ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাড়ল ভূমি উন্নয়ন কর ॥ ১ জুলাই থেকে কার্যকর

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৬ জুলাই ২০১৫

বাড়ল ভূমি উন্নয়ন কর ॥ ১ জুলাই থেকে কার্যকর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০ বছর পর বাড়ল ভূমি উন্নয়ন কর। একই সঙ্গে ৫ বছর পর আবেদনের জন্য কোর্ট ফি, নোটিস জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহের ফি বাড়ান হলো। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আদেশের পর গত ৬ জুলাই এ বিষয়ে গেজেট জারি করেছে সরকার। গত ১ জুলাই থেকে এ বর্ধিত হার কার্যকর হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভূমি উন্নয়ন কর ও ফি সময়োপযোগী ও ন্যায়ানুগ করতে বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও অনেক বেড়ে যাবে। নতুন আদেশের কারণে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করে ১৯৯৫ সালের ৩০ মে জারি করা আদেশ ও ২০১০ সালের ২ মে নামজারি, জমাভাগ ও জমা একত্রিকরণ বাবদ বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করে জারি করা পরিপত্র বাতিল হয়ে গেছে। নতুন নিয়মেও কৃষিজমির ক্ষেত্রে আগের মতোই ৮ দশমিক ২৫ একর (২৫ বিঘা) পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। আগে ২৫ বিঘার উপরে ১০ একর পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হতো শতক প্রতি ৫০ পয়সা ও ১০ একরের বেশি জমির জন্য এক টাকা। নতুন কর বৃদ্ধির আদেশে বলা হয়েছে, ব্যক্তি ও পরিবারভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ ২৫ বিঘা পর্যন্ত কোন ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। এ মওকুফের আওতায় আসবে আখ আবাদ, লবণ চাষের জমি ও কৃষকের পুকুর (বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ ছাড়া)। তবে কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে বার্ষিক প্রতি শতকের জন্য ২ টাকা হারে কর দিতে হবে। চা, কফি, রাবার, ফুল বা ফলের বাগান এবং বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ, চিংড়ি চাষ, হাঁস মুরগির ও গবাদি পশুর খামার ইত্যাদি বিশেষ কাজে যে কোন পরিমাণ ভূমি ব্যবহার করলেও শতক প্রতি ২ টাকা হারে কর দিতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের আওতাধীন কৃষি জমির সংশ্লিষ্ট প্রতিটি হোল্ডিং এর ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফ বাবদ দাখিলার জন্য আবশ্যিকভাবে বার্ষিক ১০ টাকা দিতে হবে বলেও নতুন আদেশে বলা হয়েছে। গ্রামীণ বা পৌর যে কোন এলাকাতেই কৃষি জমির এ হার প্রযোজ্য হবে। বেড়েছে বাণিজ্যিক, শিল্প ও আবাসিক জমির কর : বাণিজ্যিক, শিল্প ও আবাসিক জমির কর হারও বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে ‘শিল্প’ শ্রেণী আগে ছিল না। এ তিন শ্রেণীতে ছয়টি ধাপে কর দিতে হবে। ‘ক’ ধাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা জমির জন্য প্রতি শতকের কর ১২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। শিল্প কাজে ব্যবহারের ফি ১৫০ টাকা। এই পাঁচ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আবাসিক জমির কর শতাংশ প্রতি ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। ‘খ’ ধাপে রয়েছে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনভুক্ত এলাকা। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই ও চট্টগ্রামের সীতাকু-, হাটহাজারী ও কক্সবাজার জেলা সদরের পৌর এলাকা। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌর এলাকা এবং সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ও মেঘনাঘাট এলাকা। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি, জামিরদিয়া, ধানসুর, ভানডাব, কাঁঠালি ও মেহেরবাড়ি মৌজা। নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী পৌর এলাকা ছাড়াও রয়েছে রাজউকের আওতাধীন পূর্বাচল আবাসিক এলাকা। এ সব এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর প্রতি শতকে ২৫০ টাকা, শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর ১৫০ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এই ধাপে বাণিজ্যিক ও শিল্পে ব্যবহৃত জমির জন্য ১২৫ টাকা এবং আবাসিকসহ অন্যান্য জমির ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর ছিল ২২ টাকা। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নোয়াখালী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, কৃষ্টিয়া, যশোর ও পটুয়াখালী জেলা সদরের পৌর এলাকা রয়েছে ‘গ’ ধাপে। এ ধাপে রয়েছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলাতলা ইউনিয়ন ও দামোদর ইউনিয়নের মশিখালী মৌজা। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌর এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ, কুমিল্লা জেলার লাকসাম ও চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ উপজেলা। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা পৌর এলাকা এবং টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর পৌর এলাকা। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌরসভা। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরববাজার পৌর এলাকাও রয়েছে এ ধাপে। এ এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর শতক প্রতি ২০০ টাকা, শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর ১২৫ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে বাণিজ্যিক ও শিল্পে ব্যবহৃত জমির জন্য ১২৫ টাকা এবং আবাসিকসহ অন্যান্য জমির ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর ছিল ২২ টাকা। নতুন কর হারের আদেশে বলা হয়েছে, ‘ঘ’ ধাপে অন্যান্য জেলা সদরের পৌর এলাকা। অন্যান্য সব প্রথম শ্রেণীর পৌর এলাকা। নোয়াখালী জেলার সোনাইমুরি ও চাটখিল পৌর এলাকা এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর পৌর এলাকা। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন। বগুড়া জেলার শান্তাহার পৌর এলাকা ও শেরপুর পৌর এলাকা। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি পৌর এলাকা এবং পাবনা জেলার ঈশ্বরদী পৌর এলাকা। খুলনা জেলার দীঘলিয়া উপজেলার যৌগীপুর ইউনিয়ন ও আড়ংঘাটা ইউনিয়ন, বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়ন, ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন এবং যশোর জেলার অভয়নগর পৌরসভা। দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পৌরসভা। এ ছাড়া এই ধাপে রয়েছে নোয়াখালী জেলার বসুরহাট পৌর এলাকা। এ ধাপে বাণিজ্যিক কাজের জন্য প্রতি শতকে ১০০ টাকা হারে, শিল্প কাজের জন্য ৭৫ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির জন্য ২০ টাকা হারে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। আগের নিয়মে এই ধাপে বাণিজ্যিক ও শিল্পে ব্যবহৃত জমির জন্য ২২ টাকা এবং আবাসিকসহ অন্যান্য জমির ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর ছিল ৭ টাকা। ‘ঙ’ ধাপের অন্যান্য সব পৌর এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর প্রতি শতকে নির্ধারিত হয়েছে ৬০ টাকা। শিল্প কাজে কর ৪০ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ১৫ টাকা জমির উন্নয়ন কর দিতে হবে। এর আগে এই ধাপে বাণিজ্যিক ও শিল্প ব্যবহৃত জমির জন্য ১৭ টাকা এবং আবাসিকসহ অন্যান্য জমির ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর ছিল ৬ টাকা। পৌর এলাকা ঘোষিত হয়নি এমন এলাকা পড়েছে ‘চ’ ধাপে। এখানে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর প্রতি শতকে ৪০ টাকা, শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর ৩০ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির উন্নয়ন কর ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এই ধাপে বাণিজ্যিক ও শিল্পে ব্যবহৃত জমির জন্য ১৫ টাকা ও আবাসিকসহ অন্যান্য জমির ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর ছিল ৫ টাকা। ভূমি ব্যবহারের প্রকৃতি পরিবর্তনের কারণে ভূমি উন্নয়ন কর পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন/পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে। কোন জমির ব্যবহারের প্রকৃতি পরিবর্তন হলে জমির মালিক নিজ উদ্যোগে বা যে কোন জমির অবস্থান ও ব্যবহারভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণে সৃষ্ট কোন জটিলতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি জরিপ করে প্রকৃত ব্যবহারের ভিত্তিতে জমির ভূমি উন্নয়ন কর পুনর্নির্ধারণ করে নিতে পারবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণের কোন দরখাস্ত পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। বাড়ল জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন ফি: ভূমি মন্ত্রণালয় সর্বশেষ ২০১০ সালে নামজারি, জমাভাগ ও জমা একত্রীকরণ বাবদ বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করেছিল। এখন সেই পরিপত্র বাতিল করে নতুন একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০১০ সালে ধার্য করা হয় পাঁচ টাকা। এটা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। নোটিস জারি ফি দুই টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। রেকর্ড সংশোধন ফি ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ ফি ৪৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে নামজারি, জমাভাগ ও জমা একত্রীকরণের জন্য মোট ফি ২৫০ টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ১৭০ টাকা। আবেদন ফি ছাড়া বাকিগুলো ডিসিআরের মাধ্যমে আদায় করতে হবে বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে।
×