ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কালক্ষেপণ সহ্য করা হবে না

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ জুলাই ২০১৫

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কালক্ষেপণ সহ্য করা হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে এবং সরকারের লক্ষ্য অর্জনে আরও বেশি সক্রিয় হতে সরকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দেশের অধিকতর অগ্রগতির স্বার্থে উন্নয়ন কর্মকা-ে কালক্ষেপণ বরদাশ্ত করা হবে না। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। উন্নয়ন যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। আমি জানি, কাজ করতে গেলে সুবিধা-অসুবিধা অনেক কিছুই আছে, অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু তারপরেও সকলের আগে আমাদের সামনে এটাই থাকতে হবে যে- এদেশের মানুষ, সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্র, কৃষক, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ; তাদের কথাই আমাদের আগে চিন্তা করতে হবে। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। সরকারের আর্থিক নীতি ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সরকারী কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিভাবে টিকে থাকব এটা বড় বিষয় নয়। আমাদের কম সুবিধাভোগী এবং দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই হবে আমাদের দায়িত্ব। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর প্রধান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অধীন সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাদের কাজের ওপর উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কী পেলাম বা পেলাম না, এটা বড় করে দেখলে চলবে না। আমাদের নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের প্রধান বিবেচনা হবে যে, দেশ ও জনগণের জন্য আমরা কতটা সেবা দিতে পারলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলা গড়া ও জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে কর্মকর্তাদের আরও উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ও দেশের উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুফল সবার মাঝে পৌঁছে দিতে কাজ করে। সকল সামাজিক খাতে ব্যাপক সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে, আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। এ প্রসঙ্গে তিনি বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই মেগা প্রকল্প আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, এটি নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করব। আমরা আমাদের এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝেও এ ধরনের আস্থা থাকতে হবে। উন্নয়ন কর্মকা- দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, দেশীয় বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকা বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ দুটোকে আমরা এক করে দেব। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে মোটামুটি পেপার আমাদের তৈরি। শুধু কার্যকর করাটাই এখনও হয়নি। এটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়া উচিত বলেও আমি মনে করি। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল শীঘ্রই বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই পে-স্কেলের পেপার তৈরি হয়েছে। এ মাসে তা বাস্তবায়নের কথা। ইনশাআল্লাহ করে দেব। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের সময় দেশে আয় বৈষম্য কমেছে। সরকারের এই মেয়াদে দেশে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার গ্রামের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য নাগরিক সুবিধাসংবলিত বাড়িঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামের মানুষের জন্য নাগরিক সুবিধাসংবলিত ‘পল্লী জনপদ’ নামে একটি প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য গ্রামের মানুষও যেন নাগরিক সুবিধা নিয়ে বসবাস করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা করে দেয়া। গ্রাম ও শহরের মানুষের বৈষম্য দূর করা। এ সময় তাঁর সরকারের আমলে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠন করার পর নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে। তার কিছু কিছু ফল দেশবাসীকে ইতোমধ্যেই সরকার দিতে পেরেছে। দারিদ্র্যের হার কমানো, ছয় বছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ছয় শতাংশের ওপর ধরে রাখা, রিজার্ভ বৃদ্ধি, বাজেট চারগুণ বৃদ্ধি, সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানো, গড় আয়ু বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একেবারে নিম্নবিত্ত মানুষদের ধীরে ধীরে উপরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ফলে সকলের ক্রয়-ক্ষমতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তবে ‘সকলে মিলে আরেকটু কাজ’ করলে ২০২১ সালের আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরতদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, বিশ্বমন্দার মধ্যেও সরকার গঠন করে আমরা যেভাবে কাজ করেছি তাতে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সামর্থ্য আমাদের আছে, আমরা করতে পারব- এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।
×