ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রমজানের ঐ রোজার শেষে ॥ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৭ জুলাই ২০১৫

রমজানের ঐ রোজার শেষে ॥ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক/ দোস্ত দুশমন পর ও আপন/সবার মহল আজি হউক রওনক/যে আছ দূরে যে আছ কাছে/সবারে আজ মোর সালাম পৌঁছে/সবারে জানাই এ দিল্ আশক। শেষ হয়ে এলো মাহে রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাস। আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। তাই ঈদের খুশির আমেজ বইছে আজ ঘরে ঘরে। কবি নজরুল ইসলাম বলেছেন, ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরণী বেহেশতী, দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তী, জাকাত দেবো ভোগ-বিলাস, আজ গোস্বা বদমস্তি, প্রাণের তশতরীতে ভরে বিলাব তৌহিদ। চলো ঈদগাহে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পবিত্র শাওয়াল মাসে চাঁদ দেখার জন্য আজ বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সভাকক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চাঁদ দেখা কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আজ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল পালিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। আর যদি চাঁদ দেখা না যায় তাহলে আগামী রবিবার ঈদ-উল-ফিতর পালিত হবে। ইতোমধ্যে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে বইছে ঈদের বন্যা। অপেক্ষা শুধু ঈদের ঘোষণার। এ জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় সবার নজর থাকবে আকাশের দিকে। কখন দেখা যাবে শাওয়ালের চাঁদ। আজ অথবা কাল আকাশে একফালি ঈদের চাঁদ উঁকি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ঈদের আনন্দ। ঘরে ঘরে বইবে খুশির বন্য। পথেঘাটে, বাজারে, অলিগলিতে নামবে উৎসবমুখর মানুষের ঢল। পুরো একমাস সিয়াম সাধনার পর আবার এসেছে ঈদ। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উৎসব মুসলিম জাতির প্রতি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বিরাট নিয়ামত ও পুরস্কার। মুসলিম উম্মার প্রত্যেক সদস্যের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা, মমতা ঈদের এ পবিত্র ও অনাবিল আনন্দ উৎসবে একাকার হয়ে যায়। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ঈদ করতে ঘরে ফিরে গেছে রাজধানীর লাখ লাখ বাসিন্দা। এর আগে প্রিয়জনের জন্য সাধ্যমতো কেনাকাটাও সম্পন্ন হয়েছে। ঈদগাহের নামাজ ্আদায়ের জন্য প্রায় প্রতি ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করা হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় চারটি করে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া মহল্লার প্রতিটি মসজিদেও ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ঈদের জামাতের সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। ইতোমধ্যে ঈদের প্রধান জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করা হয়েছে। নারী-পুরুষ একসঙ্গে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে এ ঈদগাহ ময়দানে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এছাড়া বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদেও অনুষ্ঠিত হবে ঈদের পাঁচটি জামায়াত। ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধু আনন্দ-উৎসবই নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদত যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়। ধনী-গরিব, কলো-সাদা, ছোট-বড়, দেশী-বিদেশী সকল ভেদাভেদ ভুলে যায়। সব শ্রেণী ও সকল বয়সের নারী-পুরুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান আল্লাহ্র শুকর আদায়ে নুয়ে পড়ে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদ-উল-ফিতরের দিনে খুশি প্রকাশ করা মুসলমানের জন্য মুস্তাহাব। মাহে রমজানের প্রথম দশদিন রহমত, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাত, তৃতীয় দশদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির পুরস্কারস্বরূপ সৌভাগ্যের ঈদ খুশি উদযাপনের সুযোগ মহান আল্লাহতাআলা তার বান্দার জন্য দিয়েছেন। মাহে রমজানের সমাপ্তির পর মহান আল্লাহ্ ঈদ-উল-ফিতরের নেয়ামত দ্বারা বান্দাকে ধন্য করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত যখন ঈদ-উল- ফিতরের রাত আসে তখন সেটাকে লাইলাতুল জায়েজা অর্থাৎ পুরস্কারের রাত বলে আহ্বান করা হয়। যখন ঈদের দিন ভোর হয় তখন আল্লাহ্তাআলার আপন ফেরেস্তারা সব শহরে, সব গলি ও রাস্তাগুলোর মাথায় দাঁড়িয়ে যায়। আল্লাহতাআলাও তাঁর বান্দাদের এভাবে সম্বোধন করেন, হে আমার বান্দারা! চাও, কি চাইতে ইচ্ছে হয়! আমার সম্মান ও মহত্ত্বের শপথ! আজকের দিনে এ জমায়েতে (ঈদের নামাজে) তোমাদের আখিরাত সম্পর্কে যা কিছু চাইবে তা পুরণ করব। আর যা কিছু দুনিয়া সম্পর্কে চাইবে তাতে তোমাদের মঙ্গলের দিক দেখব। আমার সম্মানের শপথ! তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বিধানাবলীর প্রতি যত্মবান থাকবে আমিও তোমাদের ভুলত্রুটিগুলো গোপন রাখব। আমার সম্মান ও মহত্ত্বের শপথ আমি তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘলকারীদের সঙ্গে অপমানিত করব না। তোমাদের ঘরের দিকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হিসেবে ফিরে যাও। তোমরা আমাকে সন্তুষ্ট করেছ। আমিও তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছি। ঈদ-উল-ফিতর (আরবী ঈদ-উল-ফিতর অর্থ রোজা ভাঙার দিবস) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। ধর্মীয় পরিভাষায় ঈদ-উল-ফিতরকে পুরস্কার দিবস হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর বিশ্বের মুসলমানরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সঙ্গে পালন করে থাকে। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ধনী গরিব, ছোটবড়, আশরাফ-আতরাফ সবাইকে এককাতারে দাঁড় করায় ঈদ। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনেও আবদ্ধ করে। হিজরী বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদ-উল-ফিতর উৎসব পালন করা হয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়াল মাসের গণনা শুরু হয়। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেয়া ইসলামী বিধান। ইসলামী নিয়ম অনুসারে ঈদের পূর্বে পুরো রমজান মাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা। নামাজের পর মুসলমানদের প্রতি যে ইবাদত ফরজ করা হয়েছে তা হলো মাহে রমজানের রোজা। আল্লাহতাআলা এ মাসে তাঁর বান্দাদের ওপর বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। গুনাহ মাফ করে দেন। দোয়া কবুল করেন। এজন্য ইসলামের অনুসারীদের জন্য এ মাস বিশেষ নিয়ামতের মাস হিসেবে গণ্য। কারণ দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পরেই আসে কেবল এ ঈদ। চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের তারিখ নির্ধারণে এবং শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়কমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি আলহাজ প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও ১৪৩৬ হিজরী শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিম্নোক্ত টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। টলিফোন নম্বর: ৯৫৫৯৪৯৩, ৯৫৫৯৬৪৩, ৯৫৫৫৯৪৭, ৯৫৫৬৪০৭ ও ৯৫৫৮৩৩৭। ফ্যাক্স নম্বর: ৯৫৬৩৩৯৭। ফিৎরা ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ফিৎরা আদায় করা ওয়াজিব। এটি এক ধরনের সদকা বা দান। যা রোজার ভুলত্রুটির দূর করার জন্য আদায় করা হয়। ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিৎরা আদায় করার বিধান রয়েছে। ফিৎরার ন্যূনতম পরিমাণ ইসলামী বিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট করা থাকে। সাধারণত ফিৎরা পরিমাণ আটা বা অন্য শস্যের (যব, কিশমিশ) মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। সচরাচর আড়াই সের আটার স্থানীয় মূল্যের ভিত্তিতে ন্যূনতম ফিৎরার পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। এবার জনপ্রতি ফিৎরা নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৫০ টাকা। যে যার সাধ্য অনুযায়ী ফিৎরা আদায় করতে পারবে। বাণী ও শুভেচ্ছা॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ঈদ-উল- ফিতরের শিক্ষা সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর অপার খুশি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে সমাগত হয় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ সব শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন। এদিন ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এককাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সমাজ গঠনে ঈদ-উল-ফিতরের আবেদন তাই চিরন্তন। বাণীতে তিনি দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈদ-উল-ফিতরের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর সকলের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয় এবং সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে সকল মানুষকে। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসুক। পবিত্র এদিনে মহান আল¬াহ রাব্বুল আলামীনের কাছে বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করছি। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর অনাবিল আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ-উল-ফিতর সমাগত। বিশ্ব মুসলিমের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। এই ধর্মীয় উৎসবে সমাজের সকল ভেদরেখা ও সীমানা অতিক্রম করে মানুষে মানুষে মহামিলন ঘটায় ও সৃষ্টি করে পরস্পরের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছাবোধ। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু নির্বিশেষে সকল মানুষকে এককাতারে দাঁড় করায়। বাণীতে তিনি ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি ॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ইতোমধ্যে জাতীয় ঈদগাহের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে আটটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের সব অস্থায়ী ও ভাসমান দোকানপাট তুলে দেয়া হয়েছে। সব ধরনের হকারের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঈদের দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতের পাশে পর্দা দিয়ে মহিলাদের ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সুবিধার্থে অজু করার ব্যবস্থা রাখাসহ ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপনেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা জালালুদ্দিন আল কাদেরী। ক্বারী হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মাওলানা হাবিবুর রহমান। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক মাওলানা এটিএম এনামুল হক উপস্থাপক হিসেবে থাকবেন। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিচারপতি ও বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। বায়তুল মোকাররমে জাতীয় মসজিদে ঈদ জামাতের সময়সূচী ॥ অন্যান্যবারের ন্যায় এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ঈমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল নদভী। এছাড়া বায়তুল মোকারমের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায়, পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০.৪৫টায়। ঈদের জামাতগুলোর ইমামতি করবেন পর্যায়ক্রমে হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক, মুফতি মাওলানা ওয়ালীয়ুর রহমান, হাফেজ মাওলানা মহিউদ্দিন কাশেম ও মুফতি মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ। জাতীয় সংসদ প্লাজায় ঈদ জামাত ॥ এদিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এই জামাতে জাতীয় সংসদের হুইপরা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। ঢাকা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জমিয়ায় ঈদ-উল-ফিতরের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন এবং দ্বিতীয় জামাতে থাকছেন হাফেজ উসায়দ আহমাদ। এছাড়া সল্লিমুল্লাহ হল প্রধান গেট সংলগ্ন মাঠে সকাল ৮টায় এবং শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল আটটায় ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭.৪৫ টায় আবহাওয়া অনুকূল না থাকলে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। আহলে হাদিস ঈদ জামাত ॥ পুরাতন ঢাকাসহ পার্শ¦বর্তী এলাকায় আহলে হাদিসের ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান জামাত সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে বংশাল বড় জামে মসজিদ কমিটির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে খুতবা প্রদান ও ইমামতি করবেন বাংলাদেশ জমিয়তে আহলে হাদিসের সহ-সভাপতি, বংশাল আহলে হাদিস বড় জামে মসজিদের খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা আলহাজ মোস্তফা বিন বাহা উদ্দিন আস সালাফি। এই জামাতে রাজধানীর পুরনো ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার লোক সমাগম হবে বলে জানান বাংলাদেশ জমিয়তে আহলে হাসিদের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। ঢাকার অন্যান্য ঈদের জামাত Ñসকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা॥ মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের হারুণ মোল্লা ঈদগাহ, পার্ক ও খেলার মাঠ সকাল সাড়ে ৭.৪৫টা, মিয়া সাহেব ময়দান খানকা শরীফ জামে মসজিদ ৭.১৫টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মানিকনগর পুকুরপাড় জামে মসজিদে প্রথম জামাত সাড়ে ৭টায়, রসুলবাগ জামে মসজিদেও প্রথম জামাত সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা ॥ দেওয়ানবাগ শরীফে প্রথম জামাত সকাল ৮টায়, রসুলবাগ জামে মসজিদেও দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়, মানিকনগর পুকুরপাড় জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, সায়েদাবাদ আরজুশাহ পাক দরবার শরীফের বড় জামে মসজিদের প্রথম জামাত সকাল ৮টায়, গে-ারিয় ধূপখোলা ময়দানে সকাল ৮টায়, পূর্বগ্রাম ঈদগাঁও মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায়, আবুজর গিফারী কলেজ মাঠে সকাল ৮টায়, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায়, পল্লীমা সংসদ ময়দানে ঈদ জামাত সকাল ৮টায়, নুরানী জামে মসজিদ লক্ষীবাজার সাড়ে ৮টায়, ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্ম সকাল সাড়ে ৮টায়, মীরবাড়ি আদি জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়, মগবাজার বিটিসিএল কলোনি জামে মসজিদ সকাল ৮টায়, নয়াপল্টন জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, মশুরীখোলা শাহ্ সাহেববাড়ি জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা ॥ দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে রহমতের দ্বিতীয় জামাত ৯.৩০টায়, সায়েদাবাদ আরজুশাহ পাক দরবার শরীফের বড় জামে মসজিদের দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায়, গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ১০টা থেকে পরবর্তী ॥ দেওয়ানবাগ শরীফের বাবে রহমতের তৃতীয় জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। সায়েদাবাদ আরজুশাহ পাক দরবার শরীফের বড় জামে মসজিদের তৃতীয় জামাত সকাল ১০টায়, বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বনানী দরবার শরীফে সকাল সাড়ে ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদগাহের আশপাশে কড়া নিরাপত্তা বলয় স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ঈদের দিন সকাল সাড়ে আটটায় প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের একদিন আগেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের সব অস্থায়ী ও ভাসমান দোকানপাট তুলে দেয়া হবে। সব ধরনের হকারের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঈদের দিন সকাল ছয়টা থেকে দুপুর এগারোটা পর্যন্ত ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। ডিএমপি জানান হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ নানা ইস্যুতে এবারের নিরাপত্তা থাকছে খুবই কঠোর। পুরো এলাকা গোয়েন্দা নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজর রাখতে বসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কন্ট্রোলরুম। ময়দানের আশপাশের উঁচু ভবনগুলোর ছাদে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হচ্ছে। সেখান থেকে শক্তিশালী বাইন্যুকুলার দিয়ে পুরো এলাকার ওপর নজর রাখা হবে। ময়দানের প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হচ্ছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টরের ভেতর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর ময়দানে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। ঈদের নামাজ শুরুর আগে পুরো এলাকায় তল্লাশি চালাবে পুলিশ ও র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী একাধিক দল। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের নামাজের প্রথম জামাতে অংশ নিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, বিচারপতি, কূটনৈতিক, উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিগণ। পবিত্র ঈদের দিন ভোর ছয়টা থেকেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের রাস্তায় যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যানবাহনগুলোকে ময়দানের খুব কাছাকাছি রাস্তা পরিহার করে বিকল্প রাস্তায় চলতে বলা হয়েছে। এছাড়া যানবাহনগুলোকে নির্ধারিত জায়গায় পার্কিং করতে নির্দেশ জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। যানবাহন চলাচল ॥ * জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিকটবর্তী নির্ধারিত পার্কিংয়ে শুধুমাত্র ভিভিআইপি ও ভিআইপিগণের গাড়িসমূহ মৎস্য ভবন হয়ে প্রবেশ করবে। * অন্যান্য ব্যক্তিদের গাড়ি এবং বাণিজ্যিক যানবাহনসমূহ সরকারী কর্মচারী হাসপাতাল মোড়-প্রেসক্লাব লিংক রোড-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পিছনের গলি সাব-কন্ট্রোলরুম গ্যাপ-ইউবিএল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর ক্রসিং-মৎস্য ভবন ক্রসিং এ স্থাপিত ব্যরিকেডের বাইরে পার্কিং ও চলাচল করবে। ভিআইপিসহ বিশিষ্ট জনদের গাড়ি পার্কিং এলাকা ॥ * সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের আশপাশের নিম্নবর্ণিত স্থানসমূহ পার্কিং এলাকা হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। * জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে সুপ্রীমকোর্টের অভ্যন্তরে গোল চত্বরের নিকট রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর (ভিভিআইপি অ্যালাইটিংয়ের পশ্চিম পার্শ্ব)। * সুপ্রীমকোর্টের ভেতরে দক্ষিণ-পশ্চিম কর্ণারে (মাজার সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে) বিচারপতিগণের গাড়ি পার্কিং। * জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রধান গেটের উত্তর-পশ্চিম দিকে মন্ত্রীপরিষদ সদস্যসহ ভিআইপিদের গাড়ি পার্কিং। * গণপূর্ত ভবনের আঙ্গিনা ও অভ্যন্তরে সরকারী কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গাড়ি পার্কিং। সাধারণ পার্কিং এলাকা ॥ * জিরো পয়েন্ট ও ইউবিএল ক্রসিংয়ের (মুক্তাঙ্গণ) উভয় পার্শ্ব, দোয়েল চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর পার্শ্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল থেকে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্ব, মৎস্য ভবন ক্রসিংয়ের পূর্বদিকে কার্পেট গলি রোড ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্ব। মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ ॥ জাতীয় ঈদগাহে আগত মুসল্লিদের মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি না আনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ধর্ম ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রাতে এক সরকারী তথ্য বিবরণীতে বিষয়টি জানানো হয়।
×