ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসের ছাদে, ট্রাকে ভ্রমণ

ঈদের ছুটি শেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৫ জুলাই ২০১৫

ঈদের ছুটি শেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফেরা

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার জন্য ভয়ঙ্কর ঝুঁকির এক অমানবিক যাত্রা। বগুড়াসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে বাসের ছাদ ও ট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মজীবী নারী পুরুষের কর্মস্থলের দিকে ছুটে চলার এরকম ভ্রমণ ছিল শুক্রবার সারাদিন। অনেকের সঙ্গে ছিল শিশু সন্তান। বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ দেখে অনেকে শিউরে উঠেছেন। এমনকি মালবাহী ট্রাকেও ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া অবস্থান। যেন তিল ধারণের জায়গা নেই। এরপরেও ঝুঁকি নিয়ে এই ভয়ঙ্কর ভ্রমণ। সবারই লক্ষ্য যে করেই হোক কর্মস্থলে ফিরতে হবে। এসব যাত্রীর বেশিরভাগও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কর্মস্থলে ফেরার জন্য এসব মানুষের স্রোতে পণ্যবাহী ট্রাক পিকআপ ভ্যান পরিণত হয় যাত্রীবাহী পরিবহনে। ট্রাক দেখে মনে হবে এসব যেন যাত্রী পরিবহনের জন্যই মহাসড়কে চলছে। ঈদের ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত ছুটি যারা নিয়েছিলেন, তাদের জন্য শুক্রবার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার জন্য বাড়ি ফেরার শেষ সুযোগ। তাই যে করেই হোক ফেরার টিকেট চাই। কিন্তু ঢাকাগামী নিয়মিত কোচের টিকেট অনেক আগেই শেষ। বেশি দাম দিয়েও টিকেট মিলছে না। তাই স্থানীয় রুটের বাস ও মালবাহী ট্রাক পিকআপ ভ্যান হয়ে উঠেছে যাত্রী পরিবহন। বগুড়ার বনানী ও চারমাথার মোড় এলাকায় ঢাকামুখী নিম্ন আয়ের হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়। যাদের বেশিরভাগই গার্মেন্টস কর্মী। এছাড়া বিভিন্ন পেশার দিনমজুর মানুষও ছিল। সঙ্গে শিশু সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। অবিশ্বাস্য ঝুঁকি নিয়ে মহিলারা উঠছেন বাসের ছাদ ও পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর। বাড়তি উপার্জনের জন্য কয়েকশ’ ট্রাক ও পিআপ ভ্যান পরিণত হয় যাত্রীবাহী পরিবহনে। বৃষ্টির কারণে বেশ কিছু ট্রাক আবার বাঁশের কাঠামো দাঁড় করিয়ে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে যাত্রী পরিবহন করেছে। প্রতিটি ট্রাকেই যাত্রীদের গাদাগাদি অবস্থান ছিল। মোজাম্মেল হোসেন, পিকআপ ভ্যান চালান। জানালেন, যাত্রীর ভিড় দেখে পিকআপ ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, শহরের বনানীর মোড়ে। মুহূর্তেই তার বাহন কর্মজীবী নারী-পুরুষ দিয়ে পরিপূর্ণ। যাচ্ছেন ঢাকায়, যাত্রীদের সবাই গার্মেন্টস কর্মী। ভাড়া ৩শ’ টাকা। এর মধ্যে মহাসড়কে সিরিয়াল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মীদের যাত্রীপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। তবে ৩শ’ টাকা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ট্রাকে ভ্রমণ নিয়ে কোন ভাবান্তর নেই যাত্রীদের। মাসুম, হাফিজা, জাহানারা, রেশমা সবাই গার্মেন্টস কর্মী। জানালেন- ঝুঁকি থাকলেও কোন উপায় নেই। শনিবার কাজে যোগ দিতেই হবে। বাধ্য হয়েই এ ধরনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যাচ্ছেন। ট্রাক মালিক হাসান তার চালককে নিয়ে নওগাঁ থেকে যাত্রী বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশে চলছেন। ট্রাকে আরও কিছু জায়গা ছিল, বগুড়ার বনানীতে থেমে গাদাগাদি করে উঠিয়েছেন আরও কিছু যাত্রী। এমন অবস্থা সকাল থেকে সারাদিন ছিল বনানী ও বাইপাস সড়কের চারমাথার মোড় এলাকায়।
×