ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পাঁচ শ’ এ্যাপসের উদ্বোধন করবেন জয়

মোবাইলে জনগণের দোরগোড়ায় নানামুখী সেবা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৬ জুলাই ২০১৫

মোবাইলে জনগণের দোরগোড়ায় নানামুখী সেবা

ফিরোজ মান্না ॥ জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল এ্যাপস প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীল এ্যাপস উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় উন্নয়নকৃত মোবাইলের ৫শ’টি এ্যাপসের (এ্যাপ্লিকেশন) উদ্বোধন করা হবে আজ রবিবার। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। পরিবর্তিত বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশবাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে ও মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে জনগণের সেবা আরও দোরগোড়ায় নিয়ে যেতেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ‘জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল এ্যাপস প্রশিক্ষক ও সৃজনশীল এ্যাপস উন্নয়ন’ এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সূত্র জানিয়েছে, দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে এ্যাপসের ব্যবহারও। এখন বাংলায় তৈরি হচ্ছে নানা রকম এ্যাপ্লিকেশন বা এ্যাপস। এসব এ্যাপস স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট কম্পিউটারে সহজেই ব্যবহার করা যাবে। প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষায় এ্যাপস তৈরি করছেন দেশীয় ডেভেলপাররা। এ্যান্ড্রয়েডচালিত স্মার্টফোনে বাংলা লেখায় অন্যতম জনপ্রিয় হচ্ছে ‘মায়াবি কিবোর্ডের’ মাধ্যমে। এতে ফিক্সড ও ফোনেটিক দুই ধরনের কিবোর্র্ডই আছে। এই এ্যাপসটি দিয়ে মোবাইল, ট্যাবলেটে বাংলা লেখা যাবে। সফটওয়্যার ছাড়াই বাংলা লেখার একটি এ্যাপস ‘বাংলা ভাই’। এ এ্যাপসটি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনকে কিবোর্ডের মাধ্যমে ফেসবুক ও লিঙ্কডিনে বাংলা লেখা যাবে। খুব বেশি প্রয়োজনীয় একটি বাংলা ভাষায় তৈরি ‘ল এ্যাপস’। কোন বিপদে পড়লে কী ধরনের আইনী সহায়তা পাবেন, কার কাছে যাবেন, আইনী প্রক্রিয়া ও নিয়মকানুনগুলো কি। আর এ জন্য কী কী কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট করা দরকার তার সবকিছু জানা যাবে। দেশের সরকারী ছুটির তালিকা নিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের ছুটি’ নামক এ্যাপস। ২০১৪ সালের সকল আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক ছুটিকে আলাদা আলাদা করে দেখানো হযেছে। এ ছাড়া এই ছুটির তালিকার সঙ্গেই আছে ইভেন্ট ক্যালেন্ডার। ফলে ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট ছুটির দিনের যে কোন পরিকল্পনা ঐ ক্যালেন্ডারেই যোগ করতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময়ে ঐ পরিকল্পনাটি মনে করিয়ে দেয়ার সুবিধাও রাখা হয়েছে এই এ্যাপসটিতে। রাশিফল জানতেও তৈরি করা হয়েছে এ্যাপস। বাংলায় রাশিফল জানা যাবে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই। আর এটি সম্ভব ‘বাংলা রাশিফল’ নামের এ্যাপসের মাধ্যমে। মোবাইল ফোনে বাংলা লেখার জন্য অনেক এ্যাপস তৈরি হয়েছে। সহজ ও সুন্দর ইউজার ইন্টারফেসের এই এ্যাপের সাহায্যে ফনেটিকসের মাধ্যমে বাংলা লেখা সম্ভব। অফ লাইনে ব্যবহারের সুবিধা সংবলিত এই এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের সাইটেও বাংলা লেখা শেয়ার করা যাবে। এ ছাড়া কিবোর্ড ব্যবহার করেও লেখা কপি করে অন্য যে কোন এ্যাপ্লিকেশনে বাংলা লেখা যাবে। এতে বাংলা অভিধানও রযেছে। অনেক সময় জরুরী প্রয়োজনে বাংলা তারিখ জানার দরকার হয়। ‘বাংলা ক্যালেন্ডার’ নামে এ্যাপসটি ব্যবহার করে। এতে বাংলা তারিখের পাশাপাশি ইংরেজী তারিখও জানা যাবে। স্মার্টফোনে শিশুদের জন্য বাংলায় গণিত শিক্ষার সুবিধা পাওয়া যাবে ‘ম্যাথ ফর কিডস ইন বাংলা’ নামক এ্যাপসটির সাহায্যে। এর মাধ্যমে শিশুরা গণিত শিখতে পারবে বাংলায়। বাংলাদেশের সম্পূর্ণ সংবিধানকে একটি মাত্র মোবাইল এ্যাপ্লিকেশনে আনা হয়েছে। বাংলা ভাষায় রচিত এই সংবিধান যে কোন নাগরিকের সংবিধান সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে। ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে সংবিধানকে অধ্যায়ভিত্তিক সাজানো হয়েছে। মোবাইল ও ট্যাবলেটে বাংলায় এসএমএস লেখার সুবিধা পাওয়া যাবে ‘বাংলা এসএমএস’ নামক এ্যাপসটিতে। এতে ফোনেটিক কিবোর্ড লেআউট ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলায় এসএমএস লেখা যাবে। স্মার্টফোনে চাইলেই এ এ্যাপসটি ব্যবহার করে যে কাউকে বাংলায় এসএমএস পাঠানো যাবে। ইংরেজী শব্দের বাংলা অর্থ জানা যাবে এবার স্মার্টফোনের মাধ্যমেই। ‘বাংলা ডিকশনারি’ নামের এই এ্যাপসের সাহায্যে শুধু শব্দের অর্থই নয়। একই সঙ্গে পাওয়া যাবে শব্দের উচ্চারণও। এ ছাড়া যে শব্দের অর্থ জানতে চান, সেটি ক্লিক করলে সেই শব্দ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শব্দের সাজেশনও পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে আরও বেশি জানতে ও অন্যকে জানাতে যাবে ‘একুশ আমার’ এ্যাপটির মাধ্যমে। এতে রয়েছে কালপঞ্জি অনুসারে গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনের বিস্তারিত ইতিহাস ও শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনী। শুনতে পারা যাবে ভাষা আন্দোলনের ওপর বিখ্যাত সব গান। এ ছাড়া গানগুলোর লিরিক্সও পড়া যাবে। ইউটিউব লিঙ্কের মাধ্যমে দেখা যাবে একুশের ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্য চিত্র। এ্যাপসটির মাধ্যমে পড়া যাবে একুশের ওপর লেখা বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের কবিতাও। এ ছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে ভাষা আন্দোলনের ওপর নির্মিত বিভিন্ন চিত্রায়ন। আর্কাইভস বা গ্যালারি, ওয়াল পেপারসহ আরও অনেক কিছু। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ রকম আরও কয়েক শ’ এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। আরও প্রযুক্তিসম্পন্ন এ্যাপস তৈরি করার জন্য এবার তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। মোবাইল এ্যাপস তৈরির জন্য উন্নত মানের প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীল এ্যাপস উন্নয়নের কাজ করা হবে। আজ রবিবার এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হবে। কর্মসূচীর আওতায় উন্নয়নকৃত মোবাইলের ৫শ’টি এ্যাপসের (এ্যাপ্লিকেশন) উদ্বোধনের পর আরও মোবাইল এ্যাপস তৈরি করার কর্মসূচী হাতে নেয়া হবে।
×