নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজনস থেকে পাঠানো বামন গ্রহ প্লুটোর ছবি থেকে দেখা যায়, প্লুটোর বুকে পৃথিবীর মতোই বড় আকারের বরফের পাহাড় রয়েছে। ছবিতে প্লুটো ও এর চাঁদ শ্যারনের ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার নিদর্শনসমূহও দেখা গেছে। নাসার মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান থেকে তোলা এই ছবিগুলোই এখন পর্যন্ত প্লুটোর সবচেয়ে বিস্তারিত ছবি।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে নাসার অভিযান নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রে আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে বিজ্ঞানীরা বুধবার নিউ হরাইজনসের তোলা বামন গ্রহ প্লুটোর ছবিগুলো প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করেন। এই অভিযানের বিজ্ঞানী জন স্পেনসার বলেছেন, খুব কাছ থেকে তোলা ছবিতে প্লুটোর পৃষ্ঠে বিস্তৃত ভূখ-ের মতো দেখা গেছে, যা গত ১০ কোটি বছরের মধ্যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনর্গঠিত হয়েছে। বরফের পর্বতটি ১১ হাজার ফুট উঁচু। তারা এই পর্বতটিকে উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতমালার সঙ্গে তুলনা করেছেন। নাসা জানিয়েছে, প্লুটোর নিরক্ষীয় অঞ্চলের যে ছবি নিউ হরাইজনস পাঠিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সেখানে একটি অপেক্ষাকৃত তরুণ পর্বতমালা রয়েছে। ওই নিরক্ষীয় অঞ্চলটি প্লুটোর মোট ভূভাগের এক শতাংশের কম। ধারণা করা হচ্ছে, ওই অঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনের কাজ এখনও চলছে ওই এলাকায়। ওই পর্বতে কোন খাদও দেখা যাচ্ছে না এবং সৌরজগতে এমন নবীন স্থান এর আগে কখনও দেখা যায়নি বলেও জানিয়েছেন তারা।গবেষকরা জানিয়েছেন, বড় বড় গ্রহগুলোর বরফে ঢাকা উপগ্রহগুলোর মতো প্লুটোর ক্ষেত্রে কোনও বৃহত্তর সৌরবস্তুর সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণজনিত কারণে উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই অন্য কিছু প্রক্রিয়ায় ওই পার্বত্য এলাকা তৈরি হয়েছে বলে তাদের অনুমান। প্লুটোর জলীয়-বরফমোড়া ভূপৃষ্ঠ দিয়েই ওই পর্বত গড়ে উঠেছে। কারণ প্লুটোর ভূস্তরের বেশিরভাগেই রয়েছে মিথেন ও নাইট্রোজেন বরফ। আর তা পাহাড় গঠনের পক্ষে ততটা শক্তপোক্ত নয়। এখন এটি পরিষ্কার যে প্লুটো নিস্তেজ এবং মৃত কোন গোলকপি- নয়। প্লুটো অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী এ্যালান স্টার্ন বলেন, এখন আমরা এমন একটি বিচ্ছিন্ন, ছোট গ্রহ পেয়েছি যেটি সাড়ে চার শ’ কোটি বছর পরেও সক্রিয় রয়েছে। প্লুটোর পাশ দিয়ে সফলভাবে উড়ে যাওয়ার সময় এই ছবিগুলো তোলে মহাকাশযানটি। সৌরজগতের প্রান্তবাসী সদস্য প্লুটোর ৭ হাজার ৭৬৭ মাইলের মধ্যে পৌঁছানোর ১৩ ঘণ্টা পর মহাকাশযানটি বুধবার প্রথম সঙ্কেত পাঠায়। সাড়ে নয় বছর ধরে তিন শ’ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্লুটোকে প্রথমবারের মতো পরিদর্শন করে মহাকাশযান নিউ হরাইজনস। প্রতি সেকেন্ডে ১৪ কিলোমিটার বেগে প্লুুটোর পাশ দিয়ে উড়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত মহাকাশযানটি। তার পাঠানো ছবিতে ধরা পড়েছে বামন গ্রহের অজানা রূপ।
মহাকাশযানটি প্লুটো থেকে ৭ হাজার ৭৬৭ মাইল দূর দিয়ে যাওয়ার সময় মহাশূন্যে ভাসমান চালের দানার মতো কোনও বস্তুর আঘাতে নিউ হরাইজনস ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন ব্যবস্থাপকরা। তাদের হিসেবে এর সম্ভাবনা ছিল ১০ হাজার ভাগের একভাগ। -বিবিসি ও ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস