ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ মৃত্যুবার্ষিকী

দশ বছর থমকে আছে সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার বিচার

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৬ জুলাই ২০১৫

দশ বছর থমকে আছে সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার বিচার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ আজ ১৬ জুলাই যশোরের শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যাকা-ের ১৫তম বার্ষিকী। নির্মম এই হত্যাকা-ের ১৫ বছর পার হলেও অদ্যাবধি এর বিচার সম্পন্ন হয়নি; বরং গত ১০ বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রয়েছে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া। যদিও সরকার চাইলেই এ হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব বলে মন্তব্য আইনজীবীদের। তারপরও এ হত্যাকা-ের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল দু হাজার সালের ১৬ জুলাই জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ির গুলিতে নিহত হন। নিহতের সহোদর ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সহ-সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, একাধিক বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকা-ের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়। এছাড়া তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হবার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। বিগত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। এ সময় মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামির ঘনিষ্ঠদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশীট। এরপর বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার (বাদীর) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না তার জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে রুলনিশির জবাব না দেয়ায় সেই থেকে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। যদিও আইনজ্ঞরা বলছেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম জানান, উচ্চ আদালতের রুলনিশির কারণে সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যা মামলাটির বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। সরকার ইচ্ছা করলে এই মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এ্যাটর্নি জেনারেলকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি চাইলেই রুল নিষ্পত্তি করে মূল বিচার প্রক্রিয়া শুরু সম্ভব। উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম পিটু জানান, তাদেরও প্রত্যাশা দ্রুত এ মামলার বিচার কার্যক্রমের স্থবিরতা দূর হোক। এ জন্য ওই রুল নিষ্পত্তি করতে তিনি এ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে যোগাযোগ করবেন বলেও জানান। প্রসঙ্গত এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হার্টস্ট্রোকে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছে। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় পুরনো বিতর্কিত তদন্ত বাতিলপূর্বক মামলাটি পুনর্তদন্তের। এদিকে, শামছুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাব যশোর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে) দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
×