ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ নুরুজ্জামান

ঘূর্ণিপাকে হাফিজ

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৫ জুলাই ২০১৫

ঘূর্ণিপাকে হাফিজ

এ্যাকশন নিয়ে পুনরায় সন্দেহ ওঠায় খেলতে পারেননি শেষ দুই টেস্টে। ওই সময়টায় ভারতে গিয়েছিলেন আইসিসির পরীক্ষাগারে। ফল পজেটিভ হলে অন্তত এক বছরের জন্য বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হতে হবে। এমন কঠিন মানসিক অবস্থায় এভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সম্ভব? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির পর তাই পিছেই সেজদায় পড়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ম্যাচে যে দারুণ এক অর্জনে নাম লিখিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। শোয়েব মালিকের পর মাত্র দ্বিতীয় পাকিস্তানী হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও চার উইকেট নেয়ার দারুণ কীর্তি গড়েছেন ‘প্রফেসর’ হাফিজ। সৌজন্যে মহাগুরুত্বপূর্ণ পাঁচ ওয়ানডের সিরিজটাতে ১-০এ এগিয়ে যায় দল। হাফিজ যে কতটা শক্ত মনের মানুষ, এ সাফল্য সেটিই প্রমাণ করে। ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার এ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ সত্ত্বেও ব্যাটে-বলে স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলে উঠলেন তিনি। ম্যাচটি ছিল কেবলই তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ভাস্বর। যেখানে নির্ধরিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫৫ রানে থামে লঙ্কানরা। জবাবে ৪৫.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। তুলে নেয় ৬ উইকেটের বিশাল জয়। বল হাতে ৪১ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর ব্যাটিংয়ে দারুণ এক সেঞ্চুরি (১০৩) হাকিয়ে অবধাররিত ‘নায়ক’ হাফিজ। সতীর্থ শোয়েব মালিকের পর দ্বিতীয় পাকিস্তানী ক্রিকেটার হিসেবে এমন অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন ৩৪ বছরের পাঞ্জাব প্রতিভা। ওয়ানডে ইতিহাসেই এমন ঘটনার উদাহরণ মাত্র ১৩টি। ২০০৪ এশিয়া কাপে দুর্বল হংকংয়ের বিপক্ষে ১১৮ রান করার পাশাপাশি ৪ উইকেট নিয়েছিলেন পরশু ম্যাচেও হাফিজের সতীর্থ হয়ে নামা মালিক। হংকং আর শ্রীলঙ্কা এক নয়। তার ওপর সিরিজটি পাকিস্তানের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হলে যেখানে জিততেই হবে তাদের, সেখানে দলকে দারুণ শুরু এনে দিলেন হফিজ। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির (১১২*) সঙ্গে সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেয়ার নজির পল কলিংউডেরÑ সাবেক ইংলিশ তারকা ২০০৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই কীর্তি গড়েছিলেন। ১১৯ রান ও ৫ উইকেট ভিভ রিচার্ডসের, ১৯৮৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (ওয়ানডেতে অবিশ্বাস্য অলরাউন্ড নৈপুণ্যের ঘটনা সেটিই প্রথম)Ñ বাকি সবাই সেঞ্চুরির সঙ্গে পেয়েছেন ৪টি করে উইকেট। ‘এটা আমার জন্য গ্রেট এক দিন। কারণটা অনুমেয়, বোলিং এ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। খেলতে পারিনি শেষ দুটি টেস্টে। জানি, আমি ঠিক মতোই বল করছি। তাই ভেতরে জিদ কাজ করছিল। সিরিজটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে দলকে জয় উপহার দিতে পেরে ভাল লাগছে। পরের ম্যাচগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।’ বলেন হাফিজ। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা অলরাউন্ডার এ পর্যন্ত ১৬২ ওয়ানডেতে ৪৮৩৪ রানের পাশাপাশি ঝুলিতে পুড়েছেন ১২৭ উইকেট। অনেক দিন আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা পাকিস্তানী তারকা এখনও আছেন সেরা পাঁচে, টেস্টে ছয় নম্বরে। ৪৪ ম্যাচে ২৯৭০ রান করার পাশাপাশি বল হাতে শিকার সংখ্যা ৫২। শ্রীলঙ্কায় প্রথম দুই টেস্টের আগে বাংলাদেশ সফরে খুলনা টেস্টে খেলেন ২২৪ রানের ম্যারাথন এক ইনিংস। গত বছর নবেম্বরে আবুধাবিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাফিজের এ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ্যাকশন শুধরে ফিরেছিলেন এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে। দুই মাসের ব্যবধানে ফের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে একই সন্দেহ! পুনরায় পরীক্ষা দিয়েছেন। বৈধতা পাবেন বলে নিজের প্রতি খুবই আতœবিশ্বাসী হাফিজ। বিশ্বকাপের মাত্র এক মাস আগে গত বছর ডিসেম্বরে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি অনুমোদিত ল্যাবরেটরি ইংল্যান্ডের লুবার্গে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উৎরে যেতে ব্যর্থ হন পাক তারকা। অস্থায়ীভাবে বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। আইসিসি তখন জানায়, বোলিংয়ের সময় প্রতিটি ডেলিভারিতেই আজমলের হাতের কনুই নির্ধারিত মাত্রা ১৫ ডিগ্রীর বেশি বেঁকে যায়। তাই এ্যাকশন সংশোধন করে ফের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না ৩৪ বছর বয়সী ডানহাতি অফস্পিনার। গত বছরই অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সেরা সব ক্লাব নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি২০র আসর। পাকিস্তান থেকে সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় লাহোর লায়ন্স। দলটির অধিনায়ক ছিলেন হাফিজ। অসরে প্রথমবারের মতো তার এ্যাকশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ওই টুর্নামেন্ট আইসিসির অন্তর্ভুক্ত নয় বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। কিন্তু গত নবেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবুধাবি টেস্টে ফের হাফিজের বোলিং এ্যকশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আম্পায়ার। এরপর আইসিসির পরীক্ষায় সেটিই প্রমাণ হয়, বল হাতে নিষিদ্ধ হন তিনি। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী আম্পায়ার কর্তৃক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ২১ দিনের মধ্যে অনুমোদিত বায়োমেকানিকল্যাল ল্যাবে পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হন অভিযুক্ত বোলার। তবে এ্যাকশন শুধরে যেকোনও সময় পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে পুনরায় ফেরার সুযোগ থাকে। দ্বিতীয়বারও ব্যর্থ হলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয় (কম পক্ষে ১-২ বছরের জন্য)। বাংলাদেশ সফরে টি২০ ও ওয়ানডে হারের দুর্দশার মধ্যে পাকিস্তানের জন্য এক পশলা স্বস্তির বাতাস হয়ে আসে হাফিজের বোলিং বৈধতার খবর। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি) কর্তৃক বোলিংয়ের অনুমতি পান মোহাম্মদ হাফিজ। এ্যাকশন সংশোধনের পর ৯ এপ্রিল চেন্নাইয়ে আইসিসির বায়োমেকানিক্যাল পরীক্ষাগারে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। আইসিসি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, পরীক্ষায় উতড়ে গেছেন হাফিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতেই বল করার অনুমতি মেলে ডানহাতি অফস্পিনাার। বিধিবাম স্বস্তি দীর্ঘ হলো না, দুই মাসের ব্যবধানে ফের ঝামেলায় পড়লেন। শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজে পুনরায় সন্দেহ, পরীক্ষার ফল আসবে কয়েকদিনের মধ্যে। তখন ব্যাটে-বলে এমন নৈপুণ্য সত্যি অবিশ্বাস্য।
×