ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে প্রকৃতির পাশে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২২ জুলাই ২০১৫

ঈদে প্রকৃতির পাশে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ঈদের ছুটি শেষে অফিস-আদালত আবার কর্মমুখর হয়ে উঠছে। কিন্তু পর্যটকদের দেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ ঘুরে বেড়ানোর তৃপ্তি যেন কিছুতেই মিটছে না। তাই ঈদের ছুটির পরও কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট ও মাওয়ায় পদ্মার পাড়ে এখনও পর্যটকদের ঢল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পর্যটকদের নিয়ে কক্সবাজার থেকে স্টাফ রিপোর্টার এইচএম এরশাদ, বান্দরবান থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা এস বাসু দাশ, সিলেট থেকে স্টাফ রিপোর্টার সালাম মশরুর এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঈদের পর থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটক দম্পতিরা। ঈদ-উল-ফিতরের দিন ও পরদিন থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলে দলে পর্যটক যাচ্ছে কক্সবাজারে। পর্যটকদের উচ্ছ্বাস যেন নব উদ্যমে রাঙ্গিয়ে তুলেছে সৈকত রানী কক্সবাজারকে। রমজানের শেষে ঈদের খুশিতে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জেলার পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ছোট বড় প্রায় ৩ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ কিংবা ফ্ল্যাট বাড়িগুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও হরতাল-অবরোধ না থাকায় নির্ভয়ে পর্যটকরা মনের আনন্দে ভ্রমণ করে চলছে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে। তবে সোমবার থেকে সরকারী অফিস ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার দিন হওয়ায় রবিবার রাতে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন অনেকে। দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের দেখা পেয়ে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও খুশিতে মাতোয়ারা গাড়ি চালকরা। বাস-মিনিবাস, রিক্সা-টমটম, সিএনজি থেকে শুরু করে পরিবহন সেক্টরে বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত খুশি। তাদের মতে সাগরকন্যা কক্সবাজারে গত কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার পর্যটক যাওয়ায় দীর্ঘদিনের হতাশা কাটিয়ে নব উদ্যমে পর্যটন ব্যবসা চালু হয়ে উঠেছে। ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি ও পর্যটন নগরীতে আনন্দ ভ্রমণের দিনগুলোকে স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে কেউ ভিডিও কেউবা ক্যামেরা বন্দী করে রাখছে। কিশোরগঞ্জের পর্যটক দম্পতি শাহেদ ও রাহেলা খানম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত তিন মাস ধরে অহেতুক অবরোধ-হরতাল দিয়ে পর্যটন মৌসুমে আমাদের কক্সবাজারে ভ্রমণে আসতে বাধাগ্রস্ত করেছে। বহু ক্ষতি সাধন করেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের। বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় নির্দ্বিধায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু রামকুট ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আমরা মনের আনন্দে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছি। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হওয়ার অনুরোধ করেছেন। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কাশেম সিকদার জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এবার ঈদে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হয়েছে কক্সবাজারে। এস আলম সার্ভিসের কক্সবাজারস্থ ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন ও আলম জানান, ঈদের পরদিন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মহাসড়কে পর্যটকদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারে, এ জন্য পরিবহনগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের নিয়ে নিরাপদে পৌঁছেছে কক্সবাজারে। পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকরা যাতে কোন ধরনের ছিনতাই বা হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশে সৈকতে পুরুয়ের সঙ্গে মহিলা পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলো। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সীমাবদ্ধ না থেকে পর্যটকগণ ছড়িয়ে পড়ছেন ইনানী পাথুরে বীচ, হিমছড়ির অপরূপ ঝর্ণা, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, ইনানী রোডে দর্শনীয় স্পট দরিয়ানগর, রামুর নব-নির্মিত বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরের অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে। মঙ্গলবার ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে সন্ধ্যার পর ভিড় করছে দেশ-বিদেশের পর্যটকগণ। বার্মিজ পণ্যের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পের বিভিন্ন পণ্যাদি কিনছে পর্যটকরা। সৈকতের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, শীতকালীন মৌসুম ছাড়াও প্রতিবছরে দুই ঈদ হচ্ছে আমাদের ব্যবসার অন্যতম মৌসুম। এ জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। এ উপলক্ষে সামর্থ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করে থাকি পুঁজি। এবার ভারি বর্ষণের কারণে কিছুটা মøান হলেও ব্যবসায় মোটামোটি ক্ষতি হবে না আশা করছি। পর্যটকগণ এভাবে পর্যায়ক্রমে আসতে থাকলে হয়ত অতীতের লোকসানটুকু পুষিয়ে উঠতে পারব। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, এবার ঈদের ছুটিতে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে জমে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়ছে পর্যটকের ভিড়। তবে বৃষ্টির কারণে এবার ঈদের আগের দিন থেকে পর্যটকদের কেউ কেউ বুকিং বাতিল করেছে। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা ঢাকার জমির উদ্দিন ও আলেয়া দম্পতি বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ঘুরতে এসে ভালই লাগছে। ইতোপূর্বে কক্সবাজারে বৃষ্টি দেখিনি। তবে এবার বৃষ্টিতে ভিজে সাগরে গোসল করতে দারুণ মজা পেয়েছি। মুখরিত বান্দরবান ॥ ঈদের ছুটিতে হাজারো পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বান্দরবান। শহরের বেশিরভাগ হোটেল-মোটেলেই এখন আর কোন সিট খালি নেই। বর্ষা মৌসুমের কারণে মন্দা কাটিয়ে জেলার পর্যটন ব্যবসা আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে হাজারো পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে বান্দরবানে, এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। সবুজের চাদরে ঢাকা প্রকৃতিকে দেখার এবং সারি সারি পাহাড়ের ওপর দিয়ে মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য দেখার অপূর্ব সুযোগ বর্ষা মৌসুম হলেও বছরের মাঝামাঝি হওয়ায় এবং দুর্গমতার কারণে যাতায়াতের অসুবিধা থাকায় বর্ষা মৌসুমটা একপ্রকার বসেই কাটে পর্যটন সংশ্লিষ্ট লোকজনের, তবে ঈদে পর্যটকদের বাধ ভাঙ্গা জোয়ার নেমেছে জেলায়। বান্দরবানের নীল আচল পর্যটন কেন্দ্রের ম্যানেজার জয় ত্রিপুরা বলেন, বৃষ্টির কারণে ঈদের দ্বিতীয় দিন পর্যটক না আসলেও তৃতীয় দিন থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসতে শুরু করেছে। পর্যটক আগমনের কথা মাথায় রেখে ঈদের আগে থেকে জেলার পর্যটন স্পটগুলোর সৌন্দর্য বর্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তাই জেলার নীলগিরি, প্রান্তিকলেক, মেঘলা, নীল আচল, স্বর্ণমন্দির, রুমা উপজেলার বগালেক, কেউক্রাডং দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকদের আগমনের কারণে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, দুইদিন ধরে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ঈদের দুইদিন পর্যটন না আসলেও স্থানীয় শতাধিক হোটেল-মোটেল এক সপ্তাহের জন্য বুকিং হয়ে আছে। ঈদের তৃতীয় দিন থেকেই জমে উঠা পর্যটন ব্যবসা আগামী ১ সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এমন আশা পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। জেলা শহরের হোটেল পালকি গেস্ট হাউসের কর্ণধার আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের সব হোটেলে বুকিং হয়ে আছে, কোন সিট খালি নেই। জাফলং রাতারগুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটক ॥ নামী দামী হোটেলগুলো আগে থেকেই বুকিং হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই লোকের আগমন শুরু হতে থাকে। নগরীর প্রথম শ্রেণীর হোটেলের পাশাপাশি মধ্যমমানের হোটেলগুলোতেও এবার লোকের চাপ ছিল। এখনও লোকের উপস্থিতি আশানুরূপ বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। আনন্দ যেন শেষ হতে চায় না। ঈদ ঘিরে ভ্রমণ পিপাসুদের ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকাগুলো মঙ্গলবারও ছিল পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। জাফলং, ভোলাগঞ্জ, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, লালাখাল, পাংথুমাই, শ্রীপুরসহ সিলেটের অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোকে টার্গেট করে ছুটে আসছেন সৌন্দর্য পিপাসুরা। ছুটি শেষ হয়ে গেলেও পর্যটন কেন্দ্রেগুলোতে লোকের কমতি নেই। ভাঙ্গা-চুরা রাস্তায় যাতায়াত ক্ষেত্রে অব্যবস্থার কারণে জাফলং বল্লাঘাট-জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ছোট গাড়ি পৌঁছতে পারছে না। কিছু জায়গা হেঁটে যেতে হচ্ছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় যাওয়া রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে পথে কেউ এগুতে পারছেন না। এবার বিছনাকান্দি কোয়ারী এলাকায় পর্যটকদের সর্বাধিক ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাথর, বালি, নদী আর পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে আছে রূপের চাদর। অসংখ্য ঝর্ণা দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে রাশি রাশি জল। এমন দৃশ্য চোখ জুড়াবে সকল মানুষেরই। তাই ভরা বর্ষায় এই ঈদের ছুটিতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়েই পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। ঈদের দিন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসছেন প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকদের গাড়ি চাপে সিলেট-জাফলং সড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। জাফলংয়ে পাহাড়ের গায়ে নদীর ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড় টিলা, পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ভেসে ভেড়ানো মেঘ, আদিবাসী খাসিয়াপুঞ্জি, সমতল চা বাগান দেখতেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ পর্যটকদের। একই অবস্থা সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখালেও। চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচে লালাখালের অবস্থান। সারি নদীর পান্না সবুজ জল, সবুজ পাহাড় আর চা বাগান দেখতে এখানে গত কয়েকদিন ধরে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভিড় করেছেন। জল আর বন। এই হলো রাতারগুল। অনেকে এটাকে সুন্দরবন বলে থাকেন। সিলেটে এট সুন্দরবন বলেই পরিচিত। নাগরিক কোলাহল ফেলে কিছুক্ষণের জন্য নৌকায় চড়ে গহীন জঙ্গলের অজানায় হারিয়ে যাচ্ছেন পর্যটকরা। পাংথুমাইয়ের ঝর্ণা দেখতেও প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক পর্যটকদের ভিড় জমছে। সিলেটে এবার পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় বিছানকান্দিতে। পাহাড়, ঝর্ণা, পাথর, সবুজ এই সব মিলিয়ে বিছানাকান্দির স্বর্গীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঢল নেমেছে পর্যটকদের। বিছনাকান্দির ঝর্ণার জলে গা ভিজিয়ে নাগরিক ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন পর্যটকরা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার ঈদে সিলেটে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটেছে। বিশেষত জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও লালাখালে তো মানুষের ভিড়ে হাঁটারও জায়গা নেই। তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় সিলেটে পর্যটর সমাগম বেশি হয়েছে। মাওয়ায় পদ্মা পারে এখনও পর্যটকদের ঢল ॥ বৃষ্টি উপেক্ষা করে লৌহজং উপজেলার মাওয়া পদ্মা পারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ঈদের পরে তৃতীয় দিনেও এই ভিড় চলছে। শুধু মাওয়াই নয়, পর্যটকদের ভিড় ছড়িয়ে পড়ে লৌহজংয়ের পদ্মা রিসোর্ট, মাওয়া রিসোর্ট, পদ্মার চর, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর আশপাশসহ পদ্মা পারের কয়েক কি.মি. বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে পর্যটকরা আসছেন সপরিবারে। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে বন্ধুদের নিয়ে একে অন্যের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উপভোগ করেছে বালু চড়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ, নদীতে গোসল করা আর পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত যাবার অভাবনীয় দৃশ্য দেখা। একই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পদ্মা পাড় ছেড়েছেন দূর-দূরান্তের পর্যটকরা। ঈদের দিন বিকেলে পরদিন রবিবার এবং ছুটি শেষে মঙ্গলবারও পদ্মা পারে পর্যটকদের ভিড় ছিল নজর কাড়ার মতো। নানা সমস্যার ইট পাথরের মধ্যে নগর জীবনের বসবাস ছেড়ে অনেকেই ছুটে আশেন এই মুক্ত পরিবেশে। রাজধানীর ত্যক্ত-বিরক্ত মানুষগুলো এখানে এসে দেখেছেন প্রকৃতির নানা ছন্দ। উত্তাল পদ্মার ঢেউ, হরেক রকম নৌযানের চলচল আর আর চরের জীবন যাত্রা। রাজধানী ঢাকার কাছের এই এলাকাটি যেন এক পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে। বৃষ্টিও বেধে রাখতে পারেনি পর্যটকদের। রাজধানী ছাড়াও কেরানীগঞ্জ, দোহার, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, টঙ্গীবাড়ি, শ্রীনগর, সিরাজদিখানসহ কাছাকাছি বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকেও পর্যটক আসে পদ্মার নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে। ঘুড়ে বেড়াচ্ছে বালুময় এই পদ্মা পারে। অনেকে আবার নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে চলে গেছেন পদ্মা নদীর মাঝে জেগে উঠা চরগুলোতে ঘুরে বেড়াতে। সেখানে মজা করে বিভিন্ন খেলায় মেতে আছেন পর্যটকরা। মুক্ত বাতাসে আনন্দ আর উল্লাসে মেতেছে পর্যটকরা তাদের সঙ্গী সাথীদের সঙ্গে। অনেকে আবার কিংবা স্পিডবোট চড়ে বেড়িয়েছেন পদ্মার বুকে। তবে উত্তাল থাকায় অনেকে পদ্মায় নামেননি। পাশে থেকেই ভরা বর্ষায় পদ্মার যৌবন দেখেছেন। পদ্মা পারের নৈস্বর্গিক দৃশ্য দেখতে কার না ভাল লাগে। সঙ্গে প্রিয়জন স্ত্রী-সন্ত্রান থাকলে সময়টা আরও ভাল কাটে। অনেকেই এখানে এসে বিমোহিত হয়েছেন। লৌহজংয়ের পদ্মা রিসোর্ট ও মাওয়া রিসোর্টও ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ঢাকার বানানীর বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পদ্মা তীরে এসে সময় কাটান। বৃষ্টিতে তিনি সপরিবারেই ভিজেছেন। মিরপুরের কনিকা আক্তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ধানম-ির সুমাইয়া রহমান বলেন, ‘নদী, নৌকা, খরের স্থূপ, রাখালের গরু নিয়ে ছোটাছুটি আর নদীর আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখতে অনেক ভাল লাগছে, আর বৃষ্টি নানা সমস্যার সৃষ্টি করলেও এরই মাঝে দেখা গেছে প্রকৃতির ভিন্ন চেহারা। পদ্মায় এখন বিশাল চর। এই চরের পাশ দিয়ে ঘোড়দৌড়েরের পাশে এখন পদ্মার একটি শাখা মৃদু বয়ে চলছে। এখানে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই যেন আলাদা। সেখানে মজা করে বেড়িয়েছেন পর্যটকরা। এছাড়া শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখালের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈত্রিক বাড়ির পিকনিক স্পটে এবং মুক্তারপুর সেতুতেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় পড়ে। ভিড় পরের শহরের ইউরো পার্ক, গজারিয়ার মেঘনা ভিলেজসহ নানা আকর্ষণীয় স্থানে। ব্যস্ত মানুষগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করেছে। বৃষ্টি এতে বাঘরা দিলেও অনেকের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বেড়িয়ে গেছে সব কিছু উপেক্ষা করে।
×