ঈদের আনন্দের ভেতর অতিবর্ষণে পাহাড়ী ঢলে ভূমিধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। নদী-নালা-খাল-বিলের এই দেশে বর্ষাকালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু অতিবর্ষণ দুর্ভোগ বয়ে আনে। নদীসমূহ এরই মধ্যে প্রমত্তা হয়ে উঠেছে। বন্যার পদধ্বনি এই মুহূর্তে আমরা শুনছি না বটে, তবু আশঙ্কা থেকে মুক্তি মিলছে না। মানুষ নিরানন্দ ও বিড়ম্বনার শিকার হতে চলেছে। আমাদের দুর্ভোগ যে আর কাটে না। এই তো কয়েক সপ্তাহ আগেও গ্রীষ্মের দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়েছিল। এখন টানা বর্ষণে বসতবাড়িই পানিতে সয়লাব। ভারি বর্ষণে নানা দুর্ভোগে জীবন অচল হয়ে পড়ার দশা। গত কয়দিনের ভারি বর্ষণে রাজধানীর যে বিপর্যস্ত অবস্থা তা স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদেরই অপরিণামদর্শিতাকে। ঢাকার খাল ও জলাশয়গুলো ভরাট করে আমরা স্থাপনা গড়েছি। এখন টানা বৃষ্টিতে পানি সরবে কোথায়? ওদিকে পাহাড়ে শুরু হয়ে গেছে মৃত্যু। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, কক্সবাজার ও বান্দরবানে পাহাড়ী ঢল-ধস ও গাছ চাপায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়। নিম্নচাপের প্রভাবে শ্রাবণের বিরামহীন বর্ষণে গোটা দেশ বিপর্যস্ত। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। বহু মানুষ পানিবন্দী।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই সংবাদপত্রে আমরা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ও ধসে মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাই। বাধ্য হয়ে মানুষকে পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করতে হয়। এটি কেবল ঝুঁকিপূর্ণই নয়, বেআইনীও বটে। এ বছর প্রশাসন আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ। বসতি স্থাপনকারীদের আগেভাগেই নোটিস দেয়া হয়েছে, সরে যাবার জন্য মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও বিশেষ সাড়া মেলেনি। অগত্যা প্রশাসন প্রাণহানি রোধে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে।
প্রশাসনের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরের ১১টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ছয় শতাধিক বসতি রয়েছে। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেও পাহাড় ধসে প্রাণহানি যেন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনাটি ঘটেছিল আট বছর আগে। ঘুমন্ত অবস্থায় জীবন্ত সমাধি হয়েছিল শিশু ও নারীসহ শতাধিক মানুষের। এর পরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটি পাহাড় ধসের কারণসমূহ চিহ্নিত করার পাশাপাশি ৩৬ দফা সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিল। দুঃখের বিষয়, সেসব সুপারিশের সুরাহা হয়নি। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা সম্ভব হয়নি।
প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুদের অপকর্মের ফল ভোগ করছে নিরীহ মানুষ। কিন্তু এই অবস্থা চলতে পারে না। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। সে লক্ষ্যে এখনই উদ্যোগ নেয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে অতিবর্ষণে জীবন স্থবির না হয়ে পড়ে; পাহাড় ধসে আর যেন কোন মৃত্যু সংবাদ শুনতে না হয়।
শীর্ষ সংবাদ: