ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রীড়া তারকাদের ঈদ ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৭ জুলাই ২০১৫

ক্রীড়া তারকাদের ঈদ ভাবনা

রুমেল খান ॥ ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। বছরে দু’বার আবালবৃদ্ধবনিতা মেতে ওঠেন ঈদের বিমলানন্দে। ক্রীড়াঙ্গনের ক্রীড়াবিদরাও এর বাইরে নন। ব্যস্ত ক্রীড়াসূচীর বাইরে এই ঈদের ছুট পেলেই তারা বর্তে যান। চেষ্টা করেন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে। দেশের কয়েকটি প্রচলিত খেলার জনপ্রিয় ক্রীড়া তারকাদের এবারের ঈদ-উল-ফিতরের কর্মপন্থা, পরিকল্পনা কি! সাবিনা খাতুন (ফুটবল) ॥ বিদেশের (মালদ্বীপ) কোন ক্লাবে গিয়ে খেলা বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হলেন সাবিনা খাতুন। এখন কোন খেলা না থাকায় ঈদ কাটাতে আগেভাগেই চলে গেছেন গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। খেলার সুবাদে সাতক্ষীরায় অবশ্য অনেকবারই ঈদ পালন করা হয়নি তার। এবার সেটা হবে না বলে অনেক উৎফুল্ল। ঈদের দিনটা আনন্দের সঙ্গে কাটাতে চান মা-বাবা-ভাই-বোনের সঙ্গে। ঈদের প্রস্তুতি কেমন? মানে ঈদের দিনে কী করবেন? সাবিনার উত্তর, ‘কোন পরিকল্পনা নাই। হা হা হা ! আসলে ছুটিতে এসেও আমাকে নিজের ফিটনেস বজায় রাখতে কঠোর অনুশীলন করতে হচ্ছে।’ ঈদের ড্রেস কিনেছেন? ‘হুম, তা কিনেছি। তবে ছোটবেলায় ঈদে নতুন জামা পেয়ে যেমন খুশি হতাম, এখন আর তেমন খুশি লাগে না!’ ঈদের দিনে সকালের দিকে একবার বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বের হবেন বা তাদের সঙ্গে বাসায় আড্ডা দেবেন বলে জানান বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের এই কৃতী ফরোয়ার্ড। ছোটবেলার ঈদের কথা মনে পড়লে আফসোসই লাগে সাবিনার। এখনও কি ঈদ সালামি নেন? ‘হা হা হা! এখন কী নেয়া যায়? বরং ছোটদের দিতে হয়। তাদের সালামির রেট ১০০ টাকা করে!’ মজা করে বললেন সাবিনা। শিরিন সুলতানা (উশু) ॥ একসঙ্গে দুটো খেলা খেলেন শিরিন সুলতানা। উশু ও কুস্তি। এবারের ঈদ কাটাতে ইতোমধ্যেই চলে গেছেন ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে। সেখানে আছেন মা, দুই ভাই, ভাবি, দাদি-ফুপিরা। সেমাই, পোলাও-মাংস খাওয়া এবং বান্ধবীদের সঙ্গে ঘোরাই হচ্ছে শিরিনের এবারের ঈদের পরিকল্পনা। ছোটবেলায় ঈদ পালন করে যেমনটা আনন্দ পেতেন, তেমন আনন্দ এখন পান না বলে জানান সুদর্শনা শিরিন, ‘এখন সাদাসিধা জীবনযাপন করি, ঈদের আনন্দও সাধাসিধা।’ আরও জানান, ‘এখনও চাই ঈদে সালামি পেতে, তবে এখন সালামি দিতে হয়। এবারও কাজিনদের দিতে হবে।’ ডালিয়া আক্তার (হ্যান্ডবল) ॥ জাতীয় হ্যান্ডবলার ডালিয়া আক্তার এবার ঈদ পালন করবেন মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে। ‘পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ পালন করার মজাই আলাদা। কী করবেন ঈদে? ‘অতিথি এলে তাদের আপ্যায়নের ভার আমিই সামলাব। ওখানকার স্থানীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে আড্ডা দেব, বিকেলে রিক্সায় ঘুরবো, ভাগ্নে-ভাতিজাদের সময় দেব। এই হচ্ছে আপাতত ঈদের প্ল্যান।’ ডালিয়ার উত্তর। ঈদের জামা? ‘আমি ঈদে সবসময়ই পাঞ্জাবি পরি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’ ছোটবেলার সঙ্গে বড় বেলার ঈদের পার্থক্য? ‘অনেক পার্থক্য। তখনকার ঈদের আনন্দের সঙ্গে এখনকার ঈদের আনন্দের তুলনা করা যাবে না। তখন সালামি পেতাম, এখন সালামি দিতে হয়।’ জোবেরা রহমান লিনু (টেবিল টেনিস) ॥ অনেক বছর আগেই টেবিল টেনিস খেলা ছেড়েছেন তিনি। এই খেলাটি খেলে গিনেজ বুকে নাম লেখানো বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য খেলোয়াড়টি হলেন জোবেরা রহমান লিনু। ঢাকাতেই ঈদ কবে এবার বাবা-মা, ভাই-বোন ও তাদের সন্তানদের সঙ্গে। ভাই-বোনের সন্তানদের এবার বেশি সময় দেবেন লিনু। সবসময়ই সাদামাটা পোশাক পড়ে অভ্যস্ত লিনু ঈদের অনেক আগেই জামা কিনে রাখেন, ঈদে সেটা পরেন! এখনকার চেয়ে শৈশবের ঈদ অনেক আনন্দময় ছিল বলে আক্ষেপও করেন তিনি। মজা করে জানালেন, ‘এখন অন্যদের সালামি দিতে হয় ঠিকই। তবে এখনও দুলাভাইয়ের কাছ থেকে সালামি পাই!’ মামুনুর রহমান চয়ন (হকি) ॥ বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের ‘পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট’ খ্যাত ডিফেন্ডার মামুনুর রহমান চয়ন বরাবরই ঈদ পালন করে থাকেন ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে। তবে ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে এবার। ‘ফরিদপুর থেকে এবার মা-বাবাই ঢাকায় আসবেন। তাই তাদের নিয়েই এবার প্রথমবারের মতো ঢাকায় ঈদ পালন করব। ভাবতেই বেশ রোমাঞ্চিত বোধ করছি।’ ঈদের দিনে বন্ধুদের সময় দেবেন চয়ন। মা-বাবাকে ঘুরিয়ে দেখাবেন ঢাকা শহর। ‘ঈদে ঢাকা বেশ ফাঁকা থাকবে, তাই ঘুরে বেশ শান্তি লাগবে।’ এবারের ঈদে নিজের জন্য স্যান্ডেল, জুতো, পাঞ্জাবি, পায়জামা, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট কিনেছেন চয়ন। শৈশবের ঈদই অনেক ভাল ছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেন দেশীয় হকির এ তারকা খেলোয়াড়, ‘ছোটবেলায় নতুন জামা পেলে যে আনন্দ হতো, সেটা এখন আর হয় না। তখন অনেক স্বাধীন ছিলাম। ইচ্ছামত ঘুরতাম, দুষ্টুমি করতে পারতাম, মন খুলে সবকিছু করতাম। কিন্তু এখন ইচ্ছে করলেও ওসব করা যাবে না!’ ঈদের পর সাফ গেমসের খেলা আছে। সেটাই চয়নের পরবর্তী কর্মপন্থা। সবশেষে জানালেন, ‘হকির দল বদল হচ্ছে না বলে বেশিরভাগ খেলোয়াড়দের জন্যই এবারের ঈদটা হবে বিষাদের ঈদ।’ ফাহাদ রহমান (দাবা) ॥ দেশের সর্বকনিষ্ঠ দাবা ফিদেমাস্টার ফাহাদ রহমান এবার ঢাকায় ঈদ পালন করবে বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে। কদিন আগেই কমনওয়েলথ দাবায় তাম্রপদক জেতা ফাহাদ ঈদের দিনটা পালন করতে চায় সকালে ঈদের নামাজ পড়ে, প্রিয় ইলিশ মাছ খেয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে বেড়িয়ে। এবার তার ঈদের পোশাকের তালিকায় আছে হাতঘড়ি, পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট ও জিন্স প্যান্ট। ঈদের সপ্তাহখানেক পরেই তাকে আবার ব্যস্ত থাকতে হবে ‘মহানগরী দাবা প্রতিযোগিতা’র খেলা নিয়ে। সিদ্দিকুর রহমান (গলফ) ॥ ‘১৯ তারিখ আমি আকাশে থাকব। সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছি ওমেগা মাস্টার্সে অংশ নিতে। যদি ১৮ তারিখ ঈদ হয়, তাহলে সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশেই ঈদ পালন করতে পারব। নইলে জীবনে এই প্রথমবারের মতে ঈদে থাকব বিমানে!’ বাংলাদেশের সেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমানের কথা। আরও একটি কারণে এই ঈদ সিদ্দিকুরের জন্য স্মরণীয়, ‘বিয়ের পর এটাই আমার প্রথম ঈদ!’ ঈদে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করেছেন। নিজের জন্য কিনিছেন প্যান্ট-শার্ট, পায়জামা-পাঞ্জাবি। শৈশবের ঈদ কেমন ছিল? ‘তখন তো ঈদের দু’দিন আগেই আমাদের ঈদ শুরু হয়ে যেত! তখনকার সেই আনন্দদায়ক অনুভূতিগুলো এখন আর পাই না।’ মাহফুজুর রহমান তুষার (কার রেসিং) ॥ বাংলাদেশের প্রথম কার রেসার মাহফুজুর রহমান তুষার এবার রোজার ঈদ পালন করবেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায়। ধানম-িতে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীতে অর্নাসে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা নিয়ে তুমুল ব্যস্ত তিনি। ঈদের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেট-বন্ধুদের সঙ্গে নতুন পাঞ্জাবি পরে ঘুরবেন বলে জানান তিনি। ছোটবেলায় মানিকগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে দারুণ মজা করে ঈদ করতেন বলে স্মৃতিচারণ করেন তুষার, ‘কত লাফালাফি করেছি, আনন্দ করেছি, সে তুলনায় এখনকার ঈদ অনেক পানসে মনে হয়!’ ইমদাদুল হক মিলন (আরচারি) ॥ আগামী ২৩ জুলাই বিশ্ব আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে ডেনমার্ক যাবেন আরচার ইমদাদুল হক মিলন। বর্তমানে অনুশীলন ক্যাম্পে আছেন তিনি। ফলে ঈদে বাড়ি যেতে পারবেন না। ‘ক্যাম্পে ঈদ কাটাতে হবে এবার। খুব খারাপ লাগছে। পবিবারকে অনেক মিস করব। গত বছরও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ক্যাম্পের কর্মকর্তারা বলেছেন তারা ঈদের দিনে আমাদের একটা গাড়ি দেবেন। সেটা নিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় আমরা আরচাররা ঘুরব।’ এবারের ঈদের পোশাক অবশ্য কিনেছেন মিলন, ‘দুটি পাঞ্জাবি কিনেছি এবার। আরও কিছু কিনতাম। কিন্তু সময়ের অভাবেই আর পারলাম না।’
×