ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চীনে গ্রামে রেখে আসা শিশুদের কঠিন জীবন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৫ জুলাই ২০১৫

চীনে গ্রামে রেখে আসা শিশুদের কঠিন জীবন

চীনের কয়েক দশকের বিপজ্জনকভাবে দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সাধারণ মানুষকে যে মূল্য দিতে হয়েছে দুর্গম পল্লী এলাকার লিয়াং ইউশিউ এবং তার ভাই ঝাওলু যেন তারই জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত। ১০ আর ১২ বছর বয়সী এই দুই শিশু তাদের দাদা-দাদির কাছে থাকে। সপ্তাহান্তে তাদের ধানক্ষেতের দেখাশোনা করে এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিন স্কুলে যায়। তাদের বাবা মারা গেছেন এবং দু’বছর আগে তাদের মা কাজের সন্ধানে চীনের সবচেয়ে বঞ্চিত অঞ্চলগুলোর একটি গুয়ানশির দরিদ্রতম এলাকা শিয়ানযি ছেড়ে চলে যান। খবর এএফপির। ঝাওলু বলে, ‘আমি বাড়িতে দাদা-দাদির টিভিতে যুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করি, তবে ধানক্ষেতে দিনের কাজ শেষ করেই তা দেখার সুযোগ পাই।’ ঝাওলু এবং ইউশিউ চীনের গ্রামাঞ্চলের আনুমানিক ৬ কোটি ১০ লাখ পিছনে রেখে আসা শিশুদের মধ্যে পড়ে, যাদের বাবা-মা কাজের খোঁজে শহরগুলোতে চলে গেছেন কিংবা মারা গেছেন। এই সংখ্যা প্রায় ইতালির জনসংখ্যার সমান। কোটি কোটি অভিবাসীর শ্রম গোঁড়া কমিউনিজমের আওতাধীন একটি কৃষিপ্রধান সমাজকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে রূপান্তর সাধনকে সম্ভব করে তুলেছে। চীনের বসবাসের পারমিটের ‘হুকু’ ব্যবস্থায় কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাওয়া নারী-পুরুষের শিশুরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সমান সুযোগ পায় না এবং তাদের নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে তার মূল্য দিতে হয়। অধিকাংশ শিশুকে তাদের দাদা-দাদি কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা লালনপালন করেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে নিখিল চীন নারী ফেডারেশনের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তিন শতাংশেরও বেশি শিশুকে স্রেফ একাকী রেখে আসা হয়। গতমাসে ৫ থেকে ১৩ বছর বয়সী ৪ ভাইবোন, যাদের পিতামাতা কাজের জন্য বাড়ি ছেড়ে গেছেন, তারা কীটনাশক পান করে মৃত্যুবরণ করে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ ঘটনাকে একটি আত্মহনন চুক্তি বলে বর্ণনা করে। সরকারী শিনহুয়া বার্তা সংস্থা বলছে, গুইঝাউ প্রদেশে তাদের বাড়িতে একটি চিরকুট পাওয়া যায়, যাতে লেখা ছিলÑ ‘আপনাদের দয়ার জন্য ধন্যবাদ, তবে এখন আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে।’ এই মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক গণসমবেদনার জন্ম দেয় এবং প্রধানমন্ত্রী দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ‘এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার অবসান’ ঘটানোর আহ্বান জানান। ইউশিউ এবং তার ভাইকে প্রতি সোমবার স্কুলে যাওয়ার জন্য ৩০ মিনিট ধরে সঙ্কীর্ণ কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী যাত্রার জন্য বাস ধরতে হয়। সবুজ পাহাড় বেষ্টিত গ্রামের জীর্ণদশাগ্রস্ত একটি ভবনে স্কুলটির অবস্থান। স্কুলের গেট জং ধরা, সেখানে ৪শ’ ‘ফেলে আসা’ ছাত্রছাত্রীরা পড়ছে। গত ডিসেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় লিদানদানের পিতামাতা দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। তখন থেকে মেয়েটি তার একমাত্র অবশিষ্ট দাদির সঙ্গে বসবাস করে, যিনি মাসে মাত্র ৩শ’ ইউয়ান (৪৮ ডলার) পেনশন পান।
×