ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরা বাস ট্রেন লঞ্চে একই চিত্র

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৫ জুলাই ২০১৫

ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরা বাস ট্রেন লঞ্চে  একই চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঠাঁই নেই কোথায়। ঠাসা মানুষের ভিড়। পায়ে পায়ে এখন সব স্রোত যেন মিলেছে টার্মিনালগুলোতে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবখানের চিত্র একই। তিন পথেই ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। অর্থাৎ যে যেভাবে পারছেন, ছুটছেন নাড়ির টানে বাড়ি। বুধবার শবে-কদর উপলক্ষে সরকারী ছুটি। ১৬ জুলাই অফিস শেষে তিন দিনের ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি শুরু। তাই ১৫ জুলাইয়ের ছুটি নিয়ে বুধবারই বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন অনেকেই। অর্থাৎ ভিড়ের ঝক্কি এড়াতে অনেকে একটু আগে ভাগেই ছুটছেন সবাই। ১০ জুলাই যারা ১৪ জুলাইয়ের অগ্রিম রেলের টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তারা। ঈদ উপলক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো বিশেষ ট্রেন সার্ভিস বেশিরভাগই নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর রেল স্টেশন ত্যাগ করে। প্রতিটি বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পুলিশের দুই স্তরের নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে আজ থেকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ॥ সকালে কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। ফলে নির্ধারিত সময়েই প্রতিটি লঞ্চ গন্তব্যে ছেড়ে যায়। টার্মিনালে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে টার্মিনালের পরিবহন পরিদর্শক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদ তো প্রায় চলেই এসেছে। তাই টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া যদি হঠাৎ করে খারাপ হয়ে না যায়। তবে ঈদের দিন যতো ঘনিয়ে আসবে যাত্রীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে মোট ২০টি লঞ্চ ঘাট ছেড়ে গেছে। প্রতিদিন ৬০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। বেশিরভাগ লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। ছাদেও যাত্রী পরিবহন করা হয়। সদরঘাটে লঞ্চের ধাক্কায় একজনের মৃত্যু ॥ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড়ে মোঃ ইব্রাহীম (২০) নামে এক রুটি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি নৌকা করে রুটি বিক্রি করছিলেন। এমন সময় একটি লঞ্চের ধাক্কায় তিনি নদীতে পড়ে যান। পরে বিকেল ৪টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের মামা মোঃ সবুজ জানান, সদরঘাট ১৩ নম্বর প্লাটুনে এ ঘটনাটি ঘটেছে। পেছন থেকে লঞ্চ এসে তার নৌকায় ধাক্কা দেয়। এতে তিনি নদীতে পড়ে যান। ইব্রাহীমের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট থানার বাজপুর গ্রামে। মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়েছে। প্রতিটি টার্মিনালে দুই স্তরের নিরাপত্তা ॥ ঈদ উপলক্ষে বাড়িফেরা মানুষদের জন্য রাজধানীর প্রতিটি টার্মিনালে পুলিশের দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। টার্মিনালগুলোতে কেউ কালোবাজারি করে টিকেট বিক্রি করছে কিনা এবং টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজি হচ্ছে কিনা এগুলো দেখবে থানা পুলিশ। আরেক স্তরে থাকবে ট্রাফিক পুলিশ। বাস মাঝ রাস্তায় থেমে যাত্রী উঠাচ্ছে কিনা তাম দেখবে ট্রাফিক পুলিশ। রাজধানীর গাবতলীতে মঙ্গলবার বিকেলে গাবতলী বাস টার্মিনালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া এ সব কথা জানান। তিনি বলেন, বাস টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীরা যাতে ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, চুরি, চাঁদাবাজি ও টিকেট কালোবাজারির শিকার না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশ (ক্রাইম বিভাগ) দায়িত্বরত থাকবে। তারা যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, পুরো রাজধানীর মোট ১৩ বহির্গমন পথ আছে। এর মধ্যে ৪ বহির্গমন পথকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো- গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর, বাবুবাজার ও যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড। টার্মিনালগুলোতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশও দায়িত্বে থাকবে। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা হয়ত সুপারসনিক গতি নিশ্চিত করতে পারব না। তবে গাড়িগুলো যাতে রাস্তায় থেমে না থেকে ধীরগতি হলেও চলতে থাকে সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব। কল্যাণপুর থেকে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত এ পথে কোন গণপরিবহনকে রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়া হবে না। টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে সোজা গন্তব্যের উদ্দেশে তাদের যেতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও পুলিশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বাস টার্মিনালগুলোতে মানুষের স্রোত ॥ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রতিদিন বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। গত ৯ জুলাই থেকে পরিবহনগুলো চালু করেছে ঈদের বিশেষ সার্ভিস। গাবতলীতে এখনও বেশ কিছু সাধারণ পরিবহনের টিকেট বিক্রি চলছে। পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৬ ও ১৭ জুলাই সবগুলো পরিবহনের টিকেট শতভাগ বিক্রীত। সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন জনান, এখন প্রতিটি ট্রিপে দু’একটি সিট খালি যাচ্ছে। তবে ১৬, ১৭ তারিখ কোন সিট ফাঁকা নেই। যাত্রীদের নির্বিঘেœ যাতায়াতে গাবতলী টার্মিনালে বসানো হয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ ক্যাম্প। মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকেটের কোন সঙ্কট নেই। এলেই মিলছে টিকেট। টিকেট কেটেই যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি কাউন্টারের সামনে টিকেট বিক্রেতাদের হাঁকডাক। বিকেলের পর যাত্রী চাপ ছিল বেশি। বাস কর্মীরা বলছেন, ভিড় বাড়বে বুধ ও বৃহস্পতিবার থেকে। মঙ্গলবারও অফিস খোলা থাকায় যাত্রী কম। এনা পরিবহন কাউন্টারের কর্মী মাহবুব আলম বলেন, এখনও মহাসড়কগুলোতে তেমন যানজট শুরু হয়নি। নির্বিঘেœ বাস চলাচল করছে। তবে ঢাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার পথে বেশ লম্বা জ্যামে পড়তে হচ্ছে। এ কারণেই বাস ছাড়তে সামান্য বিলম্ব হচ্ছে। তবে তাতে যাত্রীরা বিরক্ত নন। কারণ, মহাখালী টার্মিনালের বিশ্রামাগারে বসার সুব্যবস্থা আছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী চাপ বাড়ছে। তবে ১৬ ও ১৭ জুলাই সবচেয়ে বেশি যাত্রী হবে। এ দুদিন রাতভর গাড়ি চলবে। যাত্রীদের কাছ থেকে যেন কোনভাবেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা না হয় এজন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক, পুলিশ, বিআরটিএ, বিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সকল বিভাগের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও দুপুরের পর থেকে মানুষের ভিড় বাড়ে।
×