ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনন্দন এডিবির

ব্রিকস ব্যাংকের কাজ শুরু হলো

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২২ জুলাই ২০১৫

ব্রিকস ব্যাংকের কাজ শুরু হলো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বের বৃহৎ উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর জোট ব্রিকস ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার চীনের সাংহাই এ এনডিবি (নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) নামে একটি ব্যাংক অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে। অন্যদিকে নতুন এ ব্যাংকের যাত্রাকে স্বাগত জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে এক প্রেস নোটে স্বাগত জানান এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকা। সূত্র জানায়, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মিলিত জোট ব্রিকসের এ ব্যাংকটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঋণ বিতরণ করবে। মূলত অবকাঠামো খাতে এ ঋণ দেয়া হবে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর আদলে গড়ে ওঠা এ ব্যাংকটি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বলে ঘোষণা দিয়েছে ব্রিকস। নতুন ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)-এর প্রেসিডেন্ট কুন্দপুর বমনকামাথ বলেছেন, প্রচলিত পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য নয়, বরং আমরা ওই পদ্ধতির উন্নয়ন ও পূর্ণতার জন্যই কাজ করব। আগামী বছর ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার উফায় ব্রিকসের সম্মেলনের দুই সপ্তাহ পরই নতুন এ ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করল। ইতোমধ্যেই ব্রিকসে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিসর আর্জেন্টিনা, ইরান, নাইজেরিয়া ও সিরিয়া। নতুন ব্যাংক বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব)ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের একেবারে বিকল্প না হলেও প্রতিযোগিতা বাড়বে। আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এখন যেভাবে একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করে এবং শর্ত আরোপ করে, সেখানে এরকম একটি ব্যাংকের অভ্যূদয় ইতিবাচক। এতে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, জাপান, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বর্তমান সরকার সেই সম্পর্ক আরও উন্নয়নের চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে অবকাঠামো খাতে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্রিকস ব্যাংক প্রতিষ্ঠা একটি অনুকূল অবস্থা বলে মনে করছি। মঙ্গলবার ম্যানিলায় অবস্থিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক স্টেটমেন্টে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকা বলেন, আজ থেকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তাদের দরজা খুলল। এজন্য আমরা নতুন এ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কে.ভি. কামাথ এবং এর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত ও স্টাফদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিশ্ব পরিবারে আরও একটি নতুন সদস্য যোগ হলো। আমরা এশিয়া এ্যান্ড প্যাসিফিক অঞ্চলের অভিন্ন স্বার্থে কাজ করব। সম্ভব হলে এই অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ও টেকসই উন্নয়নে সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে অথবা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে কাজ করব। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৫ থেকে ১৭ জুলাই ব্রাজিলের ফোরতালেজায় অনুষ্ঠিত পাঁচটি অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশের জোট ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষণা আসে ব্রিকস ব্যাংক প্রতিষ্ঠার। অনেক দিন ধরেই অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলো চাচ্ছিল বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) তাদের অংশীদার বাড়াতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইএমএফের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তাই পশ্চিমা বিশ্বের কর্তৃত্বেই রয়ে গেছে এ দুটি সংস্থা। উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলোকে অর্থায়ন ও সহযোগিতা করলেও তা যথেষ্ট উপকারে আসেনি। এ প্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্যোগে বিকল্প অর্থায়নকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের একটি চাহিদা তৈরি হয় বেশ আগে থেকেই। শেষ পর্যন্ত তা ব্রিকস ব্যাংক আকারে বাস্তবায়িত হবে। ব্রিকসের ব্যাংক বিষয়ে এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লীড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, ব্রিকস আসছে বাণিজ্যিক মোটিভ নিয়ে। সেটি কোন চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠান হবে না। তারা দান-খয়রাত করতে আসছে না। পৃথিবীর উদীয়মান শক্তি ইন্ডিয়া, চায়না, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল এরা এটা করছে আন্তর্জাতিক পর্যায় অর্থনৈতিক শক্তির ভারস্যাম্য তৈরির জন্য। যেহেতু আমেরিকার ও বৃটেনসহ অন্যদের আছে তাই। এক্ষেত্রে বলা যায় ওনারা ওনাদের স্বার্থেই আসছে। তার মানে এই নয় যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর লাভ হবে না। আগে দেখা যেত শক্তি বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে সামরিক এ্যালায়েন্স গঠন করা হতো। এখন যুগ পাল্টেছে তাই অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে ঋণ দিয়ে। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটি সুযোগ খুলেছে। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার অবকাঠমো উন্নয়নে বছরে ১ দশমিক ৩ থেকে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হওয়ার দরকার। নতুন একটি ব্যাংক হলে তাদের ক্ষমতা কি হবে না হবে সেটি যায় আসে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর কিছুটা প্রভাব ফেললেও লাভ আছে। ড. জাহিদ আরও বলেন, এখানে চীনের স্বার্থ হচ্ছে পৃথিবীর এখন সবচেয়ে বেশি সারপ্লাস অর্থ আছে চীনের কাছে। তারা এটি বিনিয়োগ করে আমেরিকাতে। সেখানে বিনিয়োগ নিরাপদ হলেও লাভ কম হয়। সেক্ষেত্রে ব্রিকসের মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও বেশি লাভজনক হবে। তাই দেখা যাবে উইন উইন সিচুয়েশন হবে।
×