ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বান্দরবানের গভীর জঙ্গল থেকে মিয়ানমারের অপহৃত দুই সৈন্য উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ জুলাই ২০১৫

বান্দরবানের গভীর জঙ্গল থেকে মিয়ানমারের অপহৃত দুই সৈন্য উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানকালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপহৃত দুই সদস্য উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের একজন খানিকটা অসুস্থ। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি এখন প্রায় শতভাগ সুস্থ। অপরজন পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন। বুধবারই বিষয়টি মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। আজ মিয়ানমারকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হতে পারে। তবে কারা কি কারণে বা কত দিন আগে তাদের অপহরণ করেছিল সে সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি বলে বিজিবির তরফ থেকে বলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে বিজিবি সদর দফতরে আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এমন তথ্যই জানান। তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবান সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। সর্বশেষ গত ৫ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত টানা ১০ দিন বান্দরবানের বলিপাড়া ও আলীকদমে অভিযান চলে। অভিযানে সেনাবাহিনীর পাঁচটি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাসহ মোট ১৬টি দল অংশ নেয়। এরমধ্যে বান্দরবান সীমান্তের ৬৭ নম্বর মেইন পিলার থেকে ট্রাইজংশন পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে বান্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে মিয়ানমারের দুই নাগরিক উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃতরা জানান, তাঁরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য। উদ্ধারকৃতদের একজন অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে প্রায় শতভাগ সুস্থ আছেন। অপরজন পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন। বিজিবি প্রধান জানান, উদ্ধারকৃতদের সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে গভীর জঙ্গলে রেখেছিল। বিজিবির অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে খুব সম্ভবত অপহরণকারীরা অপহৃতদের জঙ্গলে ফেলেই পালিয়ে যেতে পারে। বিষয়টি মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীসহ সে দেশের সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। উদ্ধারকৃত দুইজনকে দ্রুত ফেরত নিতে মিয়ানমারের বিজিপিকে অনুরোধ করা হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক আরও জানান, সর্বশেষ অভিযান ছাড়াও গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি টানা দশ দিন চারটি দল থানচির বলিপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। গত ১২ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত টানা চারদিন ১৫টি দল নাইক্ষ্যংছড়িতে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায়। গত ২ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত পাঁচটি দিন তিনটি দল থানচির বলিপাড়া এলাকায় তৃতীয় দফায় অভিযান চালায়। চতুর্থ দফায় অভিযানকালে মিয়ানমারের পাঁচ নাগরিক উদ্ধার হয়। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ২৭১ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮ কিলোমিটার পাহাড়ী এলাকা। যা স্বাধীনতার পর থেকেই অরক্ষিত ছিল। বর্তমানে বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ৮টি বিওপি (বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট বা নিরাপত্তা চৌকি) স্থাপন করে। এতে করে অরক্ষিত সীমান্ত ৫০ কিলোমিটার কমে আসে। বাকি ১৪৮ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তে ২২টি বিওপি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। বিওপি স্থাপন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের অরক্ষিত সীমান্ত থাকবে না। বিজিবি প্রধান গোয়েন্দা, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, মিয়ানমার সীমান্তে প্রায়ই সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী অস্ত্রধারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে থাকে। সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারকে বাংলাদেশ সরকার ও বিজিবির তরফ ছাড়াও কূটনৈতিকভাবে সহায়তা করা হয়। মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তরফ থেকেও সহায়তা চাওয়া হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী কোন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এদেশে স্থান দেয়া হয় না। এমনকি আত্মগোপনে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী দল থাকলে তাদের নির্র্মূলে ধারাবাহিক অভিযান চলে। বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতেই মূলত অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানেই উদ্ধার হলো দুই মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশ সরকার ও বিজিবির তরফ থেকে উদ্ধারকৃতদের দ্রুত মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, জুন মাসে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা এবং ইয়াবা পাচার ইস্যুতে টানাপোড়েনের মধ্যেই কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সীমান্তে নাফ নদীতে বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির গোলাগুলি হয়। এতে এক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। বিজিপির এক সদস্য বিজিবির নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে নাকে কামড় দিয়ে আহত করার পর অস্ত্রগোলাবারুদসহ ধরে নিয়ে যায়। টানা ঘটনা চক্র শেষে টানা এক সপ্তাহ পর গত ২৬ জুন পতাকা বৈঠকের পর নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×