ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুলাল আচার্য

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ তাজউদ্দীন আহমদ

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৩ জুলাই ২০১৫

শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ তাজউদ্দীন আহমদ

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ৯০তম জন্মদিন আজ। ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাজউদ্দীন আহমদ অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর জন্ম ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৪৩ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য মনোনীত হন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ভাষা আন্দোলন, অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি একনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন এর মূল উদ্যোক্তাদের অন্যতম। ১৯৫৩-৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে এমএলএ নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অংশ নিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের সম্মেলনে যোগদান করেন। এই সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর মুক্তি সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন। ওই বছরই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ৬ দফার প্রচারাভিযানের সময় ১৯৬৬ সালের ৮ মে তিনি গ্রেফতার হন এবং গণঅভ্যুত্থানের ফলে ১৯৬৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংগঠিত অসহযোগ আন্দোলনে তাজউদ্দীন আহমদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে অত্যন্ত সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। একটি প্রবাসী সরকার গঠন, তা পরিচালনা করা, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এদেশের মানুষ এবং যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগ; এক কোটি শরণার্থীর খাদ্য, বাসস্থান এবং অন্যান্য প্রয়োজন বিদেশের মাটিতে পূরণ করা কেবল তাজউদ্দীন আহমদের পক্ষেই সম্ভব ছিল। একজন মানুষ কতটা দেশপ্রেমিক হতে পারে, একজন রাজনীতিবিদ কতটা নির্লোভ হতে পারে সেটা তাজউদ্দীন আহমদ জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং স্বাধীন দেশের প্রথম অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর মন্ত্রিত্বের পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই বছরের ৩ নবেম্বর কারাগারে তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর ৯০তম জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
×