ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওবামাকে ঘরের ছেলের মতোই আপন করে নিল কেনিয়াবাসী

কেনিয়ায় পারিবারিক পুনর্মিলন

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৬ জুলাই ২০১৫

কেনিয়ায় পারিবারিক পুনর্মিলন

লাখ লাখ কেনিয়াবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা পূর্ণ করে বারাক ওবামা শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার তাঁর পিতার স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পূর্ব আফ্রিকার দেশটি তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য গভীর আগ্রহে প্রতীক্ষারত ছিল যাকে তারা দেশের ছেলে বলেই জানে। ওবামাকে স্বাগত জানানোর জন্য কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা ও তাঁর সৎ বোন উমা ওবামা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে নাইরোবি বিমানবন্দরে অবতরণের পর তিনি তাঁর বোনকে বুকে টেনে নেন। খবর ইয়াহু নিউজ ও এএফপির। প্রেসিডেন্ট সন্ধ্যা কাটান তাঁর সম্প্রসারিত কেনীয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলনের মধ্য দিয়ে। তিনি তাঁর হোটেলে প্রায় ৩৬ জন পারিবারিক সদস্যের সঙ্গে নৈশভোজে যোগদান করেন। তাঁর বয়োবৃদ্ধ সৎদাদী সারাহ ওবামাও সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁর সুদূর গ্রামের বাড়ি কোগেলো থেকে নাতিকে স্বাগত জানাতে নাইরোবি এসেছেন। নাইরোবি বিমানবন্দর থেকে শহর অভিমুখী প্রধান সড়কের দু’পাশে যুক্তরাষ্ট্র ও কেনিয়ার পতাকা শোভা পাচ্ছিল। অজস্র বিলবোর্ডে ছিল ওবামার হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের আফ্রিকা সংক্রান্ত ডেপুটি প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর ই জে, হোগেনদুর্ন বলেন, ‘আমি মনে করি না কেনিয়ানরা ওবামাকে আফ্রিকান আমেরিকান বলে মনে করে। তারা তাঁকে কেনিয়ান আমেরিকান হিসেবে দেখে।’ ওবামা তাঁর কেনীয় বংশোদ্ভূত পিতার সঙ্গ ছাড়া বেড়ে ওঠা এবং ‘ওই অনুপস্থিতির ভার’ বহন করতে গিয়ে তাঁর মনের অবস্থার কথা খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। যেসব কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ তাদের জীবনে অনুরূপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে তাদের সহায়তা হাউসের করতে নেয়া হোয়াইট হাউসের একটি প্রকল্প ওবামার প্রিয়। হোয়াইট হাউস ত্যাগের পরেও তিনি ওই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে চান। ওবামা তাঁর পাইপে ধূমপান করা অর্থনীতিবিদ পিতা বারাক ওবামা সিনিয়র সম্পর্কে বলেছেন, তিনি তাঁকে কখনই সত্যিকারভাবেত জানতে পারেননি।’ আফ্রিকায় ওবামা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য নেতৃবৃন্দকে চাপ দেয়ার একটি উপায় হিসেবে সরকারের দুর্নীতি দূরীকরণে তাঁর প্রয়াত পিতার সংগ্রামের দৃষ্টান্ত তুলে করেছেন। নাইরোবিতে তাঁর দু’দিনব্যাপী বৈঠক ও ভাষণে এবং ইথিওপিয়ার সংক্ষিপ্ত সফরের তিনি সুশাসন ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার ওপর জোর দেবেন। ২০০৯ এ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম আফ্রিকা সফরে ঘানায় গিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমার পিতার জীবনকালে একটি স্বাধীন কেনিয়ায় অংশত উপজাতীয়তা ও বিশেষ সুবিধা প্রদান এবং স্বজনপ্রীতি তাঁর পেশাগত জীবনকে বিপথে চালিত করেছিল। আমরা জানি এ ধরনের দুর্নীতি এখনও অনেকের জন্যই জীবনের একটি প্রকৃত প্রাত্যহিক ঘটনা। প্রেসিডেন্টের পিতা তরুণ বয়সে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য কেনিয়া ত্যাগ করেন। সেখানে তিনি কানসাস থেকে আসা শ্বেতাঙ্গ নারী স্ট্যানলি এ্যান ডানহামের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ওবামা তাদেরই সন্তান। ওবামার বয়স যখন মাত্র দু’বছর তখন পিতা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য হাওয়াই ছেড়ে যান। পরে তিনি কেনিয়া প্রত্যাবর্তন করেন। ভবিষ্যতের মার্কিন প্রেসিডেন্টের ১০ বছর বয়সে আর একবার মাত্র পিতার সঙ্গে সাক্ষাত ঘটেছে। ১৯৮২ তে তাঁর পিতা ৪৬ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মার যান। ওবামার পিতা একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে কেনীয় সরকারের অধীনে চাকরি করেন তবে, উপজাতীয় বিভক্তি ও দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সে সময়ের প্রেসিডেন্ট এবং কেনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক জোমো কেনিয়াত্তার সঙ্গে তিনি মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন। কেনিয়াত্তা তাঁকে বরখাস্ত করলে তিনি আর্থিক সঙ্কটে পড়েন এবং অতিরিক্ত মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন। ওবামা এ সফরকালে প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। আমেরিকান নেতার স্থানীয় শিকড়ের ওপর নিবিড় দৃষ্টিপাত করা হলেও হোয়াইট হাউস তাঁর এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র ও কেনিয়ার মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের আলোকেই দেখেছে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের বন্ধনের মধ্যে নয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, ওবামার কর্মসূচীতে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রশ্ন এবং সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতার ওপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে। ওবামা নিরাপত্তাজনিত কারণে সম্ভবত পশ্চিম কেনিয়ার সেই ছোট শহরে যাবেন না যেখানে তাঁর পিতা জন্মগ্রহণ করেন এবং যেখানে তাঁর কবর আছে।
×