ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারের কুদুম গুহা

পাহাড়ের গুহায় হাজারো পাখির বাসা, কলকাকলি- মন কাড়ে সবার

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২২ জুলাই ২০১৫

পাহাড়ের গুহায় হাজারো পাখির বাসা, কলকাকলি- মন কাড়ে সবার

এইচএম এরশাদ ॥ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, আকর্ষণ করে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের। পর্যটকরা ভ্রমণে এসে সাগর ছাড়াও প্রাকৃতিক নানা নিদর্শন দেখে মুগ্ধ হন। সমুদ্র ঘেঁষে বিশাল বিশাল পাহাড়, একই সাগরে দুই রকমের পানি। প্রকৃতির অদৃশ্য বাঁধ দু’রকমের পানিকে আলাদা করে রেখেছে। দু’রংয়ের ওই পানির ওপর দিয়ে চলছে শত শত ট্রলার। কিন্তু পানি মিশছে না, যার যার অবস্থানে যেন অনড়। নীল আর সাদা পানি একত্রে মিশ্রিত করার কোন সুযোগ নেই। সমুদ্রের পানির নিচে বড় বড় পাথর-কোরাল এবং এসব পাথরের ওপর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের লাফালাফি সত্যিই উপভোগ্য। এসব দৃশ্য দেখে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন পর্যটকরা। এছাড়াও সৈকত সংলগ্ন পাহাড়ে ছোট ছোট ছিদ্র করে বাসা বেঁধেছে হাজার হাজার পাখি। পর্যটকরা সৈকত শহর কক্সবাজার থেকে কলাতলী হয়ে মেরিন ড্রাইভের ওপর দিয়ে পাথুরে বিচ ইনানী যাওয়ার সময় দেখতে পান পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহ। ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যায় ইনানী থেকে শহরে ফেরার পথে চোখে পড়ে ভিন্ন এক দৃশ্য- পাহাড়ের বুকে পাখিদের বাসা। আর সেসব বাসার সামনে হাজারো পাখির কলকাকলি, এলোপাতাড়ি ওড়াউড়ি দেখতে রীতিমতো ভিড় লেগে যায় পর্যটকদের। হাজারো পাখির কলকাকলি আর ওড়াউড়ির দৃশ্য দেখে মন ভরে যায় সবার। পাহাড়ের বুকে ছোট ছোট গর্তে পাখির বসবাসের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি সত্যি বিরল। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ পল্লী, রামকোট, একশ’ ফুট লম্বা গৌতম বুদ্ধমূর্তি, হিমছড়ি ঝর্ণা, দরিয়ানগর, ইনানী পাথুরে বীচ, শাহপরী দ্বীপ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, টেকনাফ মাথিনের কূপ, নিদানিয়া কানাই রাজার গুহা ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট রয়েছে কক্সবাজার জেলাজুড়ে। বিভিন্ন সময়ে সারা পৃথিবী থেকে এদেশে যেসব পরিযায়ী পাখি আসে, সেগুলো পরিবেশ দূষণসহ নানা মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়। পাখির নিরাপত্তাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়টিকে জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দিয়ে সবুজ প্রকৃতি পরিবেশ জনগণের অংশগ্রহণে রক্ষার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। পাখিসহ নানা জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবিও জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কক্সবাজারের টেকনাফ ‘কুদুমগুহা’ পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। পাহাড়ের গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক শতাব্দীর পুরনো ওই ‘কুদুমগুহা’। প্রাকৃতিক এই গুহা নিয়ে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ৬১ কিলোমিটার দূরে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের গহীন অরণ্যের এই গুহা নিয়েই গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র। ইতোমধ্যে ইউএসএইডের অর্থায়নে ৫০ হাজার মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। টেকনাফের হোয়াইক্যং গহীন অরণ্যের হরিখোলা চাকমা পল্লী থেকে পায়ে হেঁটে আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ। ঘণ্টাখানেক চলার পর দেখা মেলে আশ্চর্য এই গুহা। ভেতরে হিমশীতল জল। কোথাও কোমর, কোথাও গলা সমান পানি। চাকমা শব্দ ‘কুদুং অও’ থেকে এর নামকরণ করা হয় ‘কুদুমগুহা’। চাকমা পল্লীর বাসিন্দারা জানান, জনশ্রুতি আছে- ওখানে এক পরী বাস করত। মিয়ানমারের (বার্মা) এক ওঝা (বৈদ্য) এসে তাকে হত্যা করে। সেই থেকে এ গুহাটি এভাবেই পড়ে আছে। স্থানীয়রা বলেন, অন্তত ১২০ মিটার লম্বা আর আট ফুট প্রস্থ গুহায় দেখা মেলে চামচিকা, বানর, সাপসহ নানা বন্যপ্রাণীর। কক্সবাজার (দক্ষিণ) বনবিভাগের বিভাগীয় অফিস সূত্র জানায়, ইউএসএইডের অর্থায়নে ৫০ হাজার মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে গুহার উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে।
×