনার এখন ইমরান তাহির। তার কথা বার্তাতেই চাপের ইঙ্গিত। দক্ষিণ আফ্রিকা যে তৃতীয় ওয়ানডে নিয়ে বেশি ভাবছে, তাই বোঝা যাচ্ছে। তাহির ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে খেলা কঠিন বলেও জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘তৃতীয় ম্যাচটি অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুই দলই জিততে চাইবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ। কারণ, তারা নিজেদের মাটিতে খেলছে।’ সঙ্গে জয় যে বাংলাদেশও পেতে পারে, তাও জানিয়ে রাখছেন, ‘তবে আমরা চিন্তিত নই। তারা যদি ভাল খেলে, জয়টা তাদেরই প্রাপ্য। তবে আমরা কখনই পিছ পা হই না। আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম।’ তাহির আরও বলেন, ‘ক্যাম্পে খুব ভাল যাচ্ছে এবং সবকিছু ঠিকঠাক আছে। আমরা বেশ আনন্দিত। কিন্তু আমরা যখনই মাঠে যাই, নিজেরা নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিই। সব সময় যুদ্ধ করি। তৃতীয় ম্যাচেও তাই করব। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা করব। শেষ ম্যাচে কী হয়েছে কিংবা তার আগে কী হয়েছে, সেগুলো নিয়ে মোটেও চিন্তা নেই। শুধু তৃতীয় ওয়ানডে নিয়ে আমরা চিন্তিত।’ দক্ষিণ আফ্রিকানদের এ চিন্তা এখন বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেই হয়। ওয়ানডেতে ২০১৫ সালের শুরুটা হয়েছিল ম্যাচ জয় দিয়ে। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হারানো দিয়ে এই বছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ। যদি আর কোন ওয়ানডে এ বছরে আয়োজন না করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), তাহলে আজ বাংলাদেশ জিতলেই বছরের শেষ ওয়ানডেতেও জয় মিলে যাবে। তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও সিরিজ জয় হবে।
×