ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী সপ্তাহে রাজন হত্যার আসামিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিসে ৮৫ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৬ জুলাই ২০১৫

ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিসে ৮৫ বাংলাদেশী

শংকর কুমার দে ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট জারির নোটিসে যুক্ত হয়েছে ৮৫ বাংলাদেশী। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বহুল আলোচিত শিশু রাজন হত্যার আসামি সৌদি আরবে আটক কামরুল। ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিস বোর্ডে যাদের নাম ও ছবি রয়েছে তাদের মধ্যে আছে শিশু হত্যার আসামি ছাড়াও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত ছয় আসামি, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি, চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের আসামি, নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের আসামি, দ্বৈত নাগরিক ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বিদেশে অবস্থানকারী এসব আসামির সঠিক অবস্থান নির্ণয় করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছে ইন্টারপোলের। এর মধ্যে আগামী সপ্তাহে শিশু হত্যার অন্যতম আসামিকে সৌডদ আরব থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর থেকে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই শিশু রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সৌদি আরবে আটক কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এজন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিস বোর্ডে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে শিশু রাজন হত্যা মামলার আসামি কামরুলের নাম। এর আগে ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিসে যুক্ত হয় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম। ইন্টারপোলে তার নাম যুক্ত হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট জারির প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তারেক। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি তারেক রহমান। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তিনি। তার নাম ও ছবি ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিস বোর্ডে যুক্ত রয়েছে। ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিস বোর্ডে তার ছবির সঙ্গেই দেখা গেছে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আবদুল জব্বারের নাম ও ছবি। যুুদ্ধাপরাধী আবদুল জব্বার ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট জারি রয়েছে। ফাঁসির আদেশ হওয়ার আগেই ২০১২ সালের ৩০ মার্চ গোয়েন্দা নজর এড়িয়ে পালান এই নরঘাতক। এরপর পাকিস্তানে যাওয়ার উদ্দেশে ২ এপ্রিল তিনি উত্তরাঞ্চলের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকেন। বর্তমানে বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে জানায় গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্র জানান, ইন্টারপোলের মাধ্যমে যাদের খোঁজা হচ্ছে তাদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত ৬ খুনির মধ্যে এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, নূর চৌধুরী কানাডায় এবং আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ভারতে আছেন বলে তথ্য রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। শরীফুল হক ডালিম এবং খন্দকার আব্দুর রশিদ পাকিস্তানে আছেন বলে মনে করে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে বলে ৪ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আশ্বাস দেয়। কিন্তু সেই আশ্বাস এখনও আশ্বাস হিসেবেই রয়ে গেছে। এ ছাড়া দুর্বল আইনী লড়াইয়ের কারণে ফেরানো যাচ্ছে না কানাডায় থাকা নূর চৌধুরীকেও। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা তাইজউদ্দিনকে ধরতে ২০০৭ সালে ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট ইস্যু করা হয়। কিন্তু এখনও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছে ইন্টারপোলের দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা। বিএনপি-জামায়াত জোটের উপমন্ত্রী বিএনপি নেতা আবদুস সালামের ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন। উপমন্ত্রী থাকাকালে আবদুস সালাম তার ভাই জঙ্গী নেতা মাওলানা তাইজউদ্দিনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে। ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট নোটিস বোর্ডে নাম রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের আসামি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে যায় সে। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতের কলকাতায় আটক হওয়ার পর তার সেখানে বিচার চলছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মডেল কন্যা তিন্নি হত্যা মামলার আসামি, আশির দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা ও সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভির মাথার ওপরও ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট। তাকেও দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানান, ইন্টারপোলের তথ্য অনুসারে খান আলিম উদ্দিনের নাম যুক্ত রয়েছে, যাকে একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার বর্তমান বয়স ৫২ বছর। জš§ বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে। তবে এই দুই দেশের কোন দেশই তাকে খুঁজছে না। তাকে খুঁজছে কানাডা। ওদিকে কুমিল্লার হানিফকে খুঁজছে মালদ্বীপ। সম্পদ আত্মসাতের এক মামলায় তাকে খুঁজছে মালদ্বীপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশে পলাতক যে কোন আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশ। তখন ইন্টারপোল আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ওই দেশকে জানায়। এরপর সেই দেশের সঙ্গে আলোচনা করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আসামিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কেউ কেউ বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব নিয়ে বা রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রকাশ্যে জীবনযাপন করছে। কিন্তু তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না। তাই বিচারবঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। কার্যকর হচ্ছে না আদালতের রায়। আইনী ও রাজনৈতিক জটিলতার মারপ্যাঁচে আটকে আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া। আবার কাউকে দেশে ফেরাতে কোন উদ্যোগই নেই।
×