ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৭ জুলাই ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ সত্যি সুন্দর একটি সময়। রাজধানীজুড়ে আনন্দ। হাসিমাখা মুখ। কী যে ভাললাগে দেখতে! যেন এ শহরের বুকে কোন ক্ষত নেই। ব্যথা-বেদনারা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিয়েছে। শীতে সবাই যেমন চাদর গায়ে দেন, তেমনি রাজধানীর দুঃখী মানুষ শোকগ্রস্ত মানুষ আনন্দের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন! সবাই সক্কলে এখন খুশি। খুশি থাকার প্রচেষ্টা যারপরনাই দৃশ্যমান হচ্ছে। কারণ আর কিছু নয়, ঈদ যে! মাত্র আর একটা দিন। আগামীকাল শনিবার ঈদ কিংবা পেছাতে পারে আরও একদিন। সে ক্ষেত্রে রবিবার উদ্যাপিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। শহরের সর্বত্র চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রাজধানী ঢাকায় ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে যায় প্রথম রমজান থেকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অনেকেই একটু একটু করে কেনাকাটা সারছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, ২৭তম দিনে বুধবার রাত ১টার পর বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে গিয়ে মনে হয় ভরদুপুর। নারী-পুরুষ-ছেলে-বুড়ো কেউ বাদ যাননি। সবার সরব উপস্থিতি। অনেক ক্রেতার মুখে ক্লান্তির ছাপ। এক স্ত্রী তাঁর স্বামীকে উদ্দেশ করে বলছিলেন, আমি আর হাঁটতে পারছি না। চলো না, বাসায় চলো। কেউ কেউ সিঁড়িতে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। তার পর নবোদ্যমে কেনাকাটা। দোকানিরাও বলতে পারছিলেন না ঠিক কখন দোকান বন্ধ করবেন। এক বিক্রেতা শুধু বললেন, ক্রেতা যতক্ষণ আছে আমরাও থাকব। পোশাকের কেনাকাটা শেষ করেছেন যাঁরা তাঁরা ব্যস্ত এখন জুতো কেনায়। বৃহস্পতিবার এলিফ্যান্ট রোডে গিয়ে দেখা যায়, জুতোর ছোট ছোট দোকানে গিজগিজ করছে ক্রেতা। জুতো পছন্দ করছেন কেউ। কেউ পায়ে লাগিয়ে মাপজোখ পরীক্ষা করছেন। ছেলেরা পাঞ্জাবি-পাজামার সঙ্গে মানানসই স্যান্ডেল খুঁজে নিচ্ছে। মেয়েদের জুতো আবার পোশাকের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করা আবশ্যক। তাই খোঁজাখুঁজিটা বেশি বলেই মনে হলো। পুরান ঢাকার আরিফুর রহমানকে খুব পেরেশান মনে হচ্ছিল। কারণ জানতে চাইলে নিজের ১৫ বছরের মেয়েকে দেখিয়ে তিনি বললেন, ওর জন্য অনেক দাম দিয়ে জামা কিনেছি। কিন্তু জুতোর রংটা মেলানো যাচ্ছে না। কয়েক ঘণ্টা ধরে এই নিয়ে আছি। জামা-জুতো ছাড়াও এখন কোমড়ের বেল্ট, গহনা, পারফিউম, আতর, টুপি ইত্যাদি কেনায় ব্যস্ত উৎসবপ্রিয় বাঙালী। ঈদ এলেই কদর বাড়ে নতুন টাকার। রাজধানীর গুলিস্তান হকার্স মার্কেটের সামনে ফুটপাথে এখন নতুন টাকার পসরা। সারাবছরই এখানে পুরনো-ছেঁড়া টাকা পাল্টানো, ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা বা অনেক আগের মুদ্রা বেচাকেনা বা নতুন টাকার বেচাকেনা হয়। তবে ঈদের সময় পাল্টে যায় রূপ। অনেক ক্রেতা দু’তিনবার দরদাম জিজ্ঞেস করে উত্তর না পাওয়ায় চলে যাচ্ছেন পাশের দোকানে। এসব দোকানে তারা দুই টাকা থেকে এক হাজার টাকা বিকিকিনি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে চাহিদা দুই, পাঁচ, দশ আর বিশ টাকার নোটের। এর মধ্যে বেশি দাম দশ টাকার। বিক্রিও বেশি দুই আর দশ টাকার নোটের। তবে নতুন নোটের দাম এবার অনেক বেশি বলে জানা গেছে। ১২ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত মোহাম্মদ মোবারক। তিনি জানান, সাপ্লাই কম তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্য বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনেই নতুন টাকা বেচাকেনার বাজার বসত। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীরা তা আর বসতে দিচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটক ছেড়ে পাশেই সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে বসেছে নতুন টাকার পসরা। কেউ কেউ ছোট ছোট ব্যাগের মধ্যে নতুন টাকা নিয়ে আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যেই হাতে নতুন টাকা সাজিয়ে বসে-দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০০ টাকার একটা বান্ডিলের জন্য ক্রেতাদের অতিরিক্ত ৩শ’ টাকা, ৫০ টাকার একটি বান্ডিলের জন্য ২শ’ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিলের জন্য ১৫০ টাকা, ১০ টাকার বান্ডিলের জন্য ১৪০ টাকা, ৫ টাকার বান্ডিলের জন্য ৮০ টাকা এবং ২ টাকার বান্ডিলের জন্য ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে।
×