ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জমি কেনাবেচায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা

ছিটমহলবাসীর জমির দলিল-খতিয়ান দ্রুত তৈরির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ জুলাই ২০১৫

ছিটমহলবাসীর জমির দলিল-খতিয়ান দ্রুত তৈরির সিদ্ধান্ত

তৌহিদুর রহমান ॥ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছিটমহলবাসীর জমির দলিল-খতিয়ান দ্রুত তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রশাসন। দুই দেশের ছিটমহলবাসীদের মধ্যে যাদের কাছে বাড়িঘর ও জমিজমার দলিল নেই তারা কাগজপত্র তৈরির পরেই জমি বিক্রি করতে পারবেন। আগামী পহেলা আগস্ট থেকে ছিটমহলবাসীরা তাদের জমিজমা বিক্রি শুরু করতে পারবেন। অপরদিকে ছিটমহলের নাগরিক তালিকার গেজেট প্রকাশ করবে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। ছিটমহলের জমি কেনা-বেচার বিষয়ে উভয় দেশের সরকার থেকে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে আগামী পহেলা আগস্ট থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না। ছিটমহলের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি, জমিজমা বিক্রি করতে চাইলে আগামী পহেলা আগস্ট থেকে ৩০ নবেম্বরের মধ্যে তা করতে পারবেন। ৩০ নবেম্বরের পর আর কেউ জমিজমা বিক্রি করতে পারবেন না। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জমি বিক্রির বিষয়টিও উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা একমত হয়েছেন, ছিটমহলবাসীদের মধ্যে যাদের জমির বিপরীতে যথাযথ রেকর্ড ও দলিল নেই তাদের দ্রুত রেকর্ড ও দলিল জোগাড় করতে হবে। কেননা, জমি বিক্রির আগেই এই দলিল নিতে হবে। তা না হলে তাঁরা জমি বিক্রি করতে পারবেন না। ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে নিজ নিজ জমির রেকর্ড-দলিল না থাকলে তাদের দ্রুত দলিল-রেকর্ড তৈরির বিষয়ে সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উভয় দেশের ছিটমহল এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি ও জমিজমার দলিল নেই। কেউ কেউ সাদা কাগজের মাধ্যমেও জমিজমা কিনেছেন। অনেকেই আবার মৌখিকভাবে জমিজমা কেনাবেচা করেছেন। আবার কেউ কেউ বংশ পরম্পরায় ঘরবাড়ি-জমিজমা দখলে রেখেছেন। ছিটমহল বাসিন্দাদের মধ্যে এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখেও জমিজমা বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। তাই অনেকের জমির রেকর্ড, দলিল, খতিয়ান ইত্যাদি কোন কাগজপত্রই নেই। তবে এখন জমি বিক্রি করতে চাইলে দলিল ছাড়া কেউ তা বিক্রি করতে পারবেন না। ছিটমহলের বাসিন্দারা বাড়িঘর ও জমিজমা বিক্রি করে সেই অর্থ নিজ নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যেতে পারবেন। তবে সেই অর্থ নিতে হলে নিজ নিজ দেশের জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। ছিটমহলবাসীদের নাগরিকত্ব বেছে নিয়ে আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩০ নবেম্বরের মধ্যে ছিটমহলবাসীর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পছন্দের দেশের মূল ভূখ-ে চলে যেতে হবে। এই সময়ের মধ্যেই স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে পছন্দের দেশের মূল ভূখ-ে যেতে হবে। তবে কোন ব্যক্তি ৩০ নবেম্বরের আগে স্থাবর সম্পত্তি রেখে ভারত কিংবা বাংলাদেশে যেতে চাইলে সম্পত্তির দলিলের কপি স্থানীয় জেলা প্রশাসনের হেফাজতে রাখতে পারবেন। পরে সম্পত্তি বিক্রির সময় জেলা প্রশাসনের সহায়তা পাবেন তারা। সূত্র জানায়, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছিটমহলের জমির মালিকানা নির্ধারণই অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। জমির মালিকানা নির্ধারণ করতে না পারলে সমস্যার সমাধান হবে না। আর জমির মালিকানার সমাধান হলেই ছিটমহলবাসীদের অন্যান্য সমস্যাও দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। এদিকে জানা গেছে, উভয় দেশের ছিটমহলের নাগরিকদের গেজেট প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার। জনগণনার পরে বাংলাদেশের ভূখ-ে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের গেজেট করা হবে। আবার ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের গেজেট করা হবে। এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে যে ৯৭৯ জন নাগরিক ভারতে যেতে চেয়েছেন তাদের বিষয়েও আরেকটি গেজেট প্রকাশ করা হবে।
×