ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

থাকছে বিশেষ ট্রেন ॥ মাঠে সিসি ক্যামেরা

শোলাকিয়ায় ঈদের বড় জামাত

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৭ জুলাই ২০১৫

শোলাকিয়ায় ঈদের বড় জামাত

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ দেশের সর্ববৃহত ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ। মাঠে নামাজ পড়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা এবং যে জামাতে মুসল্লি যত বেশি, ছওয়াবও তত বেশি হয় ও গোনাহ মাফ হয়- এ বিশ্বাস থেকেই দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি এ ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসেন। এ মাঠের জামাতের প্রতি মুসল্লিদের আকর্ষণ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে প্রতি বছরই জামাতের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে মাঠের সুনাম। ঈদের জামাতকে সামনে রেখে প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মাঠ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসহ সার্বিক সংস্কার কাজ শেষ করেছে। কর্মীরা মেহরাবের চুনকাম, মাঠে দাগ কাটার কাজ ও অজুখানা পরিষ্কার করেছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নিশ্চিত করা হয়েছে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের। এবারও শোলাকিয়া মাঠ থেকে জামাত সরাসরি সম্প্রচার করবে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল। প্রায় তিনশ’ বছর ধরে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত আরম্ভের ঘোষণা দেয়া হয়। এ বছর ঈদ বর্ষাকালে হওয়ায় ময়দানের আশপাশে কোথাও যেন পানি না জমে সেজন্য পানি নির্গমনের দিকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় ১৮৮তম ঈদ-উল-ফিতরের জামাতে ইমামতি করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসউদ। ১৮২৮ সালে শোলাকিয়ায় ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এর যাত্রা শুরু হয় ১৭৫০ সালে। মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশদর দেওয়ান হযরত খানের উত্তরসূরী দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সালে ৪.৩৫ একর ভূমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। বর্তমানে এ জায়গার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত একর। যা আগত মুসল্লিদের মাত্র অর্ধেকের বেশি ধারণ করতে পারে। এ এলাকার পূর্বনাম ছিল রাজাবাড়িয়া। জনশ্রুতি আছে, ঈদগাহ মাঠে প্রথাম বড় জামাতে সোয়ালাখ লোক অংশ নিয়েছিল। যে কারণে এর নামকরণ করা হয় সোয়ালাখিয়া। ভিন্নমতে, মোঘল আমলে এখানকার পরগণার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়ালাখ টাকা। উচ্চারণগত কারণে এই ঈদগাহ মাঠ শোলাকিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে। মাঠের দৈর্ঘ্য পূর্ব পশ্চিমের দক্ষিণ পার্শ্ব ৯১৪ ফুট, উত্তর সীমারেখা ৭৮৮ ফুট। প্রস্থ উত্তর দক্ষিণে পশ্চিম সীমা রেখা ৩৩৫ ফুট ও পূর্ব সীমা রেখা ৩৬১ ফুট। মাঠের ভেতরে ২৬৫টি কাতার রয়েছে। মূল ঈদগাহে জায়গা সংকুলানের অভাবে মাঠের চারপাশের খালি জায়গা-জমি, ক্ষেত, বসত বাড়ির আঙ্গিনায় এবং রাস্তা-ঘাটে অগণিত মুসল্লিকে নামাজ আদায় করতে হয়। এতবড় জামাত চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন। প্রতি বছরই এ জামাতের প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আকর্ষণ বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় এর উন্নয়ন ও পরিধি বিস্তৃত হয়নি। পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান বলেন, শোলাকিয়ায় সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাতের জন্য মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশদ্বারে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। এছাড়া পুলিশের ক্যাম্পসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা দল মোতায়েন থাকবে ঈদগাহ এলাকায়। বিশাল এবং ঐতিহ্যবাহী এ ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে। অন্য বছরের মতো এ বছরও ঈদের দিন শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মাঠের প্রবেশপথে কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে। জরুরী ও সংবাদপত্রের গাড়ি ছাড়া কোন গাড়ি শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পোশাকী সিকিউরিটির পাশাপাশি র‌্যাব ও ছদ্মবেশে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠ ও মাঠের বাইরে দায়িত্ব পালন করবে। এদিকে ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ইতোমধ্যে ঈদকে স্বাগত জানিয়ে বড় বড় তোরণ নির্মাণ, ব্যানারে সাজানো সড়ক দ্বীপ স্থাপন করা হয়েছে। শোলাকিয়া ছাড়াও মহিলাদের জন্য আরেকটি বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জ এসভি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এতে ইমামতি করবেন মাওলানা মোহাম্মদ ছানাউল্লাহ।
×