ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নৃশংস গণহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৪ জুলাই ২০১৫

 নৃশংস গণহত্যা

নৃশংসতা ও বর্বরতার অপর নাম হিসেবে খ্যাত জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) মূর্তিমান ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবার ঈদের দিনে, ঈদের জামাতেও। মধ্যপ্রাচ্য ও সংলগ্ন আফ্রিকান কয়েকটি দেশে আইএসসহ অন্য জঙ্গী সংগঠনগুলো আত্মঘাতী বোমা হামলা চালালে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি হতাহত হয়। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসবের দিনে অধর্মের কাজটিই করেছে। দিন দিন এদের সন্ত্রাস তথা মানুষ হত্যার পরিমাণ বাড়ছে। এর আগে তারা ঈদ উৎসব পালনের বিরুদ্ধে ফতোয়াও দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর হতে আল কায়েদা, বোকো হারাম, আল শাবাবসহ আইএস জঙ্গীগোষ্ঠীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একই। সে কারণে দেশ ও জাতি গোল্লায় যাক, মানুষ হত্যা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই তাদের কাজ। ইতোমধ্যে তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করে তাদের বর্বর রাজত্ব চালু রেখেছে। এই জঙ্গীগোষ্ঠীতে ৮১টি দেশের ১২ হাজারেরও বেশি বিদেশী যোদ্ধা রয়েছে। এর মধ্যে হাজার তিনেক এসেছে পশ্চিমা দেশ থেকে। এরা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসলামের মর্মবাণীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। শান্তির ধর্মকে তারা অশান্তির ধর্মের লেবাস পরিয়ে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অস্তিত্বকেই বিনষ্ট করতে চায় যেন! এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এরা ছড়িয়ে পড়েছে। আল কায়েদা, বোকো হারাম, আল শাবাবসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে যেসব জঙ্গী সংগঠন বিদ্যমান তারা সবাই আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। গণহত্যা, অনাচার, ধর্ষণ, ব্যভিচার, অন্যায়সহ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গেই এরা সংশ্লিষ্ট। এবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপনের প্রাক্কালে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের ভয়াবহ হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে ইরাক। ঈদের আনন্দে বিভোর মানুষে ঠাসা একটি ব্যস্ততম মার্কেটে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় দেড় শতাধিক নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়। এতে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। হামলার পর ঈদ উৎসব বাতিল করে তিন দিন শোক পালন করা হয়েছে। ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমাংশ আইএসের দখলে। দিয়ালা প্রদেশের দখল নিয়ে লড়াই চলছে। সেখানেই বোমা হামলা চালানো হয়। আফগানিস্তানে এক ঈদের জামাতে বক্তব্য রাখার জন্য প্রাদেশিক গবর্নর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ানোমাত্র মাইক্রোফোনে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিনি নিহত ও অপর আটজন আহত হন। সিরিয়ায় ঈদের নামাজের সময় জঙ্গীরা রাজধানীর বেশ কয়েকটি অঞ্চলে হামলা চালালে ১০ জন হতাহত হয়। নাইজিরিয়ায় ঈদের জামাতে দুই নারী আত্মঘাতী হামলা চালায়। এর মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছর। এই হামলায় ১২ জন নিহত হয়। এর আগের রাতে একটি ব্যস্ত বাজারে জোড়া বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং ৭৫ জন আহত হয়েছে। বোকো হারাম আরও হামলা চালায় দামাতুরা শহরে একটি মসজিদের বাইরে। এতে ১১ জন নিহত হয়। তিনটি হামলাই চালায় নারী জঙ্গীরা। মিসরের সিনাই উপত্যকায় আইএস দুটি সেনা চৌকিতে হামলা চালিয়ে পাঁচ সেনাকে হত্যা করে। মিসর পাল্টা হামলা চালালে ৫৯ জন আইএস সদস্য নিহত হয়। আলজিরিয়ার দেফলা প্রদেশে আল কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক মাগরেবের অতর্কিত হামলায় ১৪ সেনা নিহত হয়। সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের সুরুক শহরে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আইএসের এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। ১৮ বছর বয়সী এক নারী জঙ্গী এই হামলা চালায়। আইএসের সঙ্গে জড়িত ৪৩১ জনকে সৌদি আরব গ্রেফতার করেছে। এরা একসঙ্গে ছয়টি মসজিদে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এরা সৌদি ছাড়াও অন্যান্য দেশের নগরিক। সৌদিতে দু’মাসের ব্যবধানে পাঁচ শতাধিক জঙ্গী গ্রেফতারের ঘটনা একদিকে যেমন স্বস্তির তেমনি উদ্বেগেরও। আইএসসহ সকল জঙ্গী নির্মূলে সময় এসেছে, এই লক্ষ্যে বিশ্ববাসীকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
×