অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত ঋণ সহায়তার (ইসিএফ) শেষ দুই কিস্তির অর্থ সরকার নেবে না। শর্তের কারণেই সরকার সংস্থাটির শেষ দুই কিস্তির অর্থ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা যায়, শেষ দুই কিস্তির অর্থ ছাড় করার জন্য আইএমএফ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের জন্য আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিয়োগের শর্ত দিয়েছিল। কিন্তু দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেখানে স্থানীয় অডিট ফার্ম অডিট করছে, সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার আইন পরিবর্তন। এ কারণে আইএমএফ-এর ইসিএফএফ-এর শেষ দুই কিস্তির অর্থ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
যদিও সরকার আইএমএফের শর্ত পূরণ করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। তবে এর পেছনে সরকারের যুক্তি হচ্ছে- বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান। বাইরে এর একটি গ্রহণযোগ্যতার বিষয় রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিপিসির ব্যাপারে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিপিসিতে বার্ষিক ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়। এ বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হলেও এখানে কোন নিরীক্ষা করা হয় না। ফলে অর্থের অপচয় বা দুর্নীতি হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিপিসির আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী কোন ফার্ম দিয়ে অডিট করানোর প্রয়োজন আছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের জন্য বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) হিসাবে ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ এসডিআর (প্রায় ১ বিলিয়ন) অনুমোদন করে আইএমএফ। চুক্তির সকল শর্ত পূরণ করলেও ইসিএফ সহায়তার শেষ দুই কিস্তির অর্থ এখনো ছাড় করেনি সংস্থটি। প্রতি কিস্তিতে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার হিসাবে ৭টি কিস্তিতে এ ঋণ সহায়তা প্রদান করার কথা। কিন্তু ৫টি কিস্তির অর্থ ৭০ কোটি ডলার ছাড় করার পর অবশিষ্ট অর্থ আর ছাড় করছে না আইএমএফ। চলতি জুলাই মাসের ১ তারিখে ইসিএফ-এর বর্ধিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে শেষ দুই কিস্তি সরকার নেবে না বলে সরকার ইসিএফের মেয়াদ আর বাড়ানোর অনুরোধ করেনি। যদিও অবশিষ্ট কিস্তির অর্থ আগামী অক্টোবর-নবেম্বরের আগে ছাড় করা সম্ভব নয় বলে আইএমএফ সরকারকে জানিয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত রডরিগো কুবেরোর নেতৃত্বে ইসিএফ-এর পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যালোচনা শেষ হয়। সে সময় কুবেরো বলেছিলেন, বাংলাদেশের সার্বিক কর্মকা-ে আইএমএফ সন্তুষ্ট। সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল। বাংলাদেশের ঋণ মানও অনেক ভাল। এরপরও দুটি কিস্তির অর্থ (২৮ কোটি ডলার) এখনো ছাড় করেনি সংস্থাটি।
তিন বছর মেয়াদি এ চুক্তিটি ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়। পরে দুই মাস সময় বাড়ানোর কারণে ইসিএফ চুক্তির মেয়াদ চলতি মাসের ৩০ তারিখে শেষ হওয়ার কথা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২২ জুলাই আইএমএফ বোর্ড সভায় নেয়া হবে বলে জানা গেছে।