হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এজন্য দ্বিতীয় ব্লক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ৪৯২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি প্রস্তুত করা হবে এবং ভূমি বেদখল ও নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বিদ্যুত কেন্দ্রটি রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যেই প্রথম ব্লকে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এসএম গোলাম ফারুক পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে জানান, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে ১১ হাজার ৪৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার বেশ কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমি উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। তাই প্রকল্পটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এসব দিক বিবেচনা করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প এলাকার দ্বিতীয় ব্লকের ভূমি উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ নামের প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশের উন্নয়নে বিদ্যুত গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। বর্তমানে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন দেশে বিদ্যুত উৎপাদনে স্থাপিত ক্ষমতা হচ্ছে ১১ হাজার ৫৩২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়। সরকারী পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২১ সালে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ৮৩৮ মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালে হবে ৩৩ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট। এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১০ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। বিদ্যুত উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা বিবেচনায় নিয়ে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে বিদ্যুত উৎপাদনে জ্বালানি বহুমুখীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ বর্তমানে বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রাথমিক জ্বালানি অর্থাৎ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ২০১৭ সালে হ্রাস পাবে। মাস্টার প্ল্যানের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ এবং আমদানিকৃত কয়লা, ২৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ এবং আমদানিকৃত (এলএনজি) প্রাকৃতিক গ্যাস ও ২৫ শতাংশ অন্যান্য উৎস যেমন তেল, পারমাণবিক শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের কথা রয়েছে।
রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য প্রস্তাবিত স্থানটি খুলনা মহানগরী থেকে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণে রামপাল উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এবং মংলা পোর্ট থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৪ একর। এর মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য বাংরাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডকে ৯১৫ দশমিক ৫০ একর জায়গা দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৯১৮ দশমিক ৫০ একর জমি উন্নয়ন, নদী ভাঙ্গন এবং বেদখল থেকে রক্ষা করার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রয়োজন। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৩ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভূমি উন্নয়ন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ব্যয় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মাধ্যমে যুক্তিযুক্ত করণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী আইএমইডি প্রকল্প ব্যয় ৫৪৮ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪৯২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, এক কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, এক হাজার ৪০০ মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, অস্থায়ী অনাবাসিক ভবনের জন্য পূর্তকাজ ও এক লাখ গাছের চারা লাগানো, যানবাহন ভাড়া, বিআইডব্লিউটিএ-এর ঘাসিয়াখালি চ্যানেল ড্রেজিং হতে উত্তোলিত বালি পরিবহন করে এ প্রকল্প এলাকা ভরাটকরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে।
সূত্র জানায়, রামপাল-১৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পর প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৮-এর ডিসেম্বরের মধ্যে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে ভারত ও বাংলাদেশ। রামপাল প্রকল্পর দ্রুত শেষ করতে প্রকল্পটিকে ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশ প্রকল্পটিতে ৩০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে। বাকি ৭০ ভাগ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। সম্প্রতি কোম্পানির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি ভারতের বিদ্যুত সচিব পিকে সিনহা রামপাল প্রকল্পর বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। ভারত এই প্রযুক্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনা করে অভ্যস্ত। সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তি দক্ষ এবং কম পরিবেশ দূষণকারী। অনেক দেশেরই সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি নেই।